‘‘ভালোবাসা দিবস’’ শুনতেই যেন বুকের ভেতর হালকা হাওয়ার পরশ পাই। অনেকদিন ভেবেছি, ভালোবাসার জন্য দিবস, নাকি দিবসের জন্য ভালোবাসা। যাদের কাছে দিবসের জন্য ভালোবাসা তাদের হয়তো এই ব্যাপারটা নিয়ে আর বেশিদূর এগোনো উচিত হবে না। আর যাদের কাছে ভালোবাসার জন্য দিবস তাদের জন্যই আজকের লেখাটাকে আরও কিছুটা আমি বাড়াবো।
ভালোবাসার সংজ্ঞা খুঁজতে গিয়ে আমি ভালোবাসাকে ভালোবেসেছি, অনেক অনেক ভালোবাসা দিয়ে আমি ভালোবাসাকে জয় করতে চেয়েছি। কখনো পেরেছি আবার কখনোবা চরমভাবে হেরেছি। আমার হেরে যাওয়া রাত দিন চোখের লোনা জলে ¯œাত হয়েছে অবিরত। তবুও বলেছি, ভালোবাসা আমি তোমাকে অনেক অনেক ভালোবাসি। ভালোবাসতে বাসতে আমি দেউলিয়া হয়েছি, তবুও বাসি …… অনেক ভালোবাসি।
তোমরা কখনো কচি ধানের গাছ যেখানে গাঢ় সবুজ রঙ ধারণ করে জমির পর জমি মিলে পুরো এলাকাটাকে সবুজ গালিচা বানিয়ে দিয়েছে এমন মাঠ দেখেছ? কখনো কি হেঁটেছে ঐ মাঠের মাঝখান দিয়ে চলে যাওয়া ছোট ছোট আল ধরে? তখন বুঝতে পারিনি, আজ অনেকদিন পরে বুঝেছি ওখানে ভালোবাসা ছিল, ওখানে মাটির টান ছিল, ওখানে অভিমান ছিল। সবচেয়ে বড় কথা ওখানে অন্যরকম এক ভালোবাসা ছিল।
উন্মুক্ত মাঠে আকাশের স্বার্থহীন অশ্রু বিসর্জন সেদিন অঝোর ধারায় বারত। আজ আকাশের সেই স্বার্থহীন অশ্রু ‘বৃষ্টি’রাও অনেক বেশি স্বার্থপর হয়ে গেছে। তাই হয়তো খোলা মাঠে অঝোরে আর ঝরে না। একেকটা ফোঁটা স্বার্থের ছাদে পড়ে ভাগ হয়ে যায় অনেক ফোঁটায়, যেমন করে স্বার্থপর মানুষগুলোর ভিতর লুকিয়ে থাকা অকৃত্রিম ভালোবাসা ভাগ হয়ে গেছে হাজারো কৃত্রিমতায়। স্বার্থপর মানুষের স্বার্থের খেলা দারুণ জমেছে এখন। যোগ – বিয়োগের অনেক হিসাবই-তো কষলে বসে বসে। কিন্তু কখনো কি একটু ভালো করে ভেবেছ, সবশেষে ফলাফল সেই শূণ্যই? মাঝে মাঝে তোমাদের দেখে খুব হাসতে ইচ্ছে করে, কেন যে তোমরা এমন কৃত্রিমতার মাঝে গা ডোবালে? বুঝবার ক্ষমতা থাকলেও মাঝে মাঝে বুঝতে পারি না এসব আমার বোঝা উচিত কিনা!
তবুও জানতে ইচ্ছে করে তোমরা কি এই সভ্যতার মেকি রঙ মেখে একেবারেই যান্ত্রিক হয়ে গেছ, নাকি তোমাদের মাঝে বদ্ধ ঘরে দরজার ফাঁক দিয়ে আসা সরু আলোর রেখাটির মত এখনো কিছু অকৃত্রিমতা বেঁচে আছে? যদি অকৃত্রিমতার প্রাণ বলে কিছু আজও অবশিষ্ট থাকে তবে তাকে বিবেকের হাত দিয়ে প্রকাশ্যে টেনে এনে কৃত্রিমতাকে হারিয়ে দাঁড় করাও সামনের কাতারে। একবার চিৎকার করে বল, তোমরাও ভালোবাসতে জান। আমি বার বার বোঝাতে চেয়েছি, তোমরা আমার। কিন্তু আমি যতবারই বোঝাতে গিয়েছি, তোমরা আমাকে বুঝিয়ে দিয়েছ, আমি তোমাদের নই। কী দরকার বল, মেকি সভ্যতার যান্ত্রিক মানব হয়ে বেঁচে থাকা? কৃত্রিম রঙ মেখে সঙ সেজে কখনো বেঁচে থাকার অর্থ খুঁজে পাওয়া যায় না। আমি জীবনকে টেনে নেওয়ার পক্ষপাতি নই! হয় বাঁচার মত করে বেঁচে থাক, নয়তো জীবন্ত লাশ হয়ে পৃথিবীতে লাশের মিছিল দীর্ঘ করার প্রয়োজনটা আজ ভাবনারই বিষয়।
ভাবুকদের কাজ শুধু ভাবনাই, কিছু করে দেখানোর দলে আমরা খুব কমই ভিড়তে চাই। আমরা ভাবতে ভাবতে আজকাল গলাগলি ছেড়ে অনেক বেশি দলাদলিতে নেমে পড়েছি। ভালোবাসা তাই হয়তো ছুটি নিয়েছে। আমার ভালোবাসা, যাকে আমি অনেক ভালোবাসা দিয়ে জয় করেছি সে যখন আমার পাশে থাকে তখন বুঝতে পারি না তাকে আমি কতটা ভালোবাসি। কিন্তু সে যখন বলে আমি তখন বুঝতে পারি ভবিষ্যতের দিনগুলো আমার একঘেঁয়েমি আর ঘোর অমানিশায় লুকিয়ে যেতে বসেছে! তোমরাও হয়তো এখন ভালোবাসাকে ছুটি দিতে প্রস্তুত কিন্তু যেদিন দেখবে ভালোবাসা তোমাদের মাঝ থেকে সত্যি সত্যি নিখোঁজ হয়েছে তখন বুঝবে তাকে তোমরা অনেক বেশি ভালোবাসতে। সেদিন ভালোবাসার কাছে তোমাদের ডাক পৌঁছাবে না হয়তো। তবুও প্রত্যাশা তোমাদের ভালোবাসা যেন কোনদিন তোমাদের ছেড়ে না যায়।
প্রত্যাশা আর প্রাপ্তির ব্যবধান আমার অজানা নয়। তারপরও আমি আস্থা হারানো মন নিয়ে তোমাদের কাছে দু’হাত পেতেছি। এই দু’হাতে তোমরা দু’মুঠো ভালোবাসা দিও, আমার পৃথিবীটা ধন্য হবে। প্রাপ্তি – প্রত্যাশার ফারাক ভুলে সে তৃপ্তির রঙে হৃদয় রাঙাবে। মন থেকে শুধু একবার বল ভালোবসি, আমি পৃথিবীটাকে স্বর্গ বানিয়ে দেব! শুধু একবার বল ভালোবাসি, আমি বসন্তের সমস্ত ফুল দিয়ে ঢেকে দেব তোমার চলার পথ। সাধারণ ভাত – কাপড়ে যাদের দিন কেটে যায় ভালোবাসাকে উত্তপ্ত রবি থেকে আড়াল করতে তাদের সস্তা কাপড়ের নাতিদীর্ঘ আঁচল ঢের ভাল। সেই আঁচল দিয়েই আমি তোমায় জ্বলন্ত অরুণ থেকে আড়াল করব। ভালোবাসা, শুধু একবার বল, তুমি আমায় ভালোবাস, তাই আসবে এ পথে… আবার শোনাবে গান, আবার জমবে খেলা যেখানে থাকবে মান – অভিমান। সব ভুলে গিয়ে আবার প্রাণে প্রাণে হবে এক প্রাণ…
ভালোবাসা, জানিনা এখন তুমি কোথায়। কেন বার বার চাইছ ছুটি? নিতে চাইছ বিদায়। খেলছ লুকোচুরি। শুধু এটুকু বলি, ভালোবাসা নিও, তুমি ভালো থেকো। ভালোবাসা, অনেক … অনেক … অনেক ভালোবাসা তোমার জন্য। সত্যি প্রচন্ড ভালোবাসি তোমায়, ভালোবাসা…।
লেখক-আবু ফারুক
[email protected]