মহালছড়িতে পুলিশ কর্তার ঘুমের ব্যাঘাত : ১১ মাছ ব্যবসায়ী ও জেলেকে নির্যাতন !

NewsDetails_01

খাগড়াছড়ির মহালছড়িতে কোন কারণ ছাড়াই এক পুলিশ কর্মকর্তার নির্যাতনের শিকার হয়েছেন ১১ জন মাছ ব্যবসায়ী ও জেলে। বরফ ভাঙ্গার শব্দে ওই পুলিশ কর্মকর্তার ঘুমের ব্যাঘাত হবার অজুহাতেই তিনি এই কান্ড করে বসেন বলে জানা গেছে।
মহালছড়ি মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির কার্যালয়ে সমিতির সভাপতি আবুল কালাম, সাধারণ সম্পাদক আবুল খায়ের ও কোষাধ্যক্ষ উত্তম চাকমাসহ অভিযোগ করে বলেন, ২৮ নভেম্বর রাত আনুমানিক ৩টায় ফিসারিঘাটে মহালছড়ি থানার এস,আই তৌহিদ অতর্কিতভাবে এসে মাছ প্যাকিং করার সময় মহালছড়ি মৎস্য সমিতির সিনিয়র সহসভাপতি মো: ফরিদসহ ১১ জনকে থানায় নিয়ে গিয়ে কোন কারণ ছাড়াই বেধরক মারধর শুরু করে।
এসময় এস আই তৌহিদ এবং কনস্টেবল কাউসারের লাঠির আঘাতে আহত হন বায়েজিদ কালাম (৩৫), মালু মিয়া, রহম আলী(৫০), বিএফ ডিসি’র পরিচ্ছন্নকর্মী মো: জামাল (৩৫), তান্ডু মিয়া (৪০), ফরহাদ আলী (৩০), তারা মিয়া (৩২), মোহন মিয়া (৪৫), খোকন মিয়া (২৮), করিম মিয়া (৫৫)। এরা সকলেই মাছ প্যাকিং এর কাজ করে।
এই খবর পেয়ে সকালে সংগঠনের সিনিয়র সহ-সভাপতি মো: ফরিদ থানায় আটকদের সকালের নাস্তা নিয়ে দেখা করতে গেলে এস আই তৌহিদ তাঁর ওপর হামলে পড়েন। এলোপাথাড়ি কিল-ঘুষি আর লাঠির আঘাতে তিনি মাটিতে লুটিয়ে পড়েন।
বিষয়টি জানাজানি হলে মাছ ব্যবসায়ী এবং জেলেদের পরিবার থানার বাইরে অবস্থান নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করতে থাকেন। পরে মহালছড়ি সদর ইউপি চেয়ারম্যান রতন শীল এসে পরিস্থিতি সামাল দেন। থানা থেকে গুরুতর আহত মো: ফরিদকে প্রথমে মহালছড়ি সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয় এবং পরে অবস্থার অবনতি হলে খাগড়াছড়ি আধুনিক হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়।
পুলিশের এ হামলার কারণে ২ লক্ষাধিক টাকার মাছের ক্ষয়-ক্ষতি হয়েছে বলে অভিযোগ করেন এবং নির্যাতনকারী এস,আই তৌহিদের এ ধরণের কার্যকলাপের যথাযথ তদন্তপূর্বক বিভাগীয় বিচার ও সমস্ত মাছের ক্ষয়-ক্ষতির ক্ষতিপূরণ দাবী করেন মৎস্য সমিতির নেতৃবৃন্দ।
তারা আরো অভিযোগ করে বলেন, বেধরক মারধর করার পর থানা থেকে ছেড়ে দিলেও প্রত্যেককে তার হাতে থাকা পিস্তল ঠেকিয়ে মারধর করা হয়নি বলে এস, আই তৌহিদ তার নিজস্ব এন্ড্রয়েড মোবাইলে জোরপূর্বক স্বীকারোক্তিমূলক ভিডিও ধারন করেন।
আহত মো: ফরিদ এর বিষয়ে মহালছড়ি উপজেলা উপসহকারী কমিউনিটি মেডিক্যাল অফিসার লাতিন চাকমা বলেন, সকালে মো: ফরিদ নামে একজন রোগী হাসপাতালে নিয়ে আসলে মহালছড়িতে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিশেষ কোন সরঞ্জাম না থাকায় খাগড়াছড়িতে প্রেরণ করা হয়েছে।
ঘটনার বিষয়ে মহালছড়ি উপজেলা মৎস্য উন্নয়ন কর্পোরেশন এর ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা নাসরুল্লাহ আহম্মেদ ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, সামান্য বিষয়ে পুলিশের এ ধরণের ঘটনা অত্যন্ত দুঃখজনক। এসব কারণে সরকারী রাজস্ব আয়ে ব্যাঘাত সৃষ্টি হবে।
মহালছড়ি সদরের ইউপি চেয়ারম্যান এবং উপজেলা আওয়ামীলীগের সা: সম্পাদক রতন শীল জানান,ওই পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অল্প কদিনেই মানুষের অনেক অভিযোগ শোনা যাচ্ছে। সাধারণ মাছ ব্যবসায়ী এবং জেলেদের সাথে মধ্য রাতে এমন আচরণ দু:খজনক।
এ বিষয়ে মহালছড়ি থানার অফিসার ইনচার্জ মো: জোবায়েরুল হক ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে জানান, এস আই তৌহিদের বিরুদ্ধে আগেরও কিছু অভিযোগ ছিল। সোমবারের অপ্রত্যাশিত ঘটনার বিষয়টি পুলিশ সুপারকে জানিয়েছি।
খাগড়াছড়ির পুলিশ সুপার আলী আহমেদ খান জানান,অভিযুক্ত পুলিশ কর্মকর্তাকে এরিমধ্যে মহালছড়ি থেকে প্রত্যাহার করা হয়েছে। তাঁর বিরুদ্ধে বিভাগীয় শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়ার জন্য তদন্ত অব্যাহত আছে।

আরও পড়ুন