নবগঠিত অন্তর্বর্তীকালীন রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদে চারটি উপজেলার প্রতিনিধি না রাখার প্রতিবাদে সংবাদ সম্মেলন করা হয়েছে।
আজ মঙ্গলবার রাঙামাটি শহরের স্থানীয় একটি রেস্টুরেন্টে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। এতে সংশ্লিস্ট উপজেলাসমূহের পক্ষে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন অ্যাডভোকেট রাজিব চাকমা।
লিখিত বক্তব্যে তিনি জানান,আপনারা ইতিমধ্যে অবহিত হয়েছেন যে, গত ০৭ নভেম্বর ২০২৪খ্রিষ্ট্রাব্দ পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সহকারী সচিব জনাব তাছলিমা বেগম স্বাক্ষরিত এক প্রজ্ঞাপনে (নং ২৯.০০.০০০০.০০০.২১৪.১৮.০০২২.২৪.-১১৯) অর্ন্তবর্তীকালীন রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদ পূর্নগঠন করা হয়। রাঙামাটিস্থ ১০টি উপজেলার মধ্যে শুধুমাত্র ৬টি উপজেলা মধ্যে ১৫ জন প্রতিনিধিদের নিয়োগ দিয়ে কাউখালী, বরকল, জুরাছড়ি ও রাজস্থলী উপজেলার কোন প্রতিনিধি না রেখে এলাকাবাসীর সাথে চরম বৈষম্যমুলক আচরন করায় আমরা মর্মাহত। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য যে, পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রনালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত উপদেষ্টা রাঙামাটি সদর উপজেলা হতে ৯ জন সদসকে রেওয়াজ বর্হিভুতভাবে নিয়োগ প্রদান করে স্বজনপ্রীতি ও ফ্যাসিস্ট মানসিকতাকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। অধিকন্তু পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির মাধ্যমে এলাকাবাসীর অর্জিত আইনগত অধিকার হরন করেছেন।
অথচ আমাদের প্রত্যাশা ছিলো, গত ৫ আগষ্ট ২০২৪ খ্রিষ্ট্রাব্দ ছাত্র জনতার আন্দোলনের পর নতুন বাংলাদেশে যে ইতিবাচক পরিবর্তন এসেছে, সারা দেশের মতো রাঙামাটি পার্বত্য জেলায়ও বৈষম্য মুক্ত পরিবেশ ফিরিয়ে আনা হবে। জেলার দশ উপজেলা থেকে দল নিরপেক্ষ ও এলাকার উন্নয়নে নিবেদিত এমন গ্রহনযোগ্য ব্যক্তিদের নিয়ে রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদ পূর্ণগঠন করা হবে।
তিনি জানান, দুঃখ জনক হলেও সত্যি এই প্রথম বারের মতো জেলার অতীব গুরুত্বপূর্ন চারটি উপজেলা কাউখালী, বরকল, জুরাছড়ি ও রাজস্থলী থেকে কোন প্রতিনিধি না রেখে উপজেলাবাসীকে বঞ্চিত করে বৈষম্যমুলক রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদ পূর্ণগঠন করা হয়েছে। যাহা রাঙামাটি জেলাব্যাপী জনগণের মধ্যে ব্যাপক হতাশা ও ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদে যাদেরকে নিয়োগ দেয়া হয়েছে বেশির ভাগ সদস্য জন বিচ্ছিন্ন এবং পতিত সরকারের দলীয়/সুবিধাভোগী । এমন ও আছে একই পরিবারের একাধিক সদস্য (ভাবী ও দেবর) এবং হত্যা মামলার চাজর্শীটভুক্ত পলাতক আসামী রয়েছে। যার দরুন বর্তমান অন্তবর্তীকালীন সরকারের সুনাম দারুনভাবে ক্ষুন্ন হচ্ছে। তাই পুর্নগঠিত অন্তর্বতীকালীন রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদের মনোনীত সদস্যদের নিয়োগ বাতিলপুর্বক কাউখালী, বরকল, জুড়াছড়ি ও রাজস্থলী উপজেলার প্রতিনিধিত্বমুলক সদস্য নিয়োগ দিয়ে অন্তর্বতীকালীন রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদ পুর্নগঠন করে নতুনভাবে প্রজ্ঞাপন জারীর জন্য অর্ন্তভর্তিকালীন সরকারের প্রতি জোর দাবী জানাচ্ছি।
হত্যা মামলার আসামি সদস্য : নানিয়ারচর উপজেলা থেকে মনোনিত সদস্য প্রনতি রঞ্জন খীসা বুড়িঘাট ইউনিয়নের সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান ছিলেন। তবে বর্তমানে এলাকায় নিয়মিত থাকেন না বলে জানা গেছে। তিনি হত্যা মামলার চার্জশীট ভুক্ত পলাতক আসামী। তার বিরুদ্ধে ফৌজদারী মামলা জিআর নং ৩১৯/২০১৮ রাঙামাটির আদালতে বিচারাধীন রয়েছে।
অভিযোগ বরুন বিকাশ দেওয়ানের বিরুদ্ধেও : সাবেক এই ফুটবল খেলোয়ার বিগত ফ্যাসিষ্ট সরকারের স্থানীয় সাংসদ দীপংকর তালুকদারের একান্ত আস্থাভাজন হিসেবে পরিচিত। ফ্যাসিষ্ট সরকারের সুবিধাভোগী হিসেবে দীর্ঘদিন যাবত রাঙ্গামাটি জেলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারন সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। দীপংকর তালুকদার তাকে জাতীয় পুরষ্কারের ও ব্যবস্থা করে দেয়ার অভিযোগ রয়েছে। তার বিরুদ্ধে রাঙামাটিতে মুক্তিযোদ্ধা শহীদ আব্দুস শুক্কুর স্টেডিয়ামকে শেখ রাসেল মিনি স্টেডিয়াম প্রকল্প বাস্তবায়ন ও নামকরন করে অর্থ আত্মসাতের অভিয়োগ রয়েছে।
অন্যারা যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ : নতুন অর্ন্তবর্তীকালীন পরিষদে মনোনীত রাঙাবী তঞ্চঙ্গ্যা হলেন ফ্যাসিবাদ আওয়ামী সরকার মনোনীত সাবেক অর্ন্তবর্তীকালীন জেলা পরিষদের সদস্য ও দুর্নীতিবাজ রাঙামাটি জেলা আওয়ামীলীগের সাংষ্কুতিক সম্পাদক রেমলিয়ানা পাংখোয়ার বড় ভাই লাল ছোয়াক পাংখোয়ার স্ত্রী,রয়েছে তারই ভাতিজা ড্যানিয়েল লাল মুয়ান সাং পাংখোয়া। এছাড়াও রাঙাবী তঞ্চঙ্গ্যা ও প্রতুল চন্দ্র দেওয়ান পার্বত্য উপদেষ্টা সুপ্রদীপ চাকমার সাবেক কর্মস্থলের (ইউএনডিপি) সহকর্মী। আরেক সদস্য দয়াল দাশ নানিয়ারচর উপজেলা আওয়ামীলীগের সাবেক সহসভাপতি ছিলেন।
সংবাদ সন্মেলনে অন্যান্যর মধ্যে উপস্থিত ছিলেন রাজস্থলী উপজেলা বাসীর পক্ষে অ্যাডভোকেট দীননাথ তঞ্চঙ্গ্যা, সত্য বিকাশ তঞ্চঙ্গ্যা,উথান মারমা, কাউখালী উপজেলা বাসীর পক্ষে, মোঃ জসিম উদ্দিন, ললিত চন্দ্র চাকমা, মোঃ তারা মিয়া, ললিত চন্দ্র চাকমা, বরকল উপজেলা বাসীর পক্ষে এমদাদ হোসেন ও পুলিন বিহারী চাকমা ও তংচংগ্যা সম্প্রদায়ের প্রতিনিধি রনজিত তংচংগা।