মিয়ানমারে সংঘাত : নাইক্ষ্যংছড়ি সীমান্তের কৃষকরা বেকায়দায়

NewsDetails_01

মিয়ানমারের শসস্ত্র বিদ্রোহী সংগঠন আরকান আর্মি (এএ) ও দেশটির সেনাবাহিনীর মধ্যে গত ১ মাস ধরে তুমুল সংঘর্ষের কারনে দেশের নাইক্ষ্যংছড়ির সীমান্ত এলাকার মানুষ চরম আতঙ্কে দিন পার করছে, ফলে কৃষিসহ ব্যবসা-বাণিজ্যে প্রভাব পড়ছে।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, সীমান্তে গোলাগুলির কারণে এপারের কৃষকরা ভয় ও আতংকে নিজেদের চাষকৃত কৃষি জমিতে যেতে না পারার কারনে তাদের আবাদকৃত ফসল কেমন আছে তাও জানতে পারছেনা। এমনকি যারা বাঁশ, কাঠ কেটে নিজেদের জীবিকা নির্বাহ করতেন, তারা ভয় ও আতঙ্কে সীমান্তের দিকে যেতে পারছে না।

এই ব্যাপারে ঘুমধুম ইউনিয়ন ছাত্র লীগের সহ সভাপতি বোরহান আজিজ জানান, উত্তেজনা পরিস্থিতির কারনে সীমান্তের ব্যবসা-বাণিজ্য প্রায় অচল, বেশি ক্ষতি হচ্ছে জুম চাষিদের, নিরাপত্তার জন্য সীমান্তের পাশে কোন মানুষকে যেতে দিচ্ছেনা বিজিবি।

আরো জানা গেছে, স্থানীয় কৃষকরা তাদের সবজি ক্ষেত ও চাষকৃত জমি নিয়ে পড়েছেন বেকায়দায়। মিয়ানমারে চলমান এই সংঘাত অব্যাহত থাকলে সীমান্ত ঘেঁষা এলাকায় চাষাবাদ করা ফসল আর কৃষকের ঘরে উঠবেনা। পঁচে যাবে শত শত হেক্টরে আবাদ করা ধানসহ বিভিন্ন ফসল। ইতিমধ্যে আতংকগ্রস্থ হয়ে কৃষি কাজ বন্ধ রেখে নিরাপদ আশ্রয় নিয়েছেন জুম চাষিরা।

এ বিষয়ে উপজেলার ঘুমধুম ইউনিয়নের কৃষক মো: আলমগীর বলেন, মিয়ানমারের এই সংঘাতের কারনে প্রাণের ভয়ে সীমান্ত ঘেঁষা পাহাড়ে যেতে না পারায় পরিবার পরিজন নিয়ে বিপাকে পড়েছেন।

এদিকে সীমান্ত উত্তেজনার কারণে উপজেলার ঘুমধুম, তুমব্রু, বাইশফাঁড়ী, ফাত্রাঝিড়ি, রেজু, আমতলিসহ বিভিন্ন এলাকায় থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। গত ১৫ দিন ধরে বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ির ঘুমধুমের সীমান্ত সড়কের নির্মাণ কাজ বন্ধ রয়েছে, সেখানে কাজ করছেনা কোন নির্মান শ্রমিক।

NewsDetails_03

১নং উত্তর ঘুমধুম সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় শিক্ষক রুপলা ধর বলেন, মানুষ যথেষ্ট আতঙ্কে আছে, যার ফলে মানুষ সীমান্তে যেতে ভয় পাচ্ছে। সীমান্ত ঘেষা যেসব জায়গায় চাষ করা হয়েছে, ওসব চাষকৃত জমির দৈনন্দিন দেখাশুনা করার জন্য স্বাভাবিক ভাবে কৃষকরা যাতায়াত করতে পারছেনা।

সীমান্ত সংলগ্ন পাহাড়ে জুম চাষ করলেও গত এক মাস ধরে জুমে যাওয়া সম্ভব হয়নি গুলি ও বোমার আতংকে। আয় না থাকায় বর্তমানে পরিবার চালাতে হিমশিম খাচ্ছেন বলে জানান, ঘুমধুমের জুমচাষী ফয়েজুর রহমান।

ঘুমধুম ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো: জাহাঙ্গীর আজিজ জানান, মিয়ানমারের ভিতরে গোলাগুলির ফলে সীমান্তের কৃষকরা বেকায়দায় পড়েছেন, তারা কৃষি কাজ করতে যেতে পারছেনা।

নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা কৃষি বিভাগের তথ্য মতে, জেলার নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ঘুমধুম ইউনিয়নে ১হাজার ৫৫ হেক্টর কৃষি জমিতে চাষাবাদ করা হয়।

এই ব্যাপারে নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা এনামুল হক বলেন, সীমান্ত এলাকায় কৃষিকাজ করতে সমস্যা হচ্ছে, কোন কৃষক আমাদের এই ধরণের অভিযোগ করেনি।

প্রসঙ্গত, গত ২৮ আগষ্ট মিয়ানমার থেকে নিক্ষেপ করা দুটি মর্টার শেল অবিস্ফোরিত অবস্থায় ঘুমধুমের তমব্রু’র উত্তর মসজিদের কাছে পড়ে। গত ৩ সেপ্টেম্বর ঘুমধুম এলাকায় গোলা দুটি পড়ে এবং ৯ সেপ্টেম্বর একে ৪৭ এর গুলি এসে পড়ে এতে কোন হতাহতের ঘটনা ঘটেনি, তবে স্থানীয়দের মধ্যে ভীতি ছড়িয়ে পড়ে।

আরও পড়ুন