রুমায় নতুন স্টেশন থেকে বাস সার্ভিস চালু

NewsDetails_01

আজ শুক্রবার সকাল সাড়ে সাতটায় রুমা থেকে বান্দরবান উদ্দেশ্যে বাস ছাড়ার মধ্য দিয়ে নতুন স্টেশন থেকে বাস সার্ভিস চালু হলো। তবে নতুন বাস স্টেশন ব্যবস্থাপনা নিয়ে রুমা বাজারে ব্যবসায়ী, সাধারণ মানুষ, যাত্রী ও চালকের মধ্যে দেখা দিয়েছে, মিশ্র প্রতিক্রিয়া।

এ প্রতিবেদক শুক্রবার দুপুরে সরে জমিনে দেখা গেছে, বেথেল পাড়াঘাট সংলগ্নে নতুন বাস স্টেশনে কয়েকটি বাস রয়েছে। কাউন্টারের দক্ষিণ দিকে কয়েকজন শ্রমিক ইট তোলা ও বিছানো কাজ করছে।

কাউন্টারের বারান্দায় দাঁড়িয়ে ছিলেন লাইনম্যান জাকির হোসেন। তিনি বলেন, নতুন কাউন্টারে পানির সরবরাহ, চেয়ার টেবিল এখনো ব্যবস্থা হয়নি। চালকসহ যাত্রীদের প্রকৃতির কাজ নিয়ে বিশেষ করে নারীদের বেশি সমস্যা দেখা দিচ্ছে। বিষয়টি উপজেলা প্রশাসনের দ্রুত হস্তক্ষেপ খুব জরুরী বলে মনে করছেন চালক ও যাত্রী সাধারণ।

চালক আমির হোসেন(৪৬) বলেন, নতুন স্টেশনে পার্কিংয়ে যথেষ্ট স্পেস থাকায় গাড়ি রাখার কোন অসুবিধা নাই। তবে কাউন্টারের আশপাশে কোন খাবার দোকান না থাকায় চালক যাত্রীদের ভোগান্তিতে পরছেন। দুপুর খাবার প্রায় দুই কিলোমিটার দূরে রুমা বাজারে গিয়ে খেয়ে আসতে হয়।

কাউন্টার ঘুরে দেখা গেছে, মিটার লাগানো থাকলেও বিদ্যুতের কোন সংযোগ নাই। বাস চালকের সহকারী সুলাইমান(৫৯) বলেন, চালাকদের জন্য রুম আছে, কিন্তু তা অপরিষ্কার। ঠিকাদারের লোকজন এখনো এসব কাজ ঠিক করেনি। কাজেই রাতে আমরা কোথায় থাকবো তা বলতে পারছি না।

এদিকে রুমা রুমা বাজারে ব্যবসায়ী প্রণব কান্তি দাস ও কাঞ্চন কর্মকার বলেন, বাস সার্ভিস নতুন স্টেশনে নিয়ে যাওয়ায় বাজারের পরিবেশ হু-হা আওয়াজ বন্ধ হয়ে যাবে। এখন থেকে বাজারের চিপা রাস্তায় বড় গাড়ি না থাকায় সাধারণ মানুষের চলাচলে নিরাপদ হবে। রুমা বাজার থেকে বড় গাড়ি, বাসগুলো সরিয়ে নিয়েছে। নতুন বাস স্টেশন চালু করায় উপজেলা প্রশাসনকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন চা-দোকানদার রতন সহ রুমা বাজারের ব্যবসায়িরা।

NewsDetails_03

রুমা বাজার আদর্শ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক উক্যসিং বলেন, বাসগুলো অন্যত্র সরিয়ে নেয়ায় বিশেষ করে বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের জন্য অনেক নিরাপদ হয়েছে। বিদ্যালয়ের গেটের সামনে গাড়ি ঘুরিয়ে নেয়া, পার্কিং ও থামানোর কারণে বাসের ফাঁক দিয়ে কোমলতি শিশুদের দৌড়াদৌড়ি, আসা-যাওয়া নিয়ে এতদিন ঝুঁকির মধ্যে ছিল। নতুন স্টেশনে বাসগুলো সরিয়ে নেয়ার ব্যবস্থা গ্রহণ করায় উপজেলা নির্বাহীর কর্মকর্তার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন এই শিক্ষক।

তিনি বলেন, এধরনের গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ শুধু আমি নয়, বিদ্যালয়ে পড়ুয়া শিক্ষার্থীদের অভিভাবক ও অন্য শিক্ষকেরাও খুশি হয়েছেন।

অন্যদিকে উপজেলা প্রশাসনের নির্ধারিত বাস ভাড়া বাড়িয়ে নিচ্ছে বলে অভিযোগ ওঠেছে লাইনম্যান জাকির এর বিরুদ্ধে। রুমা বাজারে স্থায়ী বাসিন্দা ও রুমা সদর ইউপির সাবেক মেম্বার স্বপন দাস অভিযোগ করেন, টিকেটে ১৪০ টাকা লিখলেও তার কাছ থেকে রুমা-বান্দরবান বাসভাড়া বাবদ ১৬০ টাকা আদায় করছেন- লাইনম্যান জাকির। তার মত অন্য যাত্রীদের কাছ থেকেও সেভাবে টাকা নিয়েছে কিনা তা যাচাই করতে পারেননি বলে জানান তিনি।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আতিকুর রহমান বলেন কাউন্টারের বিদ্যুৎ সংযোগ, পানি ব্যবস্থা ও যাত্রীদের বসার চেয়ার কিছুদিনের মধ্যে সব ব্যবস্থা হয়ে যাবে। রুমা বাজারে কোন বাস ঢুকতে পারবে না উল্লেখ করে তিনি বলেন, যথাসময়ে কাজ করার জন্য বিদ্যুৎ বিভাগ ও পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের সংশ্লিষ্টদের দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য এর মধ্যে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।

প্রসঙ্গত গত মঙ্গলবার (২৪ সেপ্টেম্বর) উপজেলা পরিষদের মাসিক সমন্বয় সভায় নতুন স্টেশন থেকে বাস সার্ভিস চালু বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করার পর আজ শুক্রবার থেকে বাস সার্ভিস চালুর বিষয়টি সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। ওই সময় বাসসহ অন্যান্য যানবাহন, বিশেষ করে রুমা বাজার থেকে ১নং সদরঘাট পর্যন্ত এই অংশের সড়কে যাত্রী ভাড়া নির্ধারণ করে দেন, উপজেলা প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ আতিকুর রহমান।

উল্লেখ্য যে, বেশ দীর্ঘ বছর রুমাসীর দাবির প্রেক্ষিতে পার্বত্য চট্টগ্রাম বোর্ড বান্দরবান ইউনিটের সার্বিক তত্ত্বাবধানে দেড় কোটি টাকার ব্যয়ে রুমা বাস টার্মিনাল নির্মাণ করা হয়। এটি উদ্বোধনের পর এতদিন অচল ও অব্যবহৃত ছিল। উদ্বোধনের প্রায় দুই বছর পর প্রাণ ফিরে পেল এ স্টেশন।

আরও পড়ুন