মাটিরাঙ্গায় চা বাগান, সম্ভাবনার নতুন দিগন্ত

শহরের কোলাহল ছেড়ে পাহাড়ের আঁকাবাঁকা মেঠো পথ পেরিয়ে তাইন্দং এলাকার বিস্তীর্ণ টিলা-পাহাড় ও সমতল মিলনস্থলে স্থানীয় কৃষক আলী হোসেন শখের বসে গড়ে তুলেছেন একটি চা-বাগান। উঁচু-নিচু পাহাড়ের ভাঁজে ভাঁজে সবুজ গালিচায় মোড়ানো দুটি পাতা আর একটি কুঁড়ি যেন সবুজ পাহাড় কে আরো সবুজময় করে তুলছে।

বাংলাদেশ চা-বোর্ড থেকে প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী দেশে ১৬৮ টি চা-বাগান নিবন্ধিত রয়েছে। তার মধ্যে চট্টগ্রাম জেলায় আছে ২২ টি চা বাগান, তবে২০১৬ সাল খাগড়াছড়ির মানিকছড়ি তিনটহরী তে ৪৩ একর জায়গার উপর ১ টি চা-বাগান রয়েছে যেটি সর্বশেষ নিবন্ধিত। যদওি তাইন্দং এর চা-বাগান টি দূর্গম আর কম জমির উপর বিধায় হয়তো চা বোর্ডের তালিকায় নাম উঠেনি।

সরেজমিনে দেখা যায়, মাটিরাঙ্গা সদর থেকে প্রায় ৫০ কিলোমিটার দূরে সীমান্তবর্তী তাইন্দং এর কৃঞ্চদয়াল বিজিবি ক্যাম্পের পাশেই একটি ছোট চা-বাগান। সবুজে সমারোহ দৃষ্টিনন্দন বাগানটি দেখতে প্রতিদিন স্থানীয় অনেক পর্যটক ছুটে আসেন এখানে। দুর্গম পাহাড়ের বুকে একখন্ড চা বাগান পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর জীবনযাত্রা এবং সংস্কৃতি পর্যটকদের কাছে এটি বাড়তি আকর্ষণ। একই সাথে সম্ভাবনার নতুন দিগন্ত উন্মোচন হবে।

NewsDetails_03

চা-চাষি আলি হোসেন বলেন, স্থানীয়ভাবে অনেকেই ফল, শাকসবজি এসব আবাদ করে আয় করছে। ব্যাতিক্রম কিছু করার আশায় আমি চা-বাগান করার উদ্যেগ নেই। সে সুবাদে ২০১৬ সালে ৩০ বিঘা জমি ক্রয় করি। তারপর চা-চাষের জন্য এ মাটি উপযোগী কিনা তা পরিক্ষা করে সিলেট থেকে চায়ের বীজ এনে চারায় রুপান্তর করি। বর্তমানে ৪বিঘা জমিতে ৬ হাজার গাছ আছে। বাকি জমিগুলোতে ক্রমান্বয়ে চা-বাগান করা হবে। বার্ষিক প্রায় ৬ লাখ টাকার চা বিক্রি করা হয়। খরছ হয় অর্ধেকের কিছু বেশি । নিজের বানানো মেশিনেই চা পাতার প্রক্রিয়াজাত করেন জানিয়ে তিনি আরো বলেন, স্থানীয় ভাবে প্রতি কেজি চা-পাতা ৩শত টাকা করে বিক্রি করেন। বছরে প্রায় ২১শত কেজি চা-পাতা বিক্রি করা হয় । বর্তমানে গাছের বয়স ৯বছর। ১২ বছর অতিক্রম হলে প্রতিটা গাছে শতভাগ চা-পাতায় পরিপূর্ণ হবে। তখন লাভ হবে আরো বেশি।

চা বাগান সবুজে আচ্ছাদিত ঢালু জমি, যা দর্শনার্থীদের মুগ্ধ করে জানিয়ে মাটিরাঙ্গা থেকে বাগান দেখতে আসা রফিকুল ইসলাম বলেন, আমি শিক্ষকতা করি প্রতিষ্ঠান বন্ধের সুযোগে স্বজনদের নিয়ে চা-বাগান দেখতে আসছি। কচি কচি চা-পাতা সমৃদ্ধ বাগানটি খুব সুন্দর। দারুন সময় কাটছে এখানে। সময় পেলে আবার আসবো সহকর্মীদের নিয়ে।

মাটিরাঙ্গার আবহাওয়া ও মাটি চা বাগান করার জন্য উপযোগী জানিয়ে মাটিরাঙ্গা উপ-সহকারী উদ্ভিদ সংরক্ষণ কর্মকর্তা মো: আমির হেসেন বলেন, চা বাগান সাধারণত পাহাড়ি উঁচু জমিতে হয়, কারণ এসব অঞ্চলের জলবায়ু ও মাটির গুণাগুণ চা চাষের জন্য বেশ উপযোগী।

চা চাষ প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্য, কর্মসংস্থান এবং অর্থনৈতিক দিক থেকে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে জানিয়ে মাটিরাঙ্গা উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মনজুর আলম বলেন, মাটিরাঙ্গায় গড়ে উঠা একটি চা বাগানের কথা শুনেছি। বাগানটি পুরোপুরি গড়ে উঠলে ওই এলাকার পরিবেশের ভারসাম্য যেমন রক্ষা হবে, তেমনি চা পাতা উৎপাদন থেকে লাভবান হবে দেশের অর্থনীতি।

আরও পড়ুন