রুমার অনুপ্রবেশকারীদের খাদ্য সরবরাহ করা না হলে সংকটে পড়বে স্থানীয়রা !

NewsDetails_01

বান্দরবানের রুমা উপজেলায় ৩নং রেমাক্রী প্রাংসা ইউনিয়নের ৭নং ওয়ার্ডে চইক্ষ্যং পাড়ায় শরনার্থীরা। ছবি-পাহাড়বার্তা
বান্দরবান পার্বত্য জেলার রুমায় মিয়ানমার থেকে অনুপ্রবেশের কারনে এবং সামনে মিয়ানমার পরিস্থিতি আরো সংঘাতময় হওয়ার সম্ভবনা থাকায় জেলার বিভিন্ন সীমান্ত দিয়ে অনুপ্রবেশ বাড়ার আশংখা থেকে খাদ্য সংকটে পড়তে পারে ক্ষোধ স্থানীয়রা।
রুমা উপজেলা প্রশাসন (সরকারী) সূত্রে জানা গেছে, রুমায় মিয়ানমারের অনুপ্রবেশকারী সংখ্যা ১৬০জন দাবী করা হলেও বেসরকারী সূত্রে জানা যায়,অনুপ্রবেশকারীর সংখ্যা ২০৩জনে। বর্তমানে স্থানীয় গ্রামবাসী তাদের জন্য খাদ্য সরবরাহ করছে। স্থানীয়রা তাদের দিনে এক বেলা ভাতের পাশাপাশি তরকারি হিসাবে খিদে নিবারণের জন্য প্রদান করছে পাহাড়ী আলু ও পাহাড়ী লতাপাতার শাকসব্জি কিন্তু কতদিন তারা এভাবে শরনার্থীদের খাদ্য দিতে পারবে তা নিয়ে শংখা প্রকাশ করেছে। প্রাংসা ইউনিয়নের ৭ নং ওয়ার্ডের চইক্ষ্যং পাড়ায় মিয়ানমারের এসব শরনার্থী অবস্থান করছে।
মিয়ানমারের খামংওয়া পাড়া থেকে তিন সন্তান নিয়ে অনুপ্রবেশ করা রেদাসে রাইখাইন (৩৫) বলেন,এখন পাড়াবাসী খাদ্য সরবরাহ করছে, কিছুদিন পর তারা খাদ্য দিতে পারবেনা, সেটা নিয়ে আমরা উদ্ভিগ্ন আছি।
আরো জানা গেছে, জানুয়ারির শেষ সপ্তাহে হেলিকাপ্টার থেকে বোমা বর্ষন করার কারনে শরনার্থীদের একটি গ্রুপ টানা আড়াই দিন পায়ে হেটে পাহাড়ি দূর্গম পথ অতিক্রম করে প্রচন্ড শীতের মধ্যেই বান্দরবানের রুমার চইক্ষ্যং পাড়ায় অনুপ্রবেশ করে। অন্যদিকে মিয়ানমারের বম সম্প্রদায়ের অন্য একটি বড় গ্রুপ একই সময়ে ভারতের মিজোরাম রাজ্যে অনুপ্রবেশ করে।
মিয়ানমারের খামংওয়া পাড়া থেকে ৭ সন্তান নিয়ে পালিয়ে আসা মংসে (৪৫) জানান ,আমাদের পাশ্ববর্তী পাড়ায় সেনারা হেলিকপ্টার থেকে বোমা বর্ষন করে, ফলে প্রানে বাঁচার জন্য আমরা এখানে পালিয়ে আসি। তিনি আরো জানান, আমরা এখান থেকে মিয়ানমারে ফিরলে হয়তো আমাদের প্রানে মেরে ফেলবে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক রুমার চইক্ষ্যং পাড়ার বাসিন্দারা জানান, আমরা এখানে খুব কষ্ট করে কোন ভাবে খেঁয়ে বেঁচে থাকি, পরিবারের আয় বলতে পাহাড়ের জুম চাষ। সরকারের পক্ষ থেকে মানবিক কারনে তাদের (শরনার্থীদের) খাদ্য সরবরাহ করা না হলে আমাদের নিজেদের খাদ্য নিয়ে সংকটের মুখোমুখি হতে হবে। বর্তমানে এলাকাটিতে সেনা-বিজিবির অন্তত ৩০ জনের একটি দল অবস্থান করলেও সরকারের নির্দেশনা না থাকায় অনুপ্রবেশকারী বৌদ্ধ শরনার্থীদের কোন ধরণের খাদ্য সরবরাহ করা হয়নি প্রশাসনের পক্ষ থেকে।
স্থানীয় সূত্রে আরো জানা গেছে, জেলার রুমা,থানচি, আলীকদম ও নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার সাথে মিয়ানমারের অরক্ষিত স্থল সীমান্ত রয়েছে। এসব সীমান্তের অধিকাংশ এলাকা দূর্গম ও বনজঙ্গলে ঘেরা হওয়ার কারনে বিজিবির পক্ষে নিরাপত্তাবলয় এখন গড়ে তোলা সম্ভব হয়নি। ফলে দ্রুত অনুপ্রবেশ বন্ধ করার কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহন করা না হলে জেলার প্রাকৃতিক পরিবেশের পাশাপাশি হুমকির মুখে পড়তে পারে জেলার আইনশৃংখলা পরিস্থিতি।
থানচি উপজেলার রেমাক্রি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মুই সুয়ে বলেন, আমাদের বড় মদকের দিকে মিয়ানমারের সীমান্ত আছে, তবে এখনও অনুপ্রবেশ ঘটেনি। তিনি আরো বলেন, অনুপ্রবেশের ঘটনা ঘটলে এলাকার জন্য ক্ষতি হবে।
বান্দরবানের দূর্গম এলাকার ৯০ ভাগ মানুষ জুম ফসলের উপর নির্ভর। জুম ফসল ভালো না হলে বছরের মার্চ মাস থেকে অন্তত ৪-৫মাস খাদ্য সংকট দেখা যায়। বিশেষ করে সীমান্তবর্তী থানচি উপজেলার রেমাক্রি, তিন্দু, ছোট মদক, বড় মদক ও সাঙ্গু রিজার্ভ ফরেস্ট এলাকা ও রুমার উপজেলার সীমান্তবর্তী এলাকাগুলোতে খাদ্য সংকট দেখা দেয়। আর এই ধরণের ঘটনা ঘটলে ক্ষোদ অনুপ্রবেশকারীদের খাদ্য সরবরাহ করতে পারবেনা স্থানীয়রা। ফলে খাদ্যের জন্য অপরাধ প্রবন হতে পারে মিয়ানমার থেকে আসা অনুপ্রবেশকারীরা। নিজেদের খাদ্য যোগানে করতে হিমশিম খাওয়া স্থানীয়রা বর্তমানে রুমায় আসা শরনার্থীদের খাদ্য সরবরাহ করছে।
নতুন শরনার্থী প্রবেশে সমস্যার কথা বলতে গিয়ে রুমার রেমাক্রি প্রাংসা ইউনিয়নের ৩ নং ওয়ার্ড মেম্বার ভান লং বলেন, আমরা অবশ্যয় সমস্যায় পড়বো, তারা যদি এখানে থাকে তাহলে বন উজার করে বসতবাড়ি করলে সেখানে খাদ্য সংকটও দেখা দিতে পারে।
সেনাদের নির্যাতন আর অত্যাচারের মুখে চিন প্রদেশের পালাটওয়া শহরতলি তরোওয়াইন এর পশ্চিমে খামংওয়া, কান্তালিন গ্রামগুলো থেকে খ্যা, রাখাইন, খুমি সম্প্রদায়ের শিশুসহ রুমা উপজেলার রেমাক্রী প্রাংসা ইউনিয়নের চইক্ষ্যং সীমান্তের বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করে। প্রাণ রক্ষার জন্য তাদের নিয়ে আসে আরকান আর্মি (এএ)।
বান্দরবানের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ জাকির হোসেন মজুমদার বলেন, অনুপ্রবেশ রুখতে পুলিশের গোয়েন্দা নজরদারী বাড়ানো হয়েছে, আইনশৃংখলা পরিস্থিতির যাতে অবনতি না ঘটে সেই ব্যাপারে পুলিশের পাশাপাশি সেনা ও বিজিবি তৎপর রয়েছে।

আরও পড়ুন