ভোর থেকে হাঁটছিলাম, আর্থা পাড়া পর্যন্ত সময় লেগেছিল পুরো তিন ঘন্টা। ওখান থেকে জীব গাড়ি করে রুমা সদরে আসা। অসুস্থ শরীর অনেক ক্লান্ত। তবে এক সাথে নগদ চার হাজার ৮৮০ টাকা হাতে পেয়ে সব কষ্ট চলে গেছে। এখন কিছু টাকায় ঘরের জন্য বাজার করবো, আর অর্ধেক টাকা ঘরে নিয়ে যাবো। এইসব কথা বলেছিলেন দুস্থ নারী মেক্সী তঞ্চঙ্গ্যা(৪৩)। সে রাঙ্গামাটির সীমান্তঘেঁষা বান্দরবানের রুমা উপজেলায় পাইন্দু ইউনিয়নের ৭নং ওয়ার্ডে দুর্গম দেবাছড়া পাড়ার বাসিন্দা।
গত সোমববার (১৯ এপ্রিল) দুপুরে উপজেলা মহিলা বিষয়ক কার্যালয়ের বারান্দায় কথা হয়েছিল এ প্রতিবেদকের সঙ্গে। ওইদিন ভিজিডি উপকারভোগী দুস্থ মহিলা হিসেবে সঞ্চয় টাকা ফেরত নেয়ার জন্য আসছিলেন সে। মেক্সী তঞ্চঙ্গ্যা জানায় ফেরত প্রাপ্ত সঞ্চয় টাকায় বড় জাতের দুই হাজার ৫০০টাকায় একটি শুকর নেবো। এক বছর পর তা বিক্রি করে ৯,০০০টাকা আয়ের পরিকল্পনা কথা জানালেন মেক্সী ।
আরেক উপকারভোগী দুস্থ মহিলা ও পাইন্দু ইউনিয়নের ছাংদালা পাড়া বাসিন্দা সাইমেউ মারমা(৪৫) বলেন, নগদ চার হাজার ৯৮০ টাকা এক সাথে পেয়ে খুব ভাল লাগছে। কারণ যে কাজ করুক না কেন, কোনো অবস্থাতেই এতো টাকা মাসিক জমা রাখা সম্ভব হয়নি ঘরে। মাসে ৩০ কেজি করে পুরো ২৪ মাস চাল পেয়েছিলাম নিয়মিত। এতে ঘরে চালের চিন্তাও করতে হয়নি দুই বছর। শেষে আবার একসাথে বড় অংকে টাকাও পেলাম। খুশি না হলে, কি হবে এমন প্রশ্ন এ দুস্থ মহিলার।
সে জানায়, চার হাজার ৯৮০ টাকায় দুই মণ বীজ আদা কিনে জুমে লাগাবেন। এতে দুই হাজার টাকা চলে যাবে। বাদ বাকী টাকায় বাড়ির সন্তানদের জন্য কেনাকাটা করবেন। কারণ ছোট ছেলে ও নাতির গত সাংগ্রাইয়ের সময় কিছুই কিনে দিতে পারিনি। এটাকায় আমার দুটোর জরুরি কাজ খুশিতে হয়ে গেলো বলেই মুচকি হাসে এসব জানিয়েছিলেন দুস্থ নারী সাইমেউ মারমা।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, সরকারের গৃহিত খাদ্য নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতায় ২০১৯-২০২০ চক্রে মোট ২৪ মাস মেয়াদে রুমা উপজেলায় ৪টি ইউনিয়নের এক হাজার ৫৯৬জন দুস্থ মহিলাকে ভিজিডি উপকারভোগী হিসেবে তালিকাভুক্ত করা হয়। তারা জানুয়ারী ২০১৯ থেকে ২০২০ ডিসেম্বর পর্যন্ত (মোট ২৪মাস) প্রতিমাসে ৩০ কেজি করে চাল পেতো। ওই ২৪ মাস চাল উত্তোলনের সময় উপকাভোগী দুস্থ মহিলারা প্রতিমাসে ২০০টাকা করে সঞ্চয় হিসেবে জমা দেন ব্যাংকে।
গত ২০২০ সালে ৩১ ডিসেম্বর মোট ২৪ মাসে চক্র শেষ হয়। ফলে সঞ্চয়িত টাকা প্রতি দুস্থ মহিলাকে সুদসহ চার হাজার ৯৮০টাকা করে সঞ্চয় ফেরত বিতরণ করছেন মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তর।
উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা সুপন চাকমা জানান, মনিটরিং কমিটির সভাপতি ও উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোহাম্মদ ইয়ামিন হোসেনের নির্দেশনা মোতাবেক স্বাস্থ্য বিধি ও সামাজিক দুরত্ব বজায় রেখে সঞ্চয় টাকা বিতরণ কার্যক্রম চলমান আছে।
সূত্র মতে, গত ১১ এপ্রিল উপজেলা চারটি ইউনিয়নের এক হাজার ৫৯৬ জনকে সঞ্চয় টাকা বিতরণের তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছিল। তবে লকডাউনের কারণে আসা-যাওয়া সমস্যা থাকার কারণে দুর্গম এলাকার এখনো কিছু দুস্থ নারীকে সঞ্চয় ফেরত দিতে পারেননি। তবে আগামি ২৬ এপ্রিলের মধ্যে বিতরণ কার্যক্রম সম্পন্ন হবে বলে আশা করছেন তিনি।
তার ভাষ্যমতে, তালিকাভুক্ত উপকারভোগী দুস্থ নারী এক হাজার ৫৯৬ জনের সঞ্চয় টাকা মাথা পিছু চার হাজার ৯৮০ টাকা করে মোট ৭৬ লক্ষ ৬০ হজার ৮৮০ টাকা সঞ্চয় ফেরত দেয়া হচ্ছে।
তার মধ্যে পাইন্দু ইউনিয়নে-৩৬৭ জন, রুমা সদর ইউনিয়নে-৫৮৯ জন, রেমাক্রীপ্রাংসা ইউনিয়নে ৩৩৬ জন ও গালেঙ্গ্যা ইউনিয়নে-৩০৪ জন ভিজিডি’র তালিকাভূক্ত উপকারভোগী রয়েছে।