রুমায় আশ্রয়ন প্রকল্পের নামে অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছে কে এই মুইথুই অং মার্মা ?

নষ্ট হচ্ছে আওয়ামী লীগের সুনাম

NewsDetails_01

একটি বাড়ি, একটি খামার প্রকল্পের মাধ্যমে গরীবদের জীবনমান উন্নয়নে ব্যাপক ভূমিকা রাখা প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ উদ্দ্যেগ আজ দেশে সাড়া ফেললেও বান্দরবানের রুমা উপজেলায় আশ্রয়ন প্রকল্পের আওতায় বাড়ি দিবেন বলে গরীব মানুষের কাছ থেকে অর্থ হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে আওয়ামী লীগের এক কথিত নেতার বিরুদ্ধে।

“বিচার চাইতে যেখানে যাও, আমার একটা লোমও ছিড়তে পারবে না তোমরা” টাকা ফেরত চাইতে গেলে দরিদ্র দুইজনকে শাসিয়ে দাম্ভিকতার সাথে এ কথা বলে ফেরত দিতো বারবার। তিনি মুইথুই অং মারমা। রুমা উপজেলার স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতা, এমন অভিযোগ স্থানীয়দের।

প্রধানমন্ত্রীর ঘরও পাইলাম না, টাকাও ফেরত দেয়নি, এখন বিপদে পড়ছি আমরা। এসব কথা জানিয়েছিলেন উসাইমং(৩২) ও ঙৈসিংনু মারমা(৩০)। বান্দরবানের রুমায় পাইন্দু ইউনিয়নের একজন ১ ওয়ার্ডের মংশৈপ্রু পাড়া এবং আরেকজন বাগান পাড়ার পাহাড় ঝুমচাষি এই দরিদ্র দুইজনের স্থায়ী ঠিকানা।

গত সোমবার (১২ এপ্রিল) দুপরে উপজেলা পরিষদ ক্যান্টিন জয়া কুলিং কর্ণারে আলাপচারিতায় এসব কথা জানিয়েছে। ওইসময় কথিত আ.লীগ নেতা মুইথুই অংয়ের কাছে টাকা ফেরত পাওয়ার জন্য উপজেলা চেয়াররম্যান এর নিকট বিচার চাইতে উপজেলা সদরে এসেছিলেন তারা। তখন এসব কথা হয় প্রতিবেদকের সঙ্গে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত আশ্রয়ন প্রকল্পের আওতায় গত বছর (২০২০) এর জানুয়ারি মাসে সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন পরিষদের মাধ্যমে দরিদ্র ও গৃহহীন নামের তালিকা সংগ্রহ ও যাচাই-বাছাইয়ের পর তালিকাভূক্তি করা হয়। এ অবস্থায় স্থানীয় আওয়ামীলীগ নেতা মুইথুইঅং টাকা মারার ফন্দি আঁটে। এসময় এই আওয়ামী লীগ নেতা বলেন, প্রধানমন্ত্রী থেকে ঘর দেবে, সম্পূর্ণ সরকারি খরচে নির্মাণ করে দেবে, সাথে ঘর ভিটার দলিলও করে দেবে বিনা খরচে, কম টাকা নয়। ঘর পাওয়া মানে তিন-চার লাখ টাকা তো বটেই। এতো টাকার দামে প্রধানমন্ত্রী ঘর পেতে কিছু খরচ লাগবে।

এসময় তিনি আরো বলেন,এ ব্যাপারে পাইন্দু ইউপি চেয়ারম্যান আমাকে (মুইথুইঅং মারমা) দায়িত্ব দিয়েছে। তোমরা চাইলে আমার মাধ্যমে চেয়ারম্যানকে কিছু দিলে হবে। অল্প টাকা দিয়ে অকল্পনীয় লাভ! তিন চার লাখ টাকার দামে পাকা ঘর পাবো, কে না চায় পাকা ঘর? বললেন বাগান পাড়া বাসিন্দা ঙৈসিংনু মারমা।

NewsDetails_03

সে জানায়, প্রায় সময় ইউনিয়ন পরিষদ কাজে স্থানীয় কথিত আ.লীগ নেতা মুইথুইঅংকে চেয়ারম্যান বিভিন্ন সময় বিভিন্ন কাজ করাত। এমনিতেই মুইথুইঅং ইউপি চেয়ারম্যানের সাথে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক আছে, তাই স্থানীয়রাও বিশ্বাস করে বিষয়টি। তাছাড়া নিচ খরচে তিন-চার লাখ টাকা খরচ করে পাকা ঘর ওঠাতে পারবো না।

এসবের কথা চিন্তা করে সহজ সরল বিশ্বাসে নগদ ১০ হাজার মুইথুইঅংকে দিয়েছিলেন দিন মজুর উসাইমং মারমা। তখন আলাদাভাবে কথিত নেতা মুইথুইঅংকে আরেকজন দরিদ্র ঝুমচাষি ঙৈসিংনু মারমাও প্রধানমন্ত্রী ঘর পাবার আশায় ৯ হাজার টাকা। এখানে কথিত নেতা মুইথুইঅং মারমা ও ঙৈসিংনু মারমা সম্পর্কে জামাই-শ্বশুর। এসব টাকা দিয়েছিলেন ২০২০ সালে ২০ এপ্রিল।

তারা আরো জানায়, টাকা দেয়ার পরে যোগাযোগ করতে থাকে মুইথুইঅং এর সঙ্গে। মাস যায়, দিন যায়, কোনো খবর নেই। এর মধ্যে দুই ধাপে অনেকে প্রধানমন্ত্রীর উপহার হিসেবে ভিটা দলিলসহ ঘর পেয়েছেন। তাই মুইথুইঅং এর কাছে খোঁজ নিতে থাকি এবং ঘর না হলেও টাকা ফেরত দিতে বলেছি। এতে রেগে ওঠতে শুরু করে। পরে মুইথুইঅং মারমা তাদের জানিয়ে দেয়, যেখানে যাবি যাও, টাকা আর ঘর কিছুই পাবিনা তোরা, কারণ আমি টাকা খাইনি।

নিরীহ ঙৈসিংনু ও উসাইমং গত মার্চ মাসে উপজেলা চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগের সভাপতির কাছে একটি লিখিত অভিযোগ করেন। উপজেলা চেয়ারম্যান ও আ.লীগের সভাপতি উহ্লাচিং মারমা জানান, ঘটনাটি স্বিকার করে টাকা ফেরত দিতে লিখিত অঙ্গীকার দিয়েছে মুইথুইঅং মারমা। তার সাথে আর কেউ সংশ্লিষ্টতা আছে কিনা তাও খোঁজ নেয়া হচ্ছে।

এদিকে পাইন্দু ইউনিয়ন আ.লীগের সভাপতি সাইলুকথাং বম বলেন, মুইথুইঅং মারমাকে আমি চিনি। পাইন্দু ইউপি চেয়ারম্যানের ঘনিষ্ঠজন। তবে আ.লীগের পদধারী নেতা নয়। সম্ভবত ওয়ার্ড কমিটির সদস্য হতে পারে সে। আর অভিযোগের বিষয়টি যদি সত্যি হয়, দলীয় নিয়মনীতি ও সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে।

পাইন্দু ইউপি চেয়ারম্যান উহ্লামং মারমা বলেন, তার ইউনিয়ন পরিষদের কোনো কাজের জন্য মুইথুইঅংকে কোনো প্রকার দায়িত্ব দেয়া হয়নি। সরকারি ঘর দেয়ার কথা বলে কারোর কাছে টাকা নেয়, তবে সেটা হবে অন্যায়।

তবে সেই অভিযুক্ত নেতা মুইথুইঅং মারমা অভিযোগের কথা স্বিকার করে বলেন, আগামী মে মাসে ২০ তারিখে টাকা ফেরত দেবেন বলে উপজেলা চেয়ারম্যানের কাছে অঙ্গিকার করেছেন।

আরও পড়ুন