বিশ কেজি চালে তো আর সংসার চলে না !
রাঙামাটির জেলে পরিবার
রাঙামাটির কাপ্তাই হ্রদের মৎসজীবি রনজিৎ দাসের সংসারে সদস্য সংখ্যা ৬ জন। আকাশ ছোঁয়া নিত্য পণ্যের দাম, দুই সন্তানের পড়ালেখার খরচ, বুড়ো বাবা-মায়ের ঔষধ খরচ, সংসারের দৈনন্দিন খরচ মেটাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে তাকে। অভাব-অনটন প্রতি মুহুর্তে ঘরের দরজায় কড়া নাড়ে। মাছ ধরা বন্ধ মৌসুমে বেঁচে থাকার প্রয়োজনে দ্বারস্থ হতে হচ্ছে চড়া সুদে এনজি লোনে কিংবা মহাজনদের দাদনের দিকে।
এমন দৃশ্য কাপ্তাই হ্রদের উপর নির্ভরশীল প্রত্যেক জেলে পরিবারের। যেখানে প্রত্যেক পরিবারের সদস্য সংখ্যা গড়ে ৭ থেকে ৮ জন। গত ২০ এপ্রিল থেকে পরবর্তী তিনমাস কাপ্তাই হ্রদে মাছ আহরণ বন্ধ থাকায় জেলে পরিবারগুলোতে নেমে এসেছে দুর্বিসহ জীবন। আয় রোজগারের অন্যকোন পথ না থাকায় চোখেমুখে রাজ্যের যত দুঃচিন্তা। বন্ধ মৌসুমে সরকারের পক্ষ থেকে ভিজিএফ সহযোগিতা হিসেবে প্রতিমাসে শুধুমাত্র ২০ কেজি চাল দেয়া হয়। সেই চালে সংসার চলে না জেলে পরিবারগুলোতে। বাধ্য হয়ে অনেকে সংসার চালাাতে স্থানীয় বাজারে শাকসবজি, কাকঁড়া, কুনো ব্যাঙ ও শামুক বিক্রি করে। তাদের দাবি, বন্ধ মৌসুমে সরকার যদি রেশনিং ব্যবস্থা অথবা সহজ শর্তে ঋণের ব্যবস্থা করে দিলে ভাল হতো।

শহরের পুরাতন জালিয়া পাড়ার বাসিন্দা মিনতি দাশ ও নতুন জালিয়া পাড়ার জগদিশ দাস বলেন, মাছ ধরা বন্ধ মৌসুমে আয় রোজগার বন্ধ হয়ে যাওয়ায় আমরা চোখে মুখে অন্ধকার দেখি। এনজিও কিংবা ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে ধার-দেনা নিয়ে চলতে হয়। সরকার যদি চালের সাথে ডাল, তেল দেয়, তাহলে পরিবার পরিজন নিয়ে বেঁচে যেতাম।
তথ্যমতে, রাঙামাটির কাপ্তাই হ্রদের উপর নির্ভরশীল প্রায় ২৩ হাজারের মত জেলে পরিবার আছে। তাদের প্রধান ও একমাত্র উপার্জনের পথ মাছ ধরা। এনজিও ঋণ ও মহাজনদের ধার-দেনা শোধ করে বছরের নয় মাস কোনরকম পেটে-ভাতে সংসার চালিয়ে নিলেও তিনমাস বন্ধ থাকার কারণে জেলে পরিবারগুলোতে পড়তে হয় অভাব-অনটনের বেড়াজালে। অর্থের অভাবে স্কুলগামী ছেলে-মেয়েদের পড়ালেখায় ব্যাঘাত ঘটে। ঔষধ-পথ্যের অভাবে নানা রোগশোকে পথিত হয় অনেকে।
সম্প্রতি বিএফডিসি আয়োজিত কাপ্তাই হ্রদে পোনা মাছ অবমুক্তকরণ ও ভিজিএফ চাল বিতরণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি খাদ্য মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সভাপতি দীপংকর তালুকদার এমপি জেলে পরিবারগুলোর দুর্বিষহ জীবনের কথা স্মরণ করে বক্তব্যে বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আন্তরিকতা ও মানবিকতার কারণে বর্তমানে প্রায় ২৩ হাজার জেলে পরিবার মাসে ২০ কেজি করে চাল পাচ্ছে। তিনি আশ্বস্থ করে বলেন, জেলে পরিবারগুলো মাছ ধরা বন্ধ মৌসুমে কিভাবে ভালো থাকতে পারে, সেটি নিয়ে সরকার কাজ করে যাচ্ছে।