রাঙামাটির কাপ্তাই উপজেলার বিভিন্ন পাহাড়ী অঞ্চলে প্রতিবছরই ভালো বিলাতি ধনিয়া পাতার চাষ হয়ে থাকে। বিশেষ করে কাপ্তাইয়ে চাষকৃত এই ধনিয়া পাতার কদর দেশজুড়ে রয়েছে। এছাড়া এখানে উৎপাদিত এই বিলাতি ধনিয়া পাতার গন্ধ অনেক সুন্দর হয়ে থাকে। আর ধনিয়া পাতা গুলো দেখতে অনেকটা চ্যাপ্টা হওয়াতে ফলনও খুব ভালো হয়। সবুজ এই ধনিয়া পাতার দুপাশে খাঁজকাটা থাকার ফলে দেখতে অনেক ভালো লাগে।
গত সোমবার উপজেলার কাপ্তাই- ঘাঘড়া সড়কের সাফছড়ি, দেবতাছড়ি, সাক্রাছড়ি সহ বেশ কয়েকটি এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, সড়কের পাশে সারি সারি করে সাজানো হচ্ছে বিলেতি ধনিয়াপাতা। এই ধনিয়া পাতাগুলো দেশের বিভিন্ন প্রান্তে পৌছাঁনোর জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছেন চাষি এবং সরবরাহকারীরা। স্থানীয় বাজারসহ শহরাঞ্চলে এই ধনিয়া পাতার ব্যাপক চাহিদা থাকায় ভাল দামও পাচ্ছেন চাষিরা। তাছাড়া প্রতিবছরই ধনিয়াপাতা চাষের মাধ্যমে স্বাবলম্বী হচ্ছেন কাপ্তাইয়ের পাহাড়ি অঞ্চলের প্রান্তিক পর্যায়ের কৃষকেরা।
কাপ্তাই কৃষি বিভাগের তথ্য মতে ,চলতি বছর কাপ্তাইয়ের বিভিন্ন ইউনিয়নে পাহাড়ি ও সমতল এলাকায় এই বিলেতী ধনিয়া পাতার ভালো ফলন হয়েছে। তাছাড়া অল্প পুঁজিতে বেশি লাভ হওয়ায় ধনিয়া পাতা চাষ করতে আগ্রহী হচ্ছেন চাষিরা। একবার বীজ বুনলে কয়েক বছর গাছ পর্যন্ত বেঁচে থাকে এই পাতা। ফলে অনায়াসে বারবার পাতা সংগ্রহ করা যায়। যার কারণে এটি চাষে ঝুঁকে পড়ছেন এ অঞ্চলের কৃষকেরা।
কাপ্তাইয়ের ওয়াগ্গা ইউনিয়নের বাসিন্দা বিনতা তঞ্চঙ্গ্যা, সমীরণ তঞ্চঙ্গ্যা সহ বেশ কয়েকজন ধনিয়া পাতা চাষি জানান, তারা পাহাড়ে বিভিন্ন সবজির পাশাপাশি এটি চাষ করে ভালো ফলন পাচ্ছেন। বর্তমানে তারা পাইকারিভাবে প্রতিকেজি ধনিয়া পাতা ৭০ থেকে ৮০ টাকা ধরে বিক্রি করছেন। এই ধনিয়া পাতা ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাজশাহীসহ দেশের বিভিন্ন জেলাতে পাঠানো হচ্ছে। এছাড়া এটি সহজ পদ্ধতিতে চাষ করা সম্ভব বলে অনেক নতুন চাষি ধনিয়া পাতা চাষে আগ্রহী হচ্ছেন বলে তারা জানান। ওয়াগ্গা সাক্রাছড়ি এলাকার সাধন তঞ্চঙ্গ্যা নামের আরেক কৃষক জানান, এই ধনিয়া পাতা পাহাড়ি এলাকার বিভিন্ন বাগানের নিচে এবং আনাচে-কানাচে চাষ করা সম্ভব। যার ফলে আলাদা কোন জায়গার প্রয়োজন পড়ে না। এছাড়া এটি চাষ করে কমবেশি সবাই সফলতা পেয়ে থাকে। ফলনও হয় বাম্পার। যার ফলে আর্থিকভাবে সচ্ছলতা অর্জন করছে অনেক কৃষক পরিবার।
এবিষয়ে কাপ্তাই কৃষি বিভাগের উপ সহকারি কৃষি কর্মকর্তা বাপ্পা মল্লিক জানান, কাপ্তাইয়ের তাঁর ব্লক চন্দ্রঘোনা রেশম বাগান এলাকায় প্রায় ৬ হেক্টর এলাকাজুড়ে এই বিলেতী ধনিয়া পাতার চাষ করা হয়েছে । এবং প্রায় প্রতিবছরই প্রতিটি এলাকায় ভালো ফলন হয়। তাছাড়া এ ধনিয়া পাতা সম্পূর্ণ বিষমুক্ত ও রাসায়নিক সার বিহীনভাবে উৎপাদন করায় একদিকে যেমন এর চাহিদা বেশি, অপরদিকে কাপ্তাইয়ে উৎপাদিত এই ধনিয়া পাতা স্থানীয় চাহিদা পুরণ করে বিভিন্ন জেলায় চলে যাচ্ছে। এতে কাপ্তাইয়ের কৃষকেরা স্বাবলম্বী হচ্ছে।
এ বিষয়ে কাপ্তাই উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ইমরান আহমেদ জানান, কাপ্তাইয়ের ধনিয়াপাতা এই পার্বত্য অঞ্চল ছাড়াও সারাদেশে এর অনেক খ্যাতি রয়েছে। আর বিশেষ করে তিন পার্বত্য জেলায় সবচেয়ে বেশি ধনিয়াপাতা চাষ হয় কাপ্তাইয়ে। পাশাপাশি কাপ্তাই হতে সারাদেশের সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা ভালো হওয়াতে এই ধনিয়া পাতা খুব অল্প সময়ে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে পৌঁছানো সম্ভব হয়। এতে কাপ্তাইয়ের প্রান্তিক পর্যায়ের অনেক কৃষক যারা ধনিয়াপাতা চাষ করে তারা খুব স্বাবলম্বী ও উপকৃত হচ্ছে। আর আমরা কাপ্তাই উপজেলা কৃষি বিভাগ থেকে সবসময় ধনিয়াপাতা চাষে স্থানীয় কৃষকদের বিভিন্ন পরামর্শ দিয়ে সহযোগীতা করার চেষ্টা করি।