বান্দরবানের লামা পৌর এলাকার কোলঘেঁষে লামা সদর ইউনিয়ন। শহরের পূর্ব-উত্তরাংশে মাতামুহুরী নদীর ওপারেই গ্রামটির অবস্থান। মাত্র কয়েক মিটার দূরত্বে এটির অবস্থান হলেও নদী পার হয়ে যাতায়তের ফলে গ্রামটি মনে হয়, উপজেলা শহর থেকে বিচ্ছিন্ন অনেক দূরের একটি দ্বীপ। উপজেলা শহর থেকে মিশন ঘাট কিংবা রাজবাড়ি পয়েন্টে বর্ষায় নৌকা বা বাঁশের ভেলা, শুস্ক মৌসুমে হাটু বা কোমর পানি অথবা সমাজপতিদের উদ্যাগে নির্মিত বাঁশের নতুবা তক্তার অস্থায়ী সেতু দিয়ে অতিক্রম করে দীর্ঘকাল থেকে যাতায়ত করে আসছিল ওই ইউনিয়নের বাসিন্দারা। গ্রামবাসী নদীর স্রোতে ভেসে গিয়ে নিখোঁজ হওয়ার সংবাদ শুনতে হতো প্রায় সময়।
এলাকাবাসীর দাবীর প্রেক্ষিতে পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী বীর বাহাদুর পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের মাধ্যমে প্রায় ৮কোটি টাকা ব্যয়ে লামা মাতামুহুরী নদীর রাজবাড়ি-মেরাখোলা পয়েন্টে ১৪০ মিটার সিসি গার্ডার ব্রিজ নির্মাণের উদ্যোগ নেন।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, এ ব্রিজটি নির্মাণ সম্পন্ন হলে জেলার লামা সদর ইউনিয়নের বিচ্ছিন্ন কয়েকটি দুর্গম পাহাড়ী গ্রামের হাজারো পরিবারের যোগাযোগ ব্যবস্থার ব্যাপক উন্নয়ন হবে। এলাকার শত শত কৃষি ও জুমিয়া পরিবার তাদের উৎপাদিত কৃষিপণ্য বাজারজাত করাসহ যাতায়াতের ক্ষেত্রে আধুনিকতার ছোঁয়া পাবে। পাশাপাশি উপজেলা সদরে উচ্চ শিক্ষা নিতে আসা ছাত্রছাত্রীদের দুর্ভোগ লাগব হবে, এমন মত স্থানীয়দের।
পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড বান্দরবান ইউনিট সূত্র জানায়, দীর্ঘ চারদশক ধরে পার্বত্য অঞ্চলের উন্নয়নে পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড বিভিন্ন জনগোষ্ঠির নানামুখি উন্নয়নে ভূমিকা রেখে যাচ্ছে। এরই ধারাবাহিকতায় ২০১৬ সালে পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী বীর বাহাদুর এই ব্রীজের নির্মাণ কাজের সুচনা করেন। চলতি বছরের শেষে এর সফল সমাপ্তি হবে বলে সংশ্রিষ্টরা আশা প্রকাশ করেছেন। মেজবা কনাষ্ট্রকশন নামের একটি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান দরপত্রের মাধ্যমে ৭কোটি ৮৪ লাখ টাকার এই ব্রীজটির নির্মাণ কাজটি পায়।
লামা সদর ইউনিয়নের মেরাখোলা গ্রামের শিক্ষক নিপ্পন জানান, লামা মাতামুহুরী নদী পয়েন্টে মেরাখোলা-রাজবাড়ি ব্রিজটি নির্মাণ সম্পন্ন হলে মেরাখোলা-ছোটবমুসহ আশপাশের বেশ কয়েকটি পাহাড়ী গ্রাম সহজেই সড়ক পথের যোগাযোগের আওতায় আসবে। এতে দূর্গম গ্রামে উৎপাদিত কৃষিপন্য বাজারজাত করণসহ বিদ্যালয়গামী ছাত্র-ছাত্রীদের যাতায়তে উম্মোচিত হবে এক নতুন দিগন্ত।
লামা সদর ইউনিয়ন ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মিন্টু কুমার সেন বলেন, এই ব্রিজের আশায় আমরা দীর্ঘ কাল পার করেছি। এপার ওপারে বসবাসকারী এলাকার পরিবারগুলো খাল পারাপারে বাঁশের ভেলা বা নৌকার ওপর নির্ভরশীল ছিলাম। আমাদের স্বপ্ন পূরণ করে পার্বত্য মন্ত্রী বীর বাহাদুর দূর্গম এলাকার মানুষের হ্নদয়ের মনিকোঠা দখল করে নিয়েছেন। এই একটি ব্রিজ আমাদের এলাকার চেহারা পাল্টে দিতে চলেছে।
এ বিষয়ে পাবত্য চট্রগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের বান্দরবান ইউনিট নির্বাহী প্রকৌশলী মো.আবদুল আজিজ জানান পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী বীর বাহাদুর উশৈসিং এমপি ও উন্নয়ন বোর্ডের চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান এর নির্দেশনা মতে এলাকার অবকাঠামো উন্নয়নে কাজ চলছে। ইতিমধ্যে ১৪০ মিটার ব্রিজের ৪টি স্পাম, ১২টি গার্ডারের কাজ সম্পন্ন হয়েছে। সব মিলিয়ে ৭০ভাগ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। তিনি আরও বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের অনেক প্রকল্পের কাজ চলমান রয়েছে, তার মধ্যে এই লামা-রাজবাড়ি সিসি গার্ডার ব্রিজটি নির্মানের মেয়াদ জুন ২০২০ সাল পর্যন্ত। এলাকার জনগণের কষ্টের কথা ভেবে পার্বত্য প্রতি মন্ত্রীর অঙ্গিকার অনুযায়ী ২০১৮ সালেই ব্রিজটি উদ্বোধন করা হবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।