খাগড়াছড়ির মাটিরাঙ্গায় উপজেলা জুড়ে বিস্তীর্ণ মাঠ জুড়ে সবুজ- সোনালীর সমারোহ। হেমন্তের আধো আধো হিমেল বাতাসে একখন্ড ডেউ কৃষকের মনে সোনালী স্বপ্ন দোল খাচ্ছে। এদিকে কৃষক সেই সোনালী ধান ঘরে তুলতে বন্যায় ডুবে যাওয়া গোলা প্রস্তুত করে নিচ্ছেন।
মাটিরাঙ্গা উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, মাটিরাঙ্গায় ৫হাজার ২০ হেক্টর জমিতে আমনের চাষ করা হয়। লক্ষ্যমাত্রা উৎপাদন ৪হাজার ৭৫০ হেক্টর জমি। বন্যায় ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছিল ৪শত ২৭ হেক্টর জমি। তাছাড়া সাড়ে ১৩ হেক্টর জমির পুনর্বাসন সহায়তা হিসেবে ২০২৪-২৫ অর্থবছরে প্রণোদনা কর্মসূচীর আওতায় খরিপ-২ আমন ধানের মাঠ ফসলের উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে ১শত জন ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষকদের মাঝে বিনামূল্যে উফশী জাতের আমন ধানের বীজ-৫ কেজি, ডিএপি সার ১০ কেজি, এমওপি সার ১০ কেজি ও নগদ ১ হাজার টাকা প্রদান করা হয়েছে।
সম্প্রতি সৃষ্ট বন্যার কারণে সময়মতো বীজতলা তৈরি করতে সম্ভব হয় নি অনেক কৃষকের। বন্যার পানি নেমে যাবার পর কৃষকরা বিলম্বে আমন ধান রোপণ করেন। তাছাড়া সচেতন কৃষক নষ্ট হয়ে যাওয়া ধানের চারা দ্রুত পুন: রোপণ করেন। তবে এ বছর পলি জমার দরুন জমিতে ফলন ভালো হয়েছে। তাছাড়া বন্যায় ধুয়ে মুছে যাবার কারণে এ বছর ধান গাছে পোকামাকড়ের আক্রমণ অন্যান্য বছরের তুলনায় কম পরিলক্ষিত হয়েছে। তবে সৃষ্ট বন্যায় ক্ষতি কাটিয়ে উঠার জন্য কৃষক আপ্রাণ চেষ্টা করে যাচ্ছেন।
চড়পাড়ার কৃষক কামাল উদ্দিন বলেন, আমি ১শত শতক জমিতে আমন ধান চাষ করেছি, ধানগাছের অবস্থা বেশ ভালো, পোকামাকড়ের আক্রমণ তেমনটা নেই, আশাবাদী এবার ভালো ফলন হবে।
আমতলীর কৃষক জামাল হোসেন বলেন, প্রথমে যে ধান রোপণ করেছিলাম হটাৎ বন্যার পানি এসে তলিয়ে যায়, বন্যার পানি নামার সাথে সাথে ধানের চারা সংগ্রহ করেই রোপণ করেছি। কিছুটা দেরি হলেও ফলন ভালো হবে আশা করছি।
তবলছড়ি কৃষক রহমান জানান, আমার ৫০বিঘা খেতের ধান বন্যায় ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে, বন্যার পানি নামলে ঋণের টাকায় পুনর্বার চাষাবাদ শুরু করি, পোকামাকড়ের আক্রমণ নেই ফলন ভাল হবে আশা করছি।
মাটিরাঙ্গা উপজেলা কৃষি উপ-সহকারি কর্মকর্তা দেবাশীষ চাকমা বলেন, আমন ধান চাষাবাদের পর থেকে মাঠ পর্যায় গিয়ে আমি কৃষকদের পরামর্শ দিয়েছি। এবার মাটিরাঙ্গা পৌর এলাকায় আমন ধানের ভালো ফলন হয়েছে, কিছু এলাকায় বন্যার কারণে বিলম্বে রোপণ করা হয়েছে, আবহাওয়া অনুকূলে ছিলো এবং বৃষ্টিপাত হয়েছে এজন্য পোকামাকড়ের আক্রমণ ছিল কম।
মাটিরাঙ্গা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মো. সবুজ আলী জানান, বন্যায় ক্ষতিগ্রস্থ কৃষক যেন ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে পারে সেজন্য বিভিন্ন পরামর্শ সহ সরকারি সহায়তা প্রদান করা হয়েছে। তাছাড়া অল্প খরচে অধিক ফলনের জন্য আমরা কৃষকদের আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারে উদ্বুদ্ধ করেছি। শুরু থেকেই আমাদের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তারা মাঠ পর্যায় কৃষকদের সার্বক্ষণিক পরামর্শ প্রদান করেছেন।