মৈত্রী পানি বর্ষণে সিক্ত হওয়ার অপেক্ষায় পাহাড়বাসী

NewsDetails_01

বান্দরবান পার্বত্য জেলার মারমা সম্প্রদায় তাদের নব বর্ষবরণ উৎসব “সাংগ্রাই” উদযাপনের সব ধরণের প্রস্তুতি শেষ করেছে। জেলার ৭টি উপজেলায় মৈত্রী পানি বর্ষণ উৎসবে মেতে উঠার জন্য ব্যাপক প্রস্তুতি গ্রহন করেছে উৎসব উৎযাপন কমিটি।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, আগামী ১৩ এপ্রিল সকালে বান্দরবানের মারমা সম্প্রদায় স্থানীয় রাজার মাঠ থেকে এক শোভাযাত্রার মধ্যে দিয়ে নববর্ষ বরণ অনুষ্ঠান “সাংগ্রাই” উৎযাপন শুরু করবে। উক্ত শোভাযাত্রায় প্রধান অতিথি হিসাবে উপস্থিত থাকবেন, পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী বীর বাহাদুর উশেসিং এমপি।

এ সময় আদিবাসী তরুন-তরুণীরা তাদের ঐতিহ্যবাহী পোশাকে বর্ণিল সাজে শোভা যাত্রায় অংশগ্রহন করবে। নববর্ষকে বিদায় ও আমন্ত্রন জানিয়ে আদিবাসী ভাষায় রচিত গানের তালে শোভাযাত্রাটি শহরের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিন করে ফের ক্ষুদ্র নৃ গোষ্ঠির সাংস্কৃতিক ইনিস্টিটিউটে এসে শেষ হবে।

বান্দরবান সাংগ্রাই উৎসব উদযাপন কমিটির সাধারণ সম্পাদক শৈটিং ওয়াই বলেন, এবছর ‘১৩ থেকে ১৫ এপ্রিল পর্যন্ত সাংগ্রাই উৎসব পালন হবে। এ উপলক্ষে ১৩ তারিখ সকাল ৮টায় মঙ্গল শোভাযাত্রার মাধ্যমে এর সূচনা করা হবে। পরে ১৪ তারিখ বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের অংশগ্রহনে মিনি ম্যারাথন দৌড়, ১৫ এপ্রিল আলোকচিত্র প্রদর্শনী, শহরের সাঙ্গু নদীর তীরে মৈত্রী পানি বর্ষণ এবং খেলাধুলা ও ধর্মীয় অনুষ্ঠানের মাধ্যমে আমাদের এ উৎসবের সমাপ্তি করা হবে।

NewsDetails_03

পানি বর্ষন উৎসবের সময় তরুন-তরুণীরা নির্ধারিত মঞ্চে অবস্থান করে। তরুণীদের সামনে বিভিন্ন পাত্রে বা জলাধারে জল রাখা থাকে। ঐ সময় তরুণেরা জলভর্তি পাত্র নিয়ে দলে দলে এসে ‘সাংগ্রাইংতে মিলে মিশে পানি খেলা খেলি ও ভাই সকলে ও বোন সকলে এসো একত্রে আনন্দ করি’। লেঃ লেঃ লেঃ.. লেঃ .. মংরো মংরোঃ.. মংরো মংরো, পেং পাদাউশে পোওয়াংরে লা সাংগ্রে, ক্যালোঃ মংরো প্যয়ে, (রাঙা পুস্প শোভিত এ মাসে আত্মহারা হয় সাংগ্রের আনন্দে এই শুভ দিনে তুলনাহীন তুমি, পেন্ডেলে বসে স্বাগত জ্বানাও, সাংগ্রেং এর জল হীম শীতল সুন্দরী তুমি অপূর্ব) শহরের অলিতে-গলিতে এই ধরনের গান গেয়ে জেলার মারমা সম্প্রদায় এক অপরকে পানি বর্ষন করে পানি উৎসবে মেতে উঠে।

এই ব্যাপারে বান্দরবান শহরের বাসিন্দা মেসাইংউ মার্মা বলেন, করোনা মহামারীর কারণে গত দুই বছর সাংগ্রাই উৎসবে আনন্দ করতে পারিনি, এই বছর খুব আনন্দ করব আমরা।

এক একজন তরুণ একজন তরুণীর দেহে জল ছিটায়। আর ঐ তরুণীও ঐ তরুণের দেহে পাল্টা জল ছিটিয়ে তার প্রতি উত্তর দেয়। এভাবে তরুণ-তরুণীদের পানি ছিটানো মধ্য দিয়ে মৈত্রী পানি বর্ষণ উৎযাপন করে। ১৫ এপ্রিল ধর্ম দেশনা শ্রবণ অনুষ্ঠানের মধ্যে দিয়ে অনুষ্ঠানের ইতি টানা হবে।

বান্দরবান জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ক্যশৈহ্লা বলেন, পাহাড়ের বিভিন্ন সম্প্রদায় যে নামেই বর্ষবরণ করেনা কেন, দেশ ও দশের কল্যানে আমরা প্রার্থনার মধ্যে দিয়ে নববর্ষকে বরণ করি।

পাহাড়ের চাকমা সম্প্রদায়রা এই উৎসবকে বিঝু, মারমা’রা সাংগ্রাই এবং ত্রিপুরারা বৈসু বা বৈসুক বলে। ত্রিপুরাদের বৈসুর (বৈ), মারমাদের সাংগ্রায়ের (সা) চাকমাদের বিঝুর (বি) থেকে “বৈসাবি”। মারমা সম্প্রদায়ের কাছে বর্ষবরণের এই উৎসব “সাংগ্রাই” নামে পরিচিত।

আরও পড়ুন