রাঙামাটিতে শেষ ধাপের ইউপি নির্বাচন কাল

NewsDetails_01

রেকর্ড সংখ্যক আওয়ামী লীগ নেতাকে অব্যাহ‌তি, দলে বিদ্রোহী প্রার্থীর ছড়াছ‌ড়ি, সশস্ত্র সন্ত্রাসীদের অভয়ারণ্য ও প্রশাসনের স‌র্বোচ্চ নিরাপত্তা ব্যবস্থার মধ্য দিয়ে কাল ৭ ফেব্রুয়ারী (সোমবার) রাঙামা‌টিতে শেষ ধাপের নির্বাচন অনু‌ষ্ঠিত হতে যাচ্ছে।

শেষ ধাপের এই ইউপি নির্বাচন যতই ঘনিয়ে আসছে, ততই বাড়ছে আতঙ্ক আর ভয়। জেলায় আগের সবকটি ইউপি নির্বাচন মসৃন পথে হাটলেও, বাঘাইছড়ি, জুরাছড়ি ও লংগদু উপজেলায় শেষ ধাপের নির্বাচনের দিকে সবাই তাকিয়ে আছে। প্রত্যাশা করছেন, শেষটা যেন ভালো’র পথে হাটে।

নির্বাচনে ঘুরেফিরে আলোচনায় থাকছে, ২০১৯ সালের ১৮ মার্চ রক্তাক্ত বাঘাইছ‌ড়ি ও ১৯ মার্চ বিলাইছ‌ড়ি। দুর্গম জঙ্গলে ঘুমন্ত হায়েনা নামক সশস্ত্র সন্ত্রাসীদর উপুর্যপরি গুলির বর্ষনে নিভে গেল ৮টি তরতাজা প্রাণ। যারা নির্বাচনী দায়িত্ব শেষ করে ফিরছিলেন রিটার্নিং অফিসারের কার্যালয়ে। দিনভর উৎসবমূখর পরিবেশে ভোট গ্রহণ শেষে রাতে বাঘাইছড়িবাসীকে দেখতে হলো রক্তাক্ত জনপদ। ২০১৯ সালে ১৮ মার্চ রাঙামাটি জেলার দুর্গম বাঘাইছড়ি উপজেলা নিবার্চনের দিন ওই হত্যাকান্ডের ঘটনা ঘটে। বাঘাইছড়ি উপজেলার কংলাক কেন্দ্র থেকে ব্যালট পেপার বহনকারী গাড়ি নিয়ে প্রিজাইডিং অফিসার আব্দুল হান্নান আরবের নেতৃত্বে আনসার-ভিডিপি সদস্যরা বাঘাইছড়ি উপজেলা পরিষদ কার্যালয়ে ফিরছিলেন। নয়কিলো এলাকায় একদল সশস্ত্র সন্ত্রাসী ব্যালট ছিনতাইয়ের উদ্দেশে ওই গাড়িটিকে লক্ষ্য করে ব্রাশফায়ার করলে ঘটনাস্থলে প্রিজাইডিং অফিসারসহ ৮ জন নিহত হন। নির্বাচনে সহিংসতায় এত সংখ্যক নিহতের ঘটনা রাঙামাটিতে প্রথম।

এর এক‌দিন পরই ১৯ মার্চ বিলাইছ‌ড়ি উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপ‌তি‌ সুরেশ কান্তি তঞ্চঙ্গ্যাকে গু‌লি করে হত্যা করে সন্ত্রাসীরা। উপ‌জেলা নির্বাচন শেষ ক‌রে প‌রিবার নিয়ে সুরেশ কান্তি তঞ্চঙ্গ্যা আলিখ্যিয়ংয়ের নিজ বাড়ি থেকে ইঞ্জিনচালিত নৌকায় (কাপ্তাই লেক হয়ে) বিলাইছড়ি সদরে যাচ্ছিলেন তি‌নি। প‌থিম‌ধ্যে সন্ত্রাসীরা তাকে ধরে নিয়ে গি‌য়ে গু‌লি করে হত্যা করে।

দিন দু‌টির কথা মনে পড়লে কেউ আর উৎসবমূখর পরিবেশের নির্বাচনে অংশ নেয়ার কথা ভাবতেই পারেন না এখন। আগামী ৭ ফেব্রুয়ারী ৭ম ধাপে বাঘাইছড়ির ইউপি নির্বাচন। শংকা কাজ করছে নির্বাচনে দায়িত্বপ্রাপ্তদের মধ্যে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অনেকে জানিয়েছেন, ২০১৯ সালের ঘটনার পর নির্বাচন এলেই আতংকে থাকি। আবার কি হয়। এমনিতে বাঘাইছড়ি উপজেলার দুর্গম ইউনিয়নগুলো স্বশস্ত্র সন্ত্রাসী সংগঠনগুলোর অভয়ারণ্য। নির্বাচনে দায়িত্ব না নেওয়ার জন্য পরিবার থেকেও বারবার নিষেধ করা হচ্ছে। তারা জানিয়েছেন, নির্বাচনে দায়িত্বপ্রাপ্ত সকলেরই নিশ্চিদ্র নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিত।

NewsDetails_03

তথ্যমতে, বাঘাইছড়ি উপজেলায় গত দুইবছরে স্বশস্ত্র সন্ত্রাসীদের বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়েছেন ১০ জন। এর আগের বছর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে অতর্কিত গুলি বর্ষনে প্রিজাইডিং অফিসারসহ ৮ জন নিহত হন। এছাড়াও পাহাড়ের চার আঞ্চলিক সংগঠনের অভয়ারণ্য বাঘাইছড়িতে শক্তি প্রদর্শন জানান দিতে প্রায় সময় দফায় দফায় চলে বন্দুকযুদ্ধ।

এদিকে, ‌তিন উপজেলার ২টিতে বিদ্রোহী প্রার্থী‌তে টালমাটাল আওয়ামী লীগ। দলের সিদ্ধান্ত অমান্য ক‌রায় ইতোমধ্যে লংগদু ও বাঘাইছ‌ড়ি উপজেলা ৩১ আওয়ামী লীগ নেতাকমী‌কে অব্যাহ‌তি দিয়েছে দলের নী‌তি‌নির্ধারনী বৈঠকে। দলের প্রার্থীর পাশাপা‌শি বিদ্রোহী ও পাহাড়ী সংগঠ‌নের স্বতন্ত্র প্রার্থীর জন‌প্রিয়তাও উ‌নিশে-‌বিশে থাকায় শেষ ধা‌পের এই নির্বাচ‌ন জেলার আলোচনার কেন্দ্র‌বিন্দুতে।

জেলার তিন‌টি উপজেলার ইউপি নির্বাচন নিয়ে এখন ব্যতিব্যস্ত প্রশাসনের কর্তাব্যক্তিরা। ইউপি নির্বাচনের শেষ ধাপটাকে শেষ ভালো যার সব ভালোকে মাথায় নিয়ে দফায় দফায় আইনশৃঙ্খলা সভা করছেন সংশ্লিষ্টদের নিয়ে। সেনাবাহিনী ও বিজিবির সহযোগিতায় বাঘাইছড়ি উপজেলার ইউপি নির্বাচনে যেকোন মূল্যে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ঠিক রাখতে চায় জেলা ও পুলিশ প্রশাসন।

রাঙামাটি জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অপরাধ) মাহমুদা বেগম জানান, আগের সবক‌টি নির্বাচন সুষ্টু ও সুন্দর ভাবে সম্পন্ন করতে পেরেছি। আশা রাখ‌ছি, শেষেরটা ভালো হবে। বাঘাইছ‌ড়িকে স‌র্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে তিন‌টি উপজেলাতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় ক‌ঠোর থাক‌বে প্রশাসন। ঝু‌কিপুর্ণ কেন্দ্র বা এলাকা কয়েক স্তর নিরাপত্তা বলয়ের চাদরে ডেকে রাখা হবে।

রাঙামা‌টির সি‌নিয়র ‌জেলা নির্বাচন অ‌ফিসার মোঃ শ‌ফিকুর রহমান জানান, জেলার বাঘাইছ‌ড়ি, জুরাছ‌ড়ি ও লংগদু উপ‌জেলায় ১৯ টি ইউ‌পিতে নির্বাচন অনু‌ষ্ঠিত হবে। ১৭৬টি কেন্দ্রে ভোট নেয়া হবে। এরম‌ধ্যে জুরাছ‌ড়ির দু‌টি ইউ‌নিয়‌নে নির্বাচন স্থ‌গিত রাখা হয়েছে। নির্বাচন অনুষ্ঠা‌নের সব প্রস্তু‌তি সম্পন্ন করা হ‌য়ে‌ছে। ২৭টি হে‌লিস‌টি কেন্দ্রগু‌লো‌তে হে‌লিকপ্টার ব্যবহার করা হ‌চ্ছে।

‌জেলার তিন‌টি উপজেলার ১৯টি ইউ‌পিতে চেয়ারম্যান পদে ৬৩ জন, সাধারন সদস্য ৪৬৫ জন ও সংর‌ক্ষিত পদে ১৬৩ জন প্রার্থী নির্বাচনে অংশ নি‌চ্ছেন।

আরও পড়ুন