রাষ্ট্রীয় সম্মাননা চান রাঙামাটির চিত্রশিল্পী রতিকান্ত তঞ্চঙ্গ্যা
পাহাড়ের চারুকলার অন্যতম কারিগর ধরা হয় তাকে। ব্যক্তিগত উদ্যোগে গড়ে তুলেছেন রাঙামাটি চারুকলা একাডেমী। সৃষ্টিশীল প্রতিভার স্বাক্ষর রেখে অসংখ্য গুনী চিত্রশিল্পী তৈরি করেছেন, যারা পরবর্তীতে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক ভাবে জিতেছেন অসংখ্য পুরষ্কার। নিজেও পেয়েছেন বহু সম্মাননা। নিজের প্রতিষ্ঠানে শয়ে শয়ে তৈরি হচ্ছে আরো প্রতিভাবান চিত্রশিল্পী। কথায় আছে, এমন যুগে কেউ কাউতে তুলে আনতে চান না। কিন্তু তার চিন্তাভাবনা বিপরীত এবং বিরল। তিনি চান, তাবৎ বিশ্বে দাপিয়ে বেড়াক তারই হাতে গড়া শিক্ষার্থীরা। এত সব প্রাপ্তির ভিড়ে বয়সের ভারে ন্যুহ মানুষটি চিরবিদায়ের আগে পেতে চান রাষ্ট্রীয় সম্মাননা।
রতি কান্তি তংচঙ্গ্যা। রাঙামাটি চারুকলা একাডেমীর প্রতিষ্ঠাতা ও অধ্যক্ষ। ৫৪ বছর ধরে ভালোবেসে ও মায়ায় পড়ে আছেন প্রতিষ্ঠানটি নিয়ে। বৃহস্পতিবার সকালে নিজের গড়া প্রতিষ্ঠানে সাংবাদিকদের ডেকে ভারাক্রান্ত হৃদয়ে নিজের জীবনের এতবছরের পথচলা, ত্যাগ তীতিক্ষা ও প্রাপ্তি অপ্রাপ্তির গল্প শোনালেন তিনি। প্রত্যাশা আর প্রাপ্তিতে হতাশা ঝেড়েছেন, চলতি বছর একুশে পদকে নাম না আসায়।
চিত্রশিল্পী রতিকান্তি তংচঙ্গ্যা বলেন, আমি শুধু চারুকলা একাডেমীই প্রতিষ্ঠা করিনি, পার্বত্য অঞ্চলের অধিবাসীদের কৃষ্টি ও সংস্কৃতি রক্ষায় মিনি যাদুঘর প্রতিষ্টা করেছি (তার অফিস কক্ষে সংরক্ষিত আছে প্রাচীন অমুল্য অনেক জিনিস)। কিন্তু অতীব দুঃখের বিষয় দীর্ঘ ৫৪ বছর ধরে পার্বত্য চট্টগ্রামে চারুকলায় অবদান রাখার পরও রাষ্ট্রীয়ভাবে স্বীকৃতি থেকে বঞ্চিত রয়েছি।
তিনি সদ্য একুশে পদক তালিকায় নাম আসা কনক চাঁপা চাকমাকে নিজের হাতে গড়া ছাত্রী দাবি করে বলেন, কনক চাঁপার জন্য অভিনন্দন ও আমি গর্বিত। তিনি আমার এবং আমার প্রতিষ্ঠানের নাম উজ্জল করেছেন।
প্রধানমন্ত্রীর নিকট তিনি আবেদন জানিয়ে বলেন, আমার জীবদ্দশায় রাষ্ট্রীয়ভাবে স্বীকৃতি স্বরুপ একুশে পদকে ভুষিত ও মর্যাদা প্রদান করা হলে প্রধানমন্ত্রীর নিকট কৃতজ্ঞ থাকব।
প্রসঙ্গতঃ চিত্রশিল্পী রতিকান্ত তঞ্চঙ্গ্যা ১৯৭৯ সালে রাঙামাটি শহরের কাঠালতলী এলাকায় ব্যক্তিগত উদ্যোগে চারুকলা একাডেমী প্রতিষ্ঠা করেন। শিক্ষার্থীদের যৎসামান্য ফি ও কয়েকজন উৎসাহী শিক্ষকদের স্বেচ্ছাশ্রমে ঠিকে আছে প্রতিষ্ঠানটি। চারুকলা শিল্পে বিশেষ অবদানের জন্য ১৯৬৬ সালে ডেপুটি কমিশনার, ১৯৭০ সালে ডেপুটি কমিশনার এইচটি ইমাম, ১৯৭৭ সালে রাঙামাটি সরকারী উচ্চ বিদ্যালয়, ১৯৭৯ সালে চাকমা সার্কেল চিফ, ১৯৮১ সালে বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতি, ১৯৮৪ সালে শিশু একাডেমীর পুরস্কার প্রাপ্ত হন।