রাঙামাটিতে শিশু শিক্ষার্থীকে ধর্ষণে ব্যর্থ হয়ে হত্যাকারি প্রাইভেট শিক্ষককে মৃত্যু না হওয়া পর্যন্ত ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদন্ড কার্যকরের আদেশ দিয়েছেন আদালত।
আজ বৃহস্পতিবার রাঙামাটির নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক এ.ই.এম. ইসমাইল হোসেন এর আদালত আসামী ও ভিকটিমের পিতা-মাতাসহ আইনজীবি, পুলিশ ও গণমাধ্যমকর্মীদের উপস্থিতিতে এই রায়ের আদেশ প্রদান করেন। প্রথমবারের মতো রাঙামাটিতে এই ধরনের মামলায় ফাঁসির আদেশ দিয়েছেন ট্রাইব্যুনালের বিচারক।
মামলার এজাহারে বলা হয়, রাঙামাটির চন্দ্রঘোনা থানাধীন ২নং রাইখালী ইউনিয়নের ৫নং ওয়ার্ডের পূূর্ব কোদালা এলাকার বাসিন্দা সাথুই অং মার্মার ৯ বছর বয়সী তৃতীয় শ্রেণীর শিক্ষার্থী শিশু কন্যা মিতালী মার্মাকে স্থানীয় শিক্ষক অংবাচিং মার্মা প্রকাশ আবাসু প্রকাশ বামং এর কাছে প্রাইভেট পড়াতে দেন। ঘটনার দিন ২০১৯ সালের ২রা ফেব্রুয়ারী ভিকটিম প্রাইভেট পড়াতে পাঠালে অন্য শিক্ষার্থীদের বাড়িতে পাঠিয়ে দিয়ে ভিকটিম শিক্ষার্থী মিতালী মার্মাকে জোরপূর্বক ধর্ষনের চেষ্ঠা করলে সে চিৎকার করতে থাকে। তখন ভিকটিমের মুখ চেপে ধরে গলায় সুতলি ও কাপড় পেঁচিয়ে ফাঁস দিয়ে শ্বাসরোধ করে তাকে নির্মমভাবে হত্যা করে বস্তায় ভরে ঘরের মাচায় তুলে রাখে হত্যাকারি শিক্ষক অংবাচিং মার্মা।
এদিকে ভিকটিমের পরিবার তাকে খুঁজতে আসলে তাকে অতিরিক্ত ৩০ মিনিট পড়িয়ে ছুটি দিয়ে দিয়েছে বলে শিক্ষক অংবাচিং মার্মা জানালেও তার কথায় সকলের সন্দেহ হয়। পরবর্তীতে আসামীকে নজরদারিতে রাখে এলাকাবাসী। ৩রা ফেব্রুয়ারীতে ভোর ৪টার সময় বস্তায় ভরে ভিকটিমের মরদেহ নিয়ে যাওয়ার সময় আসামীকে হাতেনাতে আটক করে গণপিটুনি দিয়ে থানা পুলিশের নিকট সোপর্দ করে স্থানীয়রা।

এই ঘটনায় ভিকটিমের পিতা বাদি হয়ে চন্দ্রঘোনা থানা অংবাচিং মার্মাকে আসামী করে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন ২০০০ এর ৯(২) ও তৎসহ পেনাল কোড ১৮৬০ এর ২০১ ধারায় মামলা দায়ের করেন।
বৃহস্পতিবার (১৩ জুন) এই মামলার রায় ঘোষণার সময় আদালত তার পর্যবেক্ষণে বলেন, এই মামলায় তিনজন ডাক্তারসহ মোট ২০ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ করা হয়েছে। নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন ২০০০ এর ৯(৪)(খ) ধারায় সর্বোচ্চ শাস্তি ১০ বছরের সশ্রম কারাদন্ড এবং সর্বনিন্ম শাস্তি ৫ বছরের সশ্রম কারাদন্ড এবং তৎসহ অর্থদন্ড। ১৮৬০ সালের পেনাল কোড এর ৩০২ ধারার অপরাধের সাজা মৃত্যুদন্ড বা যাবজ্জীবন কারাদন্ড ও তৎসহ অর্থদন্ড। এই পর্যায়ে আদালতের সামনে প্রশ্ন হলো অপরাধের গুরুত্ব বিবেচনায় আসামীর সাজার ক্ষেত্রে অনুকম্পা পেতে পারে কিনা?
আদালত তার পর্যবেক্ষনে বলেন, দেখা যায় ঘটনার সময় ভিকটিমের বয়স ছিলো ৯ বছর। আর আসামীর বয়স ৪৬ বছর। আসামী সকালে ধর্ষণের চেষ্ঠা করে ব্যর্থ হয়ে ভিকটিমকে হত্যা করে এবং তার লাশ ঘরের মাচায় তুলে রাখে। এরপর ভিটটিমের লাশ কিভাবে গুম করা যায় তা চিন্তা করার জন্য আসামী ঠান্ডা মাথায় কমপক্ষে ১৭ থেকে ১৮ ঘন্টা সময় অতিবাহিত করেন। তাই আসামী অংবাচিং মার্মা প্রকাশ আবাসু প্রকাশ বামং মার্মা (৪৬)কে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন ২০০০ এর ৯(৪)(খ) ধারায় ১০ বছরের সশ্রম কারাদন্ডের পাশাপাশি ৫০ হাজার টাকা জরিমানা, তৎসহ পেনাল কোড ১৮৬০ এর ৩০২ ধারায় এক লাখ টাকা জরিমানা ও মৃত্যু না হওয়া পর্যন্ত ফাঁসির দড়িতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদন্ড কার্যকর করার নির্দেশ প্রদান করেছেন আদালত। জরিমানার অর্থ আদায় করে ভিকটিমের পরিবারকে দেওয়ার জন্য আদেশে বলা হয়।
রায়ের পর আদালতে উপস্থিত তাৎক্ষনিক প্রতিক্রিয়ায় ভিকটিমের পিতা ও মামলার বাদী সাথুই অং মার্মা বলেন, এই মামলায় নিজেরা ন্যায় বিচার পেয়েছি। আমরা চাই এই রায় দ্রুত কার্যকর করা হোক।
এদিকে মামলার রায় সমাজের জন্য একটি দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে এবং ভিকটিমের পরিবার ন্যায় বিচার পেয়েছে বলে জানিয়েছেন রাষ্ট্রপক্ষের স্পেশাল পিপি অ্যাডভোকেট সাইফুল ইসলাম অভি।