রুমায় শিক্ষিকার ক্লাস করান স্বামী : হাজিরা খাতা স্বাক্ষর হয় বাসায়
বান্দরবান পার্বত্য জেলার রুমায় এক শিক্ষক দম্পতির বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে। দুজনই সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক। তবে স্ত্রীর বিদ্যালয়ে পাঠদান করেন স্বামী। আর স্বামী নিজ কর্মস্থলে থাকেন দিনের পর দিন অনুপস্থিত।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, জেলার রুমা উপজেলা সদরে অবস্থিত ক্যইম্বওয়া পাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করেন ডহাইসিং মারমা এবং হমক্রিপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে করেন মংসাথোয়াই মারমা, তারা দুইজনই স্বামী-স্ত্রী। তারা ২০১৭ সালে ২০ ফেব্রুয়ারি বান্দরবানের রুমা উপজেলায় প্রাথমিক বিদ্যালয়ে নিয়োগ পান।
গত রোববার ক্যম্বওয়া পাড়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বিদ্যালয়টি বন্ধ, উড়ছে না-কোনো জাতীয় পতাকা। তখন দুপুর ১টা বেজে ২০মিনিট। বিদ্যালয়ে নেই কোন শিক্ষক। স্থানীয় লোকজনের কাছে শিক্ষকের খোঁজ নিতে গেলে পাড়াবাসী এক শিক্ষিকাকে ডেকে পাঠান । দাঁড়িয়ে কথা হয় ঐ শিক্ষকের সঙ্গে। নাম ডহাইসিং মারমা।
অসুস্থতার কথা উল্লেখ করে শিক্ষক ডহাইসিং দাবি করেন, তাঁর অনুপস্থিতির সময়গুলো তাঁর স্বামী বিদ্যালয়ে গিয়ে নিয়মিত পাঠদান করেছিলেন। তবে তিনি দীর্ঘদিন যাবত বিদ্যালয়ে অনুপস্থিতি ও তাঁর স্বামী শিক্ষক মংসাথোয়াই মারমা বর্গা শিক্ষক হিসেবে পাঠদান করেন এ ব্যাপারে কর্তৃপক্ষের অবগত কিংবা অনুমতি ছিল কিনা জানতে চাইলে বিষয়টি এড়িয়ে যান শিক্ষক ডহাইসিং মারমা। তিনি বলেন, স্কুলে একদিনও যায়নি, এ কথা সঠিক নয়।
এর আগে এ প্রতিবেদক রুমা সদর সদর থেকে মোটরসাইকেলে করে পরে ১ ঘণ্টা পায়ে হেঁটে ক্যইম্বওয়া পাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে যায়। তবে সরেজমিনে যাওয়ার সময় পথে দেখা মিলে প্রধান শিক্ষকের সঙ্গে। তাঁর সঙ্গে ছিলেন আরেক সহকারী শিক্ষক।
এসময় ক্যইম্বওয়া পাড়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক নুখ্যাইচিং মারমা বলেন, বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের মধ্যে দ্বিতীয় শ্রেণীর উপরে কোনো ক্লাসের ছেলে-মেয়ে নাই। তাই দুপুর ১২টার পর ছুটি দিয়ে ফেলি প্রতিদিন। তবে শিশু শ্রেণি শিক্ষকের দুগ্ধ ছোট বাচ্চা থাকায় তাকে বেলা ১১টায় ছুটি দেয়া হয় ।
এক প্রশ্নের জবাবে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক বলেছেন, বিদ্যালয়ে ২২জনের মতো ছেলে-মেয়ে আছে। শিক্ষক আছেন পাঁচজন। শিক্ষক প্রশিক্ষণে আছেন একজন। বাকী চার শিক্ষকের মধ্যে প্রায় বছর খানিক অসুস্থতার চিকিৎসায় বিদ্যালয়ে অনুপস্থিতি ছিল, ডহাইসিং মার্মা। তবে ওই সময় এ শিক্ষকের পরিবর্তে তার স্বামী মংসাথোয়াই মারমা এসে পড়াতেন। স্বামীর কর্মস্থল আরেকটি বিদ্যালয়ে। তারপরও পড়াতে আসতেন এই বিদ্যালয়ে।
এই বিষয়টি উর্বর্তন কর্তৃপক্ষের অবগত কিংবা অনুমতি ছিল কিনা জানতে বিষয়টি মানবিক কারণে নিজেদের মধ্যে বুঝাপড়া করে নিয়েছিলাম।
স্ত্রীর পরিবর্তে প্রায় ৯মাসের মতো পড়াচ্ছিলেন উল্লেখ্য করে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক নুখ্যাইচিং মার্মা বলেন, দৈনিক হাজিরা খাতায় শিক্ষক ডহাইসিং নিজেই স্বাক্ষর করেন, কারণ তার স্বামী মাঝে মধ্যে হাজিরা খাতা বাসায় নিয়ে গিয়ে স্বাক্ষর করিয়ে নিয়ে আসেন বিদ্যালয়ে।
শিক্ষক ডহাইসিং না আসলেও তার স্বামী এসে পাঠদানের কারণে শিক্ষক ডহাইসিং এর অনুপস্থিতির বিষয়টি শিক্ষা অফিসে জানানো হয়নি বলে জানালেন ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক নুখ্যাইচিং মার্মা।
স্ত্রী কর্মস্থলে পাঠদানের বিষয়টি জানতে চাইলে মংসাথোয়াই মারমা বলেন, রুমায় ব্যাংক ডাকাতির পরবর্তী আইনশৃংখলা বিরাজমান পরিস্থিতির কারণে এপ্রিল মাসে তার কর্মস্থল দুর্গম এলাকায হাওয়ায় নিয়মিত যেতে পারেননি। তবে কর্মরত কর্মস্থলে নিয়োজিত সব শিক্ষক মিলে সেখানে প্রাইভেট (বর্গা) শিক্ষক রেখে স্ত্রীর কর্মস্থলে সবার সাথে বুঝা-পড়া করে পাঠদান করেছিলেন বলে জানিয়েছেন তিনি।
এব্যাপারে জানতে চাইলে রুমা উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা আশীষ কুমার ধর বলেন, সঠিক নামসহ অফিসে এসে বলেন। আমি দুই দিনের মধ্যে তদন্ত করে দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।