যাঁদের মনে মুক্তিযুদ্ধের প্রতি মায়া নেই, তাঁরা এদেশে বসবাস করতে পারেন না : কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা

যাঁদের মনে মুক্তিযুদ্ধের প্রতি, জাতির জনকের প্রতি কোন মায়া নেই; বাংলাদেশের সুখে যাঁদের গায়ে শিহরণ জাগে না, সেসব মানুষ পাকিস্তানের দোসর। তাঁদের এদেশে বসবাস করার কোন অধিকার নেই। তাঁদের এই দেশ ছেড়ে চলে যাওয়া উচিত। খাগড়াছড়ির সংসদ সদস্য ও প্রতিমন্ত্রী পদ-মর্যাদায় শরণার্থী পুর্নবাসন টাস্কফোর্স-এর চেয়ারম্যান কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা এসব কথা বলেন।

খাগড়াছড়ি জেলা আওয়ামীলীগের প্রবীন এই সভাপতি বলেন, যেই বঙ্গবন্ধু জীবনের তিনভাগের দুই এ জাতির-এ দেশের স্বাধীকারের জন্য কারাভোগ করেছেন, সেই মহান মানুষকে দেশ স্বাধীনের মাত্র সাড়ে তিন বছরের মাথায় সপরিবার-নিকটাত্মীয়সহ হত্যাকারীরা ইতিহাসের নির্মম-নিষ্ঠুর অমানুষ। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী-বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা’র নেতৃত্বে এদেশের জনগণ সেই অপশক্তিকে মোকাবিলা করে চলেছে।

তিনি আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে খাগড়াছড়ি জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে শিশু একাডেমি হলে জেলা প্রশাসন আয়োজিত্ব ‘বীর মুক্তিযোদ্ধা ও শহিদ মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের সদস্য’-দের সংবর্ধনা,আলোচনা সভা ও বিষয়ভিত্তিক প্রতিযোগিতার পুরস্কার প্রদান সভায় প্রধান অতিথি’র বক্তব্যে এসব কথা বলেন।

জেলা প্রশাসক প্রতাপ চন্দ্র বিশ্বাস’র সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় বিশেষ অতিথি’র বক্তব্য রাখেন, পুলিশ সুপার মো: আব্দুল আজিজ, জেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি বর্ষীয়াণ মুক্তিযোদ্ধা রণ বিক্রম ত্রিপুরা এবং জেলা আওয়ামী লীগের সা: সম্পাদক ও খাগড়াছড়ি পৌর সভার মেয়র নির্মলেন্দু চৌধুরী।

সভায় বিজয়ের সুবর্ণজয়ন্তী, বঙ্গবন্ধু’র জীবন ও কর্ম এবং ভবিষ্যতের বাংলাদেশ নিয়ে মূল প্রবন্ধ পাঠ করেন, খাগড়াছড়ি সরকারি কলেজের শিক্ষক জাকির হোসেন।

NewsDetails_03

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে পুলিশ সুপার মো: আব্দুল আজিজ বলেন, দেশের শ্রেষ্ঠ সন্তান বীর মুক্তিযোদ্ধাদের এবং শহিদ পরিবারদের প্রতি যথাযথ সম্মান প্রদর্শন করা আমাদের সকলের নৈতিক দায়িত্ব। মহান মুক্তিযুদ্ধে বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনীর সকল বীর যোদ্ধাদের এবং শহিদ পরিবারকেও আমরা প্রতিবছর শ্রদ্ধার সাথে সম্মান জানাচ্ছি।

প্রবীন রাজনীতিক ও অবিভক্ত পার্বত্য চট্টগ্রামের বিএলএফ (মুজিব বাহিনী)-এর কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা রণ বিক্রম ত্রিপুরা আক্ষেপ করে বলেন, জাতির পিতার স্বপ্ন ছিল বৈষম্যহীন-ন্যায়নিষ্ঠ একটি রাষ্ট্রব্যবস্থা। তাঁর মোহনীয় সেই আহ্বানেই মেহনতি মানুষ-কৃষব-শ্রমিক-দিনমজুররা মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলো। তাঁদের ভাগ্য ফেরাতে হলে, বঙ্গবন্ধু’র সোনার বাংলা বিনির্মাণ করতে হলে; সোনার মানুষ লাগবে। বিজয়ের সুবর্ণজয়ন্তীতে এসে মনে হচ্ছে, দেশে এখনো সেনার মানুষের ঘাটতি রয়ে গেছে। প্রত্যাশা এখনো অপূরনীয় রয়ে গেছে।

আরেক বিশেষ অতিথি পৌর মেয়র নির্মলেন্দু চৌধুরী বলেন, বর্তমান প্রজন্মের একটি অংশ মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ভুলে উল্টো পথে ধাবিত হচ্ছে। ক্রীড়ানুষ্ঠানে তারা পাকিস্তানের পতাকা নিয়ে উম্মাদনা প্রকাশ করছে, তাদেরকে দেশের প্রকৃত ইতিহাস ও চেতনা সর্ম্পকে ধারণা দিতে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোকে আরো সচেতন হবে।

সভাপতির বক্তব্যে জেলা প্রশাসক প্রতাপ চন্দ্র বিশ্বাস বলেন, প্রধানমন্ত্রী ১৯৯৬ সালের ক্ষমতায় এসেই সকল বীর মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য মাসিক সম্মানীর বন্দোবস্ত করেন। সেই ধারাবাহিকতা এখনো অব্যাহত আছে। দেশের সকল খাতে এখন অগ্রগতির প্রতিচ্ছবি দৃশ্যমান। এটি এগিয়ে নিতে হলে দক্ষ মানবসম্পদ হিশেবে নতুন প্রজন্মকে গড়ে উঠতে হবে।
সভাশেষে মঞ্চে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের এবং বিজয় দিবস ২০২১ উপলক্ষে আয়োজিত বিষয়ভিত্তিক শিশু প্রতিযোগীদের বিজয় স্মারক তুলে দেয়া হয়।

পরে দেড়’শ জন নানা বয়সী শিল্পী’র পরিবেশনায় মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান উপভোগ করেন উপস্থিত সকলে।

আরও পড়ুন