মাইন উদ্দিনের শিকলে বাঁধা জীবনের আড়াই বছর

NewsDetails_01

যে বয়সে দুরন্তপনায়, ছুটাছুটি খেলাধূলা পড়ালেখায় মনোনিবেশ করার কথা, সে বয়সে শেকলে বাঁধায় বন্দী জীবন কাটে তার। বেশ লম্বা শিকলের এক অংশ কোমড়ের সাথে, অন্য অংশ ঘরের খুটির সাথে বাঁধা। আড়াই বছর ধরে এ অবস্থাতেই কাটে তার প্রতিদিনের খাওয়া-দাওয়া ও প্রাত্যহিক কাজকর্ম। বলছিলাম খাগড়াছড়ির মাটিরাঙ্গা উপজেলার বেলছড়ি ইউনিয়নের অযোধ্যা মোড়ের বাসিন্দা চা দোকানী মো. আলম মিয়ার ৯ বছর বয়সী ছেলে মো: মইন উদ্দিনের কথা।

খবর নিয়ে জানা যায়, জন্মের ১৮ মাস বয়সে জ্বর হয় মাইন উদ্দিনের। মান্ধাতা পদ্ধতি অনুসরণপূর্বক বিভিন্ন কবিরাজের পানি পড়া, ঝাড়-ফুকে জ্বর সারলেও শরীরে খিঁচুনি বাধে তার। অবস্থার অবনতি হলে প্রথমে খাগড়াছড়ি সদর হাসপাতাল ও পরে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে দীর্ঘদিন চিকিৎসা করানো হয়।

এভাবেই চিকিৎসা চলে সাড়ে ৩ বছরের মতো। ছেলে মো. মাইন উদ্দিনের চিকিৎসা করতে গিয়ে আর্থিক সঙ্কটে পড়েছেন পাঁচ সন্তানের জনক চা দোকানী মো. আলম মিয়া। তিনি বলেন, চা দোকানের আয় দিয়েই চলে আমার ছেলের চিকিৎসা, আর সাত সদস্যের পরিবারের ভরন পোষন। ছেলের প্রতিবন্ধী ভাতার অর্থ ছাড়া আর কোন সরকারী সাহায্য জুটেনি, এমন আক্ষেপের কথাও জানান তিনি। অসুস্থ ছেলের চিকিৎসায় সরকার ও জনপ্রতিনিধিদদের সহযোগিতা কামনা করে তিনি।

NewsDetails_03

তিনি আরো বলেন, চিকিৎসা শেষে বাড়িতে নিয়ে আসার পর থেকেই অস্বাভাবিক আচরণ করতে থাকে শিশু মাইন । অকারনেই প্রতিবেশী শিশুদের মারধর করে। প্রতিবেশীদের বাড়িঘরের মূল্যবান জিনিসপত্র ভাংচুর করে। আবার মাঝে মাঝে বাড়ি থেকে হারিয়েও যায়। এরপরপরই মানসিক প্রতিবন্ধী সন্দেহে প্রতিবেশীদের পরামর্শে গত দুই বছরের বেশী সময় ধরে মাইন উদ্দিনকে শিকলে বেঁধে রেখেছেন তারা। সবসময় হাউমাউ করে কিন্তু মুখ ফুটে কোন কথা বলতে পারেনা।

বেলছড়ি ইউনিয়নের পরিষদের চেয়ারম্যান মো: রহমত উল্লাহ জানান, ইতিমধ্যে শিশুটির নামে প্রতিবন্ধী ভাতার কার্ড দেওয়া হচ্ছে। ভবিষ্যতেও শিশুটির চিকিৎসাসহ সার্বিক বিষয় পরিষদের পক্ষ থেকে সব ধরনের সহযোগিতা দেয়া হবে।

এবিষয়ে জানতে চাইলে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের রেসিডেন্ট ডা. পরাগ দে বলেন,অপচিকিৎসার কারনেই এমনটা হয়েছে। চিকিৎসায় শিশু মো. মাইন উদ্দন সুস্থ হয়ে উঠতে পারে মন্তব্য করে তিনি বলেন, এভাবে বেঁধে রাখা তাঁর প্রতি অমানবিক আচরন। এজন্য তিনি সব ধরনের সহযোগিতা করবেন বলেও জানান।

মাটিরাঙ্গা উপজেলা নির্বাহী অফিসার মিজ তৃলা দেব বলেন, ইতিমধ্যে মো: মাইন উদ্দিনের নামে সুবর্ণ কার্ড ও প্রতিবন্ধী ভাতা বরাদ্ধ দেয়া হয়েছে। তবে তার বাবার আবেদনর প্রেক্ষিতে অনুদানের ব্যবস্থা করা হবে বলে তিনি জানান।

আরও পড়ুন