বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার মিয়ানমার সীমান্তের তুমব্রু ও বাইশফাঁড়ি সীমান্ত পয়েন্টের ওপারে মিয়ানমারের যুদ্ধ বিমান থেকে গোলা ছুড়ে সে দেশের আরকান আর্মি (এএ) সহ বিভিন্ন বিদ্রোহীদের দমনে। আর সেই গোলা ও গুলি বর্ষণের ঘটনায় মূলত আওয়াজের কারনে এপাড়ের স্থানীয়রা চরম আতংকে দিন পার করছে এখন।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, শুক্রবার (২৩ সেপ্টেম্বর) রাত পৌঁনে ১১টায় এ গোলা বষর্ণ করে মিয়ানমার সামরিক বাহিনী। স্থানীয় লোকজনের দাবী, রাত নামলেই শুরু হয় এই বাহিনীর তান্ডব। স্থানীয়দের রাতের ঘুম হারাম করে মিয়ানমারের সেনা বাহিনীর বিচরণ ও যুদ্ধ বিমানের গোলা এবং মর্টার শেল নিক্ষেপের বিকট শব্দে। আর সেই শেলের কারনে ভূমিতে কম্পনের কারনে তুমব্রু উত্তর পাড়ার নুর আহমেদ এর বাড়িসহ কয়েকটি বাড়ি ফাটল ধরে যায়।
তুমব্রু বাজার ব্যবসায়ী বদিউল আলম বলেন, প্রতিদিন নিত্য নতুন সংঘাতময় পরিস্থিতির সৃষ্টি করে মিয়ানমার বাংলাদেশ সীমান্তের পরিবেশ বেশ জটিল করছে।
তিনি আরো বলেন, তারই ধারাবাহিকতায় শুক্রবার রাত পৌঁনে ১১টায় রাখাইনের মংডু জেলার উত্তরে বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্ত পিলার ৩৭, ৩৮, ৩৯ এলাকায় মিয়ানমার বিমান বাহিনীর ২টি যুদ্ধ বিমান হতে ভারী অস্ত্রের গোলা বর্ষণ করে সে দেশে। এর একটি বিমান মিয়ানমার থেকে এসে তুমব্রু পয়েন্টের জিরো লাইনের সোজা উপর দিয়ে মর্টার শেলের গোলা বর্ষন করে মিয়ানমারে ফিরে যায়। যাতে করে তুমব্রু বাজার, কোনার পাড়া, মধ্যম পাড়া ও উত্তর পাড়ার বসতিতে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। তবে এ ঘটনায় মিয়ানমারের অভ্যন্তরে হতাহতের ঘটনা ঘটলেও বাংলাদেশে হতাহতের কোন ঘটনা ঘটেনি।
এছাড়া নাম প্রকাশ না করার শর্তে সীমান্তে টহলরত বিজিবির কর্মকর্তা জানান, ২৪ সেপ্টেম্বর শনিবার সকাল ৭ টার দিকে মিয়ানমার সামরিক বাহিনীর যুদ্ধ বিমান ৪০/৪১ সীমান্ত পিলার এলাকায় টহল দেয় এবং গোলা নিক্ষেপ করে।
তুমব্রু বাজার সার্বজনীন দুর্গা মন্দির কমিটির সভাপতি রুপলা ধর জানান, মিয়ানমার সীমান্ত ঘেষা তুমব্রুর ওপারের ক্যাম্প থেকে শনিবার সকাল ১০ টায় সে দেশের অভ্যন্তরে একটি মর্টার শেল নিক্ষেপ করে, বিশেষ করে শিশু ও বৃদ্ধরা এই আওয়াজে আতংকে থাকে।
ঘুমধুম ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আজিজ জানান, যুদ্ধ বিমান জিরো পয়েন্ট দিয়ে রাতের বেলা কয়েকটি গোলা নিক্ষেপ করে মিয়ানমারের অভ্যন্তরে। তবে এতে বাংলাদেশের কোন ধরনের ক্ষয়ক্ষতির বিষয়ে খবর পাওয়া যায়নি।
প্রায় প্রতিদিন মর্টার শেল নিক্ষেপ ও যুদ্ধ বিমান মিয়ানমারের আকাশে বিচরণ করার কারনে ঘুমধুম বাজারের ব্যবসায়ীদের কাছে বিষয়টি কিছুটা সহনশীল হলেও স্থানীয় চাকমা ও তংচঙ্গা নৃ-গোষ্টির লোকজন আতঙ্ক গ্রস্থ হয়ে পড়ে।
বাইশফাঁড়িও উত্তরপাড়ার থেকে পরীক্ষার কেন্দ্রে এসএসসি পরীক্ষা দিতে যাওয়া আয়সা বেগম বলেন, তারা ভয়ে ভয়ে বাড়ি থেকে বের হয়েছে। কেননা রাতে মিয়ানমারের যুদ্ধ বিমান থেকে গোলার শব্দ তাদের আতংকিত করলেও কিছুটা সহনীয় ছিলো। কিন্তু শনিবার সকালে গোলাগুলির আওয়াজের মধ্যে কুতুপালং উচ্চ বিদ্যালয়ে পরীক্ষা কেন্দ্রে পরীক্ষা দিতে যাওয়ার সময় অনেক ভয় পেয়েছি।
তুমব্রু কেন্দ্রিয় জামে মসজিদের খতিব মৌলানা নুরুল আজিম বলেন, গোলার আওয়াজে তার এবং তার মুসল্লীদের মনে চরম আতংক বিরাজ করে, মসজিদটির অবস্থন তুমব্রু সীমান্ত থেকে মাত্র দেড়শ গজ দূরত্বে অবস্থিত।
নো ম্যানস-ল্যান্ডে রোহিঙ্গা ক্যাম্পের নেতা দিল মোহাম্মদ জানান, আজকেও (শনিবার ২৪ সেপ্টেম্বর) বিকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত গুলির শব্দ পাওয়া গেছে। আসলে এ গুলি খেলার শেষ কবে হবে, তা আমাদের জানা নেই।
গত ২৮ আগষ্ট মিয়ানমার থেকে নিক্ষেপ করা ২টি মর্টার শেল অবিস্ফোরিত অবস্থায় ঘুমধুমের তমব্রু’র উত্তর মসজিদের কাছে পড়ে। গত ৩ সেপ্টেম্বর ঘুমধুম এলাকায় গোলা দুটি পড়ে এবং ৯ সেপ্টেম্বর একে ৪৭ এর গুলি এসে পড়ে, তবে গত ১৬ সেপ্টেম্বর মাইন বিস্ফোরণ ও গুলি-মর্টার শেল নিক্ষেপে ১জন নিহত ও ৫ জন আহতের ঘটনায় নো ম্যান্স ল্যান্ডে বসবাসরত রোহিঙ্গা ও স্থানীয়দের মধ্যে চরম ভীতি ছড়িয়ে পড়ে। আগামী অক্টোবর থেকে আরকান আর্মি (এএ) ও মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর মধ্যে সংঘাতের ঘটনা যেকোন সময়ের চেয়ে বেশি বাড়বে বলে আভাস দিয়েছে সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র।