রুমায় পাহাড় কেটে ইটের ভাটা : বিপন্ন প্রাকৃতিক পরিবেশ

NewsDetails_01

প্রাকৃতিক পরিবেশ বিপন্ন করে বান্দরবানের রুমা উপজেলার দূর্গম নতুন রুমানা পাড়া ঘেঁষে পাহাড় কেটে ইটভাটা গড়ে তোলার ব্যাপক ব্যাপক প্রস্তুতি চলছে। প্রশাসনের নিস্ক্রিয়তার সুযোগে গত ৩ মাস ধরে এস্কেভেটার দিয়ে বিশাল পাহাড় সাবাড় করে বনের মধ্যেই গড়ে তোলা হয়েছে অবৈধ ইটভাটা।

স্থানীয়রা জানিয়েছে, প্রশাসনের অনুমতি ও পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র না নিয়েই ঠিকাদার ট্রেক্সটাইল মিলন পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড ও স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাদের নাম ভাঙ্গিয়ে অবৈধভাবে পাহাড় কেটে ইটভাটা গড়ে তোলার কাজ চালিয়েছে।

সরজমিনে দেখা গেছে, রুমার নতুন রুমানা পাড়াঘেঁষা পূর্ব-দক্ষিণে বিশাল জায়গা জুড়ে জঙ্গল কেটে পুড়ে দিয়েছে। ছোট-বড় তিনটি পাহাড় কেটে কাজ চলছে অবৈধ ইটভাটার। এসব পাহাড় কাটতে গিয়ে মাটি ভরাট হয়ে তিনটি ছড়ার পানির উৎসের প্রবাহ বন্ধ হয়ে গেছে। অবৈধ ইটভাটা স্থাপনের পাহাড় কাটার দৃশ্য প্রায় ১০ কিলোমিটার দুরে অবস্থান পর্বতশৃঙ্গ কেওক্রাডংয়ের পাদদেশ থেকেও সহজে লক্ষ্য করা যায়। ৩৫৮নং রুমা মৌজা ও সদর ইউনিয়নের ৭নং ওয়ার্ডের নতুন রুমানাপাড়া ও বিলাইছড়ির বড়থলি ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ডের দুপপানিছড়াপাড়া-জারুছড়ির সীমান্তে এই ইটভাটার (বিএমএফ) অবস্থান।

রুমানা পাড়ার বাসিন্দা নলতিলির বম বলেন,পাহাড় কেটে ইটভাটা স্থাপনের কারণে বৃষ্টি হলেই কাদা মাটি গিয়ে পানির উৎসের প্রবাহ বন্ধের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকবে না, ভাটায় লাখ লাখ মণ লাকড়ি (কাঠ) প্রয়োজন হবে। কাঠ পোড়ানো হলে আশেপাশের পাড়ার রিজার্ভ বনসহ গাছপালা আর থাকবেনা।

স্থানীয় বাসিন্দা ভানরাম বম বলেন, ইটভাটার তৈরিতে পাহাড় কাটা ও পাড়া রিজার্ভ থেকে লাকড়ি গাছ কাটা নিয়ে পাড়াবাসীর মধ্যে পক্ষে বিপক্ষে দুভাগে বিভক্ত। ফলে বিভিন্নভাবে প্রভাব খাটিয়ে ইটভাটা তৈরিতে কেউ আর কিছু বলছে না।

NewsDetails_03

ইটভাটায় গিয়ে দেখা যায়, বেশ কয়েকজন শ্রমিক ভাটায় ইট পোড়ানোর ধাপের কেলিং কাজ করছে।
ইটভাটার শ্রমিক আমান উল্লাহ বলেন, শুরুতে ৫০/৬০জন ছিলো, এখন কমে গেছে। অন্য শ্রমিকরা জানায়, প্রতি রাউন্ডে এক মাসে ৩ লক্ষ ইট পোড়ানো যাবে, তাই লাকড়ি অনেক লাগবে।

জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, পার্বত্য জেলায় ২০০৯ সাল থেকে ইটভাটা স্থাপন ও পরিচালনার ওপর সরকারের নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। এসব এলাকায় ইটভাটা স্থাপন না করার ব্যাপারে রয়েছে উচ্চ আদালতের নির্দেশনা, কিন্তু এ নির্দেশ রয়ে গেছে কাগজে-কলমেই।

বান্দরবানের পরিবেশ অধিদপ্তরের ইনস্পেক্টর আব্দুস সালাম বলেন, রুমায় ইটভাটার কোনো অনুমতি নেই। যদি কেউ করে থাকে, তা ভেঙ্গে দিয়ে তার বিরুদ্ধে আইনী ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।

ইট প্রস্তুত ও ভাটা স্থাপন(নিয়ন্ত্রণ) আইন- ২০১৩ এ লাইসেন্স ছাড়া ইটভাটা পরিচালনা করলে এক বছরের দন্ড এবং ৫০ হাজার টাকা জরিমানা, আবাসিক-সংরক্ষিত-বাণিজ্যিক-বনভূমি-জলাভূমিসহ গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা এলাকায় ইটভাটা স্থাপন করলে ১ বছর দন্ড ও ৫০ হাজার টাকা জরিমানার বিধান রাখা হয়। জ্বালানি হিসেবে কাঠের ব্যবহারে ৩ বছরের কারাদন্ড এবং ৩ লাখ টাকা জরিমানা বা উভয় দন্ডে দন্ডিত হওয়ার বিধান রাখা হয়।
প্রশাসন ও পরিবেশ অধিদপ্তরের অনুমতি বা ছাড়পত্রের বিষয়ে ইটভাটার মালিক মিলন বলেন, অন্যান্য জায়গায় যেভাবে ইটভাটা হয়, সেভাবে করছি। বান্দরবানের নিয়মকানুন তো সবাই জানেন।

এই ব্যাপারে রুমা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ ইয়ামিন হোসেন বলেন, ইটভাটা স্থাপনের কথা শুনেছি, ইটভাটা পরিদর্শন করে বৈধ কাগজপত্র কিংবা প্রশাসনের অনুমতি পত্র আছে কিনা তা দেখে আইনী ব্যবস্থা নেয়া হবে।

প্রসঙ্গত, গত ২৮ ডিসেম্বর রাতে টেক্সটাইল মিলনের বান্দরবানের কক্ষ্যাং পাড়া এলাকার আরেক এফবিএম ইটভাটা থেকে শিকলে বাঁধা ৪ ইটভাটা শ্রমিককে আহত অবস্থায় উদ্ধার করে পুলিশ।

আরও পড়ুন