ভারতে আশ্রয় নিয়েছে বম সম্প্রদায়ের ৩ হাজার মানুষ
কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট (কেএনএফ) ইস্যুতে বান্দরবান ছেড়ে ভারতের মিজোরামে আশ্রয় নিয়েছে প্রায় ৩ হাজার বম সম্প্রদায়ের লোকজন এবং জন শুন্য হয়েছে ৭টি পাড়া।
আজ বৃহস্পতিবার (২ জানুয়ারি) বেলা সাড়ে তিনটায় বান্দরবান পৌরসভার ট্রাফিক মোড় এলাকায় সম্প্রতির মিছিল শেষে সমাবেশে বম সম্প্রদায়ের ধর্ম যাজক রেবারেন পাক্সিম বম একথা বলেন।
জনশুন্য পাড়া গুলো হল, রোয়াংছড়ি উপজেলার, রোংছড়ি সদর ইউপির,পাইক্ষ্যং পাড়া, আলেক্ষ্যং ইউপি-ওলন্দাজনপাড়া,রুমা উপজেলা, পাইন্দু ইউনিয়নের, জুরপি পাড়া, রেমাক্রী ইউপির চাইংক্ষ্যং পাড়া, লোয়াং মোয়াল পাড়া,তিন্দল থে পাড়া, স্লোপি পাড়া,পাইংক্ষিয়াং পাড়া ও বান্দরবান সিমান্তবর্তী রাঙ্গামাটি বিলাইছড়ি উপজেলার সাইজাম পাড়া।
রেবারেন পাক্সিম বম বলেন, কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট (কেএনএফ) ইস্যুতে অন্তত তিন হাজার বম সম্প্রদায়ের লোকজন নিজ বসতবাড়ি ফেলে ভারতের মিজোরামে আশ্রয় নিয়েছে। ভারতে পালাতে গিয়ে মিয়ানমারের আরাকান আর্মির কাছে বন্দি রয়েছে অনেকেই। এসব ঘটনায় জেলার ৮টি পাড়াসহ মোট ৯টি বম সম্প্রদায়ের পাড়া জন শুন্য হয়ে পড়েছে।

এছাড়া এই ঘটনায় প্রত্যক্ষ ভাবে যেমন বম সম্প্রদায়ের উৎপাদিত ফসল ক্রয় বিক্রয়ে ব্যাঘাত হয়ে আর্থিক ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, তেমনি পরোক্ষ ভাবে জেলা জুড়ে পর্যটন খাতও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
ফলে কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট (কেএনএফ) সংঘটনের নামে বিপদগামী সকল বম সম্প্রদায়ের সদস্যদের সরকারের নিকট আত্নসমর্পণের মাধ্যমে সুস্থ জীবনে ফিরে আসার আহব্বান জানান।
কেএনএফ নামে এই অদ্ভুত পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে সরকারের স্বর্বউচ্চ সহযোগীতা কামনা করেন।
জেলায় বসবাসরত সকল সম্প্রদায়ে অংশগ্রহণে অনুষ্ঠিত এই সম্প্রীতির মিছিল শেষে, সমাবেশে বক্তব্য রাখেন, ম্রো স্টুডেন্ট সোস্যাল কাউন্সিল এর সভাপতি তনয়া ম্রো, মানবাধিকার কর্মী জন ত্রিপুরা,
বান্দরবান হোটেল রিসোর্ট ওনার্স এসোসিয়েশন এর সাধারণ সম্পাদক মোঃ জসিম উদ্দিন, সভাপতি বম সোস্যাল কাউন্সিলের সভাপতি লালজা লম বম, খ্রিষ্টান ধর্ম যাজক রেভাঃ পাকসিম বম, হেডম্যান উনি হ্লা মারমা, শিক্ষাবিদ ক্যশৈ প্রু খোকা, কেন্দ্রীয় মসজিদের খতিব আলাউদ্দিন ইমামী বৌদ্ধ ভিক্ষু সত্যজিৎ মহাথের প্রমুখ।
উল্লেখ্য, ২০২২সালের সেপ্টেম্বরে জেলার দূর্গম এলাকা গুলোতে সশস্ত্র সংগঠন গুলোর আনাগোনা বৃদ্ধি পাওয়ায় ১৭ অক্টোবর রুমা-রোয়াংছড়িতে দেশি বিদেশি পর্যটক ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে স্থানীয় প্রশাসন। এই নিষেধাজ্ঞা কয়েক দফায় বাড়িয়ে রুমা-রোয়াংছড়ি, আলীকদম ও থানচি উপজেলায়ও আরোপ করা হয়। পরে আলীকদম উপজেলা হতে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করা হলেও রুমা-রোয়াংছড়ি ও থানচি উপজেলায় বহাল রয়েছে। ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞার মধ্যেও চলতি বছর ৩ ও ৪এপ্রিল রুমা ও থানচিতে তিনটি ব্যাংকে ডাকাতি করে সশস্ত্র সংগঠন কেএনএফ। পরে ৬এপ্রিল থেকে সন্ত্রাস দমনে নিরাপত্তা বাহিনীর অভিযান শুরু করে। চলমান অভিযানে সেনাবাহীনির কর্মকর্তাসহ নিহত হয়েছেন বেশ কয়েকজন।
এছাড়া প্রায় দুই বছরের বেশি সময় ধরে পর্যটকদের নিরাপত্তা জনিত কারণে জেলার রোয়াংছড়ি -রুমা ও থানচি তিন উপজেলা ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা আরোপ থাকায় বান্দরবান ভ্রমণ প্রত্যাশীরা বান্দরবান ভ্রমণে বিমূখ হয়ে পড়েছেন। ফলে আশানুরূপ পর্যটক না পাওয়ায় জেলার পর্যটন সংশ্লিষ্ট ব্যাবসায়ীরা প্রতিনিয়ত আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন। অনিবার্য কারণ দেখিয়ে পর্যটকগণকে গত ৮ অক্টোবর ২০২৪ হতে ৩১ অক্টোবর ২০২৪ পর্যন্ত বান্দরবান ভ্রমণ থেকে বিরত থাকার জন্য অনুরোধ জানানো হয়েছিল স্থানীয় প্রশাসন থেকে। ৮ নভেম্বর থেকে বান্দরবান সদর, লামা, আলিকদম ও নাইক্ষ্যংছড়ি পর্যটক ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করা হলেও রোয়াংছড়ি, রুমা ও থানচিতে পর্যটক ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা বহাল রয়েছে।