রুমায় ৫২০ শিক্ষকের সম্মানী ভাতা প্রদানে নয়ছয়ে ক্যাফ

মৌলিক সাক্ষরতা প্রকল্পে হরিলুট

NewsDetails_01

বান্দরবানের রুমা উপজেলায় মৌলিক সাক্ষরতা প্রকল্পের ৫২০ শিক্ষকের সম্মানী ভাতা প্রদানে অনিয়মের অভিযোগ ওঠেছে। বেসরকারী সংস্থা কমিউনিটি অ্যাডভ্যান্সমেন্ট ফোরাম (ক্যাফ) এর বাস্তবায়নে রুমার ৪ টি ইউনিয়নের বয়স্কদের শিখন কেন্দ্রে কর্মরত শিক্ষক হিসেবে নিয়োজিত শিক্ষকেরা দুর্গম এলাকার বিভিন্ন পাড়ায় দীর্ঘ ছয় মাস কাজ করেও তাদের সম্মানী ভাতা না পাওয়ায় আর্থিক সংকটে দিন যাপন করছেন শিক্ষকের পরিবার-পরিজন।

সংশ্লিষ্ট সূত্র ও ভূক্তভোগী শিক্ষকেরা জানায়, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা ব্যুরোর মৌলিক সাক্ষরতা প্রকল্প (৬৪ জেলা)‘র আওতায় জেলার রুমায় চারটি ইউনিয়নের ৫২০জন শিক্ষক ও ১৬জন সুপারভাইজার নিয়োগ দেয়া হয়।

বেসরকারী সংস্থা ক্যাফ গত বছরের ডিসেম্বরে প্রতি মাসে ২৫শ টাকা বেতনে ১৬জন সুপারভাইজার ও ২৪শ টাকার বেতনে ৫২০ শিক্ষককে নিয়াগ দেন। তবে নিয়োগের ছয় মাস উত্তীর্ণ হলেও অনেক শিক্ষক কোনো সম্মানী ভাতা এখনো পাননি।

বর্শি পাড়া লুপ্রূ মারমা অভিযোগ করে জানান, নিয়োগের ছয়মাস পেরিয়ে গেলেও সম্মানী ভাতা পাননি। একই অবস্থা আরেক শিক্ষক রোয়ালমিনসাং বমের। তাঁর বাড়ি পাইন্দু ইউনিয়নের জুরভারং পাড়া। সে গত ডিসেম্বরে নিয়োগ পেলেও কোনো সম্মানী ভাতা তাঁর ভাগ্যে জুটেনি।

সূত্রমতে, এর মধ্যে ২০২১ সালের ডিসেম্বর থেকে মার্চ পর্যন্ত তিন মাসের জন্য ২৫৯ জনকে ৭২০০ টাকা সম্মানী ভাতা দিলেও বাকী ২৬১জনকে বিভিন্ন অজুহাত দেখিয়ে পরে দেয়া হবে বলে জানিয়ে দেয়া হয়। তবে কাউকে তাদের সম্মানী ভাতা দেননি ক্যাফ কর্তৃপক্ষ।

NewsDetails_03

প্রকল্প সুপারভাইজার উক্যচিং মারমা ও অংক্যসিং মারমা বলেন, তিন মাসের সম্মানী পেয়েছেন। তবে মাঠ পর্যায়ে ১৬জন সুপারভাইজারের মধ্যে সবাই পাননি। শিখন কেন্দ্র ভাড়া ও হারিকেনসহ জ্বালানী খরচ দেয়ার কথা থাকলেও ক্যাফ কর্তৃপক্ষ কোনো টাকা দেয়নি বলে জানিয়েছেন অংক্যসিং মারমা। তাঁর অধীনে বিভিন্ন পাড়ার শিখন কেন্দ্রে ২৬ শিক্ষকের মধ্যে অর্ধেকের বেশি শিক্ষক এক মাসের ভাতাও পাননি।

বান্দরবান পার্বত্য জেলা উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা ব্যুরোর সহকারী পরিচালক মো: মঞ্জুর আহমেদ বলেন, বাস্তবায়নকারী সংস্থা ক্যাফ শিক্ষক ও সুপার ভাইজারদের কোনো সম্মানী ভাতা না দিয়ে রাখার কোনো সুযোগ নেই। কারণ সুপারভাইজার ও শিক্ষকের ভাতা প্রদানের জন্য ৯১ লক্ষ ৪৭হাজার ৮৪০ ও শিখন কেন্দ্রের ভাড়া ও জ্বালানী তেলের জন্য ৬ লক্ষ ১৬ হাজার নয়শত আশি টাকা ক্যাফের বিপরীতে ৩০জুনের আগে ছাড় দেয়া হয়েছে। তাছাড়া বিষয়টি রুমা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকেও জানানো হয়েছে। টাকা না দিয়ে থাকলে ঈদ উল আযহা’র ছুটির পর ক্যাফের বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।

ক্যাফের মৌলিক সাক্ষরতা প্রকল্পের রুমা উপজেলার দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জিরচনহ বম বলেন, ৭জুলাই সম্মানী ভাতা দেয়ার সময় যারা পাননি, তারা ঈদ ছুটি শেষে আগামী ১৩ ও ১৪ জুলাই তাদেরকে সম্মানি ভাতা দেয়া হবে।

তবে সুপারভাইজার বাথুই মারমা বলেন, গত ৭জুলাই দুর্গম গালেঙ্গ্যা ইউনিয়ন থেকে আসা শিক্ষকদের জানুয়ারী-মার্চ এই তিন মাসের তাদের সম্মানি ভাতা প্রদানের সময় সম্মানি ভাতা শীটে জুন মাস পর্যন্ত স্বাক্ষর নেয়া হয়েছে।

এব্যাপারে ক্যাফের নির্বাহী পরিচালক লাল জারলম বম বলেন, থানচি উপজেলায় শিক্ষক ও সুপার ভাইজারদের চার মাসের সম্মানি ভাতা এর মধ্যে প্রদান করা হয়েছে। তবে প্রকল্পের কাজ জটিলতার কারণে বাকী দুমাসের ভাতা দেয়া সম্ভব নাও হতে পারে। বিষয়টি শিক্ষকদেরকেও জানিয়েছি। তবে কেন্দ্র ভাড়া ও জ্বালানী খরচ না দেয়ার বিষয়টি নিয়ে কিছু বলেননি নির্বাহী পরিচালক জারলম বম।

আরও পড়ুন