ঘরের দরজায় কড়া নাড়ছে কোরবানীর ঈদ। বাকি মাত্র হাতে গোনা কয়েকদিন, তবুও ক্রেতা নেই। প্রতিবছর ঈদুল আযহার দুই/তিন সপ্তাহ আগে থেকেই দম ফেলার ফুরসত মিলতো না থাকতো না কামারদের; কামারশালাগুলোতে দিন-রাত চলতো কাজ। চাপড়, দা, বটি-ছুরি তৈরি, বিক্রি ও শাণ দিতে দিতেই দিনরাত একাকার হয়ে যেতো তাদের। কিন্ত এ বছর আশায় গুড়েবালি। হাত পা গুটিয়ে বসে থাকা কামারদের আশংকা এবার কোরবানীতে সবমিলিয়ে ২০ থেকে ৩০ হাজার টাকার মত বেচা বিক্রি করতে পারবো কিনা সন্দেহ আছে।
রাঙামাটি শহরের রিজার্ভ বাজার, বনরুপাসহ বিভিন্ন এলাকার কর্মকারদের দোকান ঘুরে দেখা গেছে, ব্যস্ততা নেই কামারদের। দীর্ঘদিন কর্মহীন থাকার পর এখন যা আয় হচ্ছে-তাতে সংসার পরিচালনায় হিমশিম খাচ্ছে তারা। উপজেলাগুলোতেও কামাররা অনেকটা অলস সময় পার করছেন বলে খবর পাওয়া গেছে।
রিজার্ভ বাজারের পুলক কর্মকার ও বাদল কর্মকার জানান, ‘প্রতি কোরবানী ঈদের অন্তত একমাস আগে ছুরি-চাপাতি বানানোর অর্ডার নেয়া শুরু করি। ১ লক্ষ থেকে ২ লক্ষ টাকা শুধু ঈদ উপলক্ষেই বিক্রি করেছি। এবার চিত্র সম্পুর্ণ ভিন্ন। চারভাগের একভাগ মাত্র।
নন্দন কর্মকার জানান, ঈদের দু/তিন সপ্তাহ আগে থেকেই দা, ছুরি, বটি, চাপড়, ঢেউ (বড় ছুরি) তৈরি করতাম। ভালো জিনিস পেতে অর্ডার দিতে হতো আরও একমাস আগে। আর আগে বানিয়ে রাখা মালগুলো বিক্রি শুরু হতো কোরবানীর দুই সপ্তাহ আগে থেকে। কিন্তু এবছর তেমন কাজ পাওয়া যাচ্ছে না। তাই পুরোনো ছুরি, বটি, চাপড় শাণ দিয়ে রাখছি বিক্রি করবো।
অন্যান্য কামারদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, দোকান ভাড়া, কর্মচারীদের বেতনসহ আনুষঙ্গিক খরচ দিয়ে তাদের লোকসান থাকে সারাবছর। লোকসান কাটিয়ে উঠতে কোরবানির ঈদের অপেক্ষায় থাকতেন তারা। কোরবানির আগের মাস থেকেই তাদের ব্যবসা চাঙা হতো। কিন্তু এবছর সেই আশার গুঁড়েবালি।
শহরের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, কামারশালাগুলোতে বিক্রির জন্য সাজিয়ে রাখা হয়েছে দা, ছুরি, বটি। মানভেদে নতুন দা ২০০ থেকে ৪০০ টাকা, ছুরি ১২০ থেকে ২৫০ টাকা, বটি ৩৫০ থেকে ৬০০টাকা, পশু জবাইয়ের ছুরি ৪০০ থেকে ৭০০ টাকা এবং চাপড় ৩৫০ থেকে এক হাজার টাকায় বিক্রয় মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে। দা শাণ করাতে ৪০টাকা, ছুরি ২৫ টাকা, বটি ৫০টাকা করে নিচ্ছেন কামাররা।
জেলায় ছোট বড় সব মিলিয়ে ৩০টির মত কামার দোকান রয়েছে। এসব কামারের অধিকাংশই পূর্বপুরুষদের হাত ধরে এই পেশায় এসেছেন। বর্তমানে আধুনিক যন্ত্রাংশের দাপটে কামার শিল্পে চলছে দু’র্দিন। এছাড়া বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দার ফলে গভীর সংকটে দুশ্চিন্তার ভাজ পড়েছে কর্মকারদের কপালেও।