রুমায় শিক্ষকের বিরুদ্ধে স্বাক্ষর জাল করে টাকা উত্তোলনের অভিযোগ
বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা কমিটি (এসএমসি) ও স্থানীয়দের ভূয়া তথ্য ও স্বাক্ষর জাল করে বিদ্যালয় মেরামতের টাকা আত্মসাতের অভিযোগ পাওয়া গেছে এক শিক্ষকের বিরুদ্ধে । বান্দরবানের রুমা উপজেলায় বাঁচারদেও পাড়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে এই অভিযোগ উঠেছে।
বিদ্যালয় মেরামতের জন্য বরাদ্দকৃত টাকা ৩০ জুনের আগে উত্তোলন করে বদলি করিয়ে নিয়ে থেকে অন্যত্র চলে গেছেন বলে স্থানীয়রা জানিয়েছেন।
সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ও স্থানীয়রা জানিয়েছেন, ২০২৩ ২০২৪ অর্থবছরে ক্ষুদ্র মেরামতের আওতায় রুমা উপজেলায় প্রতি বিদ্যালয় বিপরীতে দুই লক্ষ টাকা করে মোট ৯টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অনুকূলে ১৮ লক্ষ টাকা বরাদ্দ প্রদান করে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। এর আওতায় রুমা সদর ইউনিয়নের বাচারদেও পাড়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নামেও বরাদ্ধ পায়-দুই লক্ষ টাকা।
বাচারদেও পাড়া প্রধান চিংপ্রু মারমা কারবারী বলেন, মেরামতের জন্য কত টাকা বরাদ্দ? তা প্রধান শিক্ষকের কাছে জানতে চেয়েছিলেন তিনি।
চিংপ্রু মারমার ভাষ্যমতে, প্রধান শিক্ষক মাম্যাসিং মারমা তাকে জানিয়েছেন- বিদ্যালয় মেরামতের জন্য শিক্ষা অফিস থেকে ৭০ হাজার টাকা বরাদ্দ পাওয়া গেছে। তারমধ্যে উত্তোলন করতে গিয়ে সরকারী ভ্যাট ছাড়াও উপজেলা শিক্ষা অফিসে আট হাজার টাকা দিতে হয়েছে। দুই লক্ষ টাকা বরাদ্দ পাওয়া গেলেও সঠিক বরাদ্ধের কথা পাড়ার পড়ুয়া ছেলে, অভিভাবক কিংবা এসএমসি’র কাউকে জানায়নি প্রধান শিক্ষক। ভুয়া মিথ্যা কথা বলে নিজের ইচ্ছেমতো পুরানো বিদ্যালয় ভবন থেকে ইট ভেঙ্গে কংকর বানিয়ে মাত্র ছয় ব্যাগ সিমেন্ট দিয়ে নামে মাত্র মেরামতের কাজ করেন। রেলিংতে দেয়া রংগুলো একমাস যেতে না যেতেই উঠে গেছে । ভালো করে মেরামতের কোন কাজই হয়নি। তাই বিষয়টি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও)র কাছে অভিযোগ দিতে এসেছেন বলে জানালেন, বারবারী চিংপ্রু মারমা। এ প্রতিবেদক তার সঙ্গে রুমা বাজারে কথা হয় গত সোমবার দুপুরে।
রংয়ের কাজ করেন বাবলু মারমা। তিনি বলেন, বিদ্যালয়টির রং করতে মোট এক লক্ষ ২০ হাজার টাকা প্রয়োজন। এখান থেকে তাকে মাত্র ১৫ হাজার টাকার কাজ করিয়েছেন প্রধান শিক্ষক। তাই এ কাজের মান ও স্থায়িত্ব আর কতটুকু হবে? এমন প্রশ্ন ছুড়েন তিনি।
এসএমসি’র সাবেক সভাপতি মংনিং মারমা (৪৭) বলেছেন, এক মেরামত করতে বরাদ্দ পাওয়ার কথা শুনার পর বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে প্রধান শিক্ষক তাঁকে (সাবেক সভাপতি) জানিয়েছেন,
শিক্ষা অফিসার খরচ কেটে নেয়ার পর অবশিষ্ট ৪০-৫০ হাজার টাকা দিয়ে মেরামতের কাজ করছেন। এর মধ্যে মিস্ত্রি খরচ গেছে ৩০ হাজার টাকা।
তার ভাষ্যমতে, মেরামত কাজের জন্য টাকা উত্তোলন করতে বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা কমিটি (এসএমসি) সভাপতি হিসেবে তার কোনো স্বাক্ষর নেয়া হয়নি । গত ৩০জনের আগে এ মেরামতের টাকা উত্তোলন করতে স্বাক্ষর জাল করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেন সাবেক সভাপতি মংনিং মারমা।
বিদ্যালয়ের নামে দুই লক্ষ টাকা বরাদ্দের কথা জানার পর অনেকে প্রধান শিক্ষক কর্তৃক মেরামত নিয়ে ব্যয়ের হিসাব করেছেন । তাদের হিসাব মতে মোট বরাদ্দ ২ লাখ টাকার মধ্যে মাত্র ৪০ থেকে ৫০ হাজার টাকা সব মিলে হয়েছে, অন্য টাকা প্রধান শিক্ষক আত্মসাৎ করেছেন বলে পারা প্রধান চিংপ্রু মারমা ও এসএমসি সভাপতি মংনিং মারমার অভিযোগ। তিনি বলেন, কাজটি করার আগে অভিভাবক ও এসএমসি সদস্যদের নিয়ে বিদ্যালয়ে মেরামত সংক্রান্ত কোনো সভাও করেননি প্রধান শিক্ষক।
বাচারদেউ পাড়া প্রধান চিংপ্রু মারমা কারবারী ও এসএমসি’র সাবেক সভাপতি অভিযোগের
বিষয়টি জানতে চাইলে স্বাক্ষর জাল করে টাকা উত্তোলনের কথা অস্বীকার করেন প্রধান শিক্ষক মাম্যাচিং মারমা। তিনি বলেছেন, সভাপতিসহ যৌথ স্বাক্ষরে টাকা উত্তোলন হয়েছে। পাড়া কারবারী ও সভাপতি আফিমসহ মাদকদ্রব্য প্রায় সেবন করে থাকেন। তাই ওই বিদ্যালয়ে প্রধান হিসেবে কর্মরত অবস্থায় প্রায় সময় পাড়ার লোকজন বিভিন্নভাবে বিরক্ত করতেন বলে উল্লেখ করেন প্রধান শিক্ষক।
উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা আশীষ চিরান সাংবাদিকদের বলেছেন, এ ধরণের কোনো অভিযোগ তার কাছে আসেনি। অভিযোগ পেলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া হবে।