এই চিকিৎসকের আলোচিত কর্মকান্ড নিয়ে প্রতিবেদন তৈরী করেছেন এস বাসু দাশ। প্রতিবেদন তৈরীতে সহায়তা করেছেন পাহাড়বার্তার বিশেষ প্রতিনিধি ইয়াছিনুল হাকিম চৌধুরী এবং আলীকদম উপজেলা প্রতিনিধি জয়দেব রাজ।
মুমূর্ষ রোগীকে এ্যাম্বুলেন্সে নিয়ে বান্দরবানের আলীকদম হতে চট্টগ্রাম পর্যন্ত অনিয়ন্ত্রিত ভাবে গাড়ী চালানো এবং সরকারী এ্যাম্বুলেন্সকে নিজের ব্যক্তিগত কাজে ব্যবহার করছেন আলীকদম উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. শহিদুর রহমান, এমন অভিযোগ স্থানীয়দের।
যেভাবে ঘটনা :
গত শনিবার শ্বাসটান বেড়ে যাওয়ায় আব্দুল মোতালেবকে আলীকদম হাসপাতালে ভর্তি করা হয় এবং রোগীর অবস্থা আশংকাজনক হওয়া উন্নত চিকিৎসার জন্য চট্টগ্রাম হাসপাতালে রেফার করা হয়। এরপর তাকে চট্টগ্রাম মেডিকেলে নিয়ে যাবার সময় এই ঘটনা ঘটে। এ্যাম্বুলেন্সের চালক থাকা সত্ত্বেও রোগী ও রোগীর সাথে থাকা লোকজনকে ঝুঁকির মুখে রেখে নিজেই গাড়ী চালান এবং তার অনিয়ন্ত্রিত ও অদক্ষ গাড়ী চালানোর প্রতিবাদ করে রোগীকে চট্টগ্রাম মেডিকেলে না নিয়ে রোগীকে নিয়ে তার স্বজনরা চট্টগ্রামের পটিয়ায় নেমে যান।
রোগীর মেয়ে রেহেনা বেগম এর অভিযোগ:
আমার বাবার শরীরের অবস্থা বেশি খারাপ হওয়ার কারনে রবিবার দুপুর ২ টায় আলীকদম স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে উন্নত চিকিৎসার জন্য চট্টগ্রাম নিতে আলীকদম থেকে এ্যাম্বুলেন্স নিয়ে রওনা দিয়। কিন্তু দুঃখের বিষয় হচ্ছে, আলীকদম থেকে এ্যাম্বুলেন্স চালান উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা.শহীদুর রহমান স্যার নিজেই। যাওয়ার পথে অনেক বার গাড়ীর বন্ধ হয়ে যাওয়ার পরও তিনি পাশের সিটে বসে থাকা ড্রাইভারকে চালাতে দেন নি। এবং আলীকদম থেকে পটিয়ার শান্তির হাট পর্যন্ত পুরো গাড়ি ডা. সাহেব নিজেই চালান এবং আমরা শান্তির হাট পৌঁছায় প্রায় সন্ধ্যা ৬টার দিকে। আমাদের চট্টগ্রাম যাওয়ার কথা ছিল, ডাক্তারের গাড়ী চালানো দেখে আর নিজের বাবার শরীরের কষ্ট দেখতে না পেরে দ্রুত শান্তিরহাট পরিচিত এক ডাক্তারের শরণাপন্ন হয়।
রোগীর আত্মীয় মোঃ পারভেজ যা বললেন:
রেফারকৃত রোগী আব্দুল মোতালেবকে রবিবার বেলা ২টার সময় আলীকদম হাসপাতালের এ্যাম্বুলেন্সে করে রোগীকে চট্টগ্রামে নিয়ে যাওয়ার সময় উক্ত রোগীর এ্যাম্বুলেন্সের চালকের আসনে বসে ডা. শহিদুর রহমান এ্যাম্বুলেন্স চালান। গাড়ী চালানো অবস্থায় বার বার গাড়ী স্টার্ট বন্ধ হয়ে যায় এবং গাড়ী চালানোর সময় খানাখন্দ ও স্পিড ব্রেকারগুলো কোন কিছুই মানেননি তিনি। অনেকবার দূর্ঘটনার সম্মুখিন হওয়ার সম্ভাবনা থাকায় বারবার গাড়ী চালককে গাড়ী চালাতে দেওয়ার অনুরোধ করায় ডা. শহিদুর রহমান অশালিন গালাগালি করে চুপ করে থাকার নির্দেশ দেন। তিনি আরও বলেন, ডাক্তারের গাড়ী চালানোর এতোই ইচ্ছে থাকলে তিনি নিজে কিনে বা ভাড়া করে চালাবে। কিন্তু একজন আশংকাজনক রোগী দ্রুত হাসপাতালে পৌছানোর চেয়ে তার গাড়ী চালানো,একজন দায়িত্বশীল ব্যক্তির কাজ নয়।
অভিযুক্ত চিকিৎসক আলীকদম উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ডা. শহিদুর রহমান যা বললেন:
এ্যাম্বুলেন্স আমি চালাব, নাকি আর কেউ চালাবে সেটি আমি বুঝবো। এ্যাম্বুলেন্স চালানোর জন্য সরকারীভাবে চালক নিয়োগ আছে,আপনি কি এ্যাম্বুলেন্সের চালক? এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, “আমার ইচ্ছে হয়েছে, আমি এ্যাম্বুলেন্স চালিয়েছি,আমি চালক হতে যাব কেন? আমি ডাক্তার,ডাক্তারের সাথে এই ভাবে কথা বলতে পারেন না”। ডাক্তার কি রেফার করা রোগীর জীবন নিয়ে ছিনিমিনি খেলতে পারে ? এমন প্রশ্ন করা হলে এসময় তিনি উত্তর না দিয়ে কল কেটে দেন, পরে অনেক যোগাযোগের চেষ্টা করেও যোগাযোগ সম্ভব হয়নি।
কি ব্যবস্থা নিচ্ছেন সিভিল সার্জন?
বান্দরবানের সিভিল সার্জন ড. অংশৈ প্রু বলেন, আমি বর্তমানে ঢাকায় আছি,বিষয়টি আমি শুনেছি,আমি তাকে সাবধান করে দিয়েছি। ভবিষ্যতে এধরনের কোন ঘটনা ঘটলে আমি ব্যবস্থা নিব, তাছাড়া আমি ঢাকা থেকে ফিরে আলীকদম উপজেলায় যাবো।
শেষ কথা:
আলীকদম হাসপাতালের স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. শহিদুর রহমান এর গাড়ী চালানোর ব্যাক্তিগত কোন ড্রাইভিং লাইসেন্স নেই এবং এই নিউজ লেখা পর্যন্ত আলীকদম হাসপাতালের এ্যাম্বুলেন্সটি চট্টগ্রাম হতে আলীকদম পৌছায়নি, তিনি ব্যাক্তিগত কাজে সেটি ব্যবহার করছেন।