রমজান মাস এলেই ইফতারে তৃষ্ণা মেটাতে তরমুজ ও আনারসের চাহিদা বেড়ে যায় কয়েকগুণ। সারাদিন রোজা রাখার পর ঠান্ডা ও রসালো এই ফলদ্বয় রোজাদারদের পছন্দের শীর্ষ তালিকায়। রোজার ক্লান্তিতে শরিরে পুষ্টির চাহিদা যোগান দিতে তরমুজ-আনারস ইফতারের জন্য আদর্শ।
মাটিরাঙ্গা উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, মাটিরাঙ্গায় ৫ হেক্টর জমিতে তরমুজ চাষ হয। লক্ষ্যমাত্রা উৎপাদন ২১০ মেট্রিকটন। এদিকে ৯০ হেক্টর জমিতে আনারসের চাষ হয়। লক্ষ্যমাত্রা উৎপাদন ১৮০০ মেট্রিকটন।
মাটিরাঙ্গা বাজার ঘুরে দেখা গেছে, ক্রেতাদের ভিড় বেশি তরমুজ ও আনারসের দোকানে। বিক্রেতারা বলছে, বিদেশি ফলসমূহের দাম বেশি হওয়ায় অন্যান্য সময়ের তুলনায় রমজানে দেশীয় ফলের বিক্রি কয়েকগুণ বেড়ে যায়।
ইফতারে তরমুজ: সারাদিন রোজা রাখার পর এক ফালি লাল টকটকে রসালো তরমুজ সারাদিনের ক্লান্তি মিটে যায়। তরমুজের উপকারিতা অনেক। এটি পুষ্টিগুণে সমৃদ্ধ এবং শরীরের জন্য বেশ উপকারী, গরমে ও তৃষ্ণায় স্বস্তিদায়ক ফল তরমুজ। সারাদিন রোজা রেখে ইফতারে ভাজা পোড়া না খেয়ে গ্রীষ্মের মৌসুমি ফলটি শরবত হিসেবে বেশ উপযোগী।
তরমুজে প্রায় ৯০% পানি থাকে, যা শরীরকে হাইড্রেটেড রাখতে সাহায্য করে। তরমুজে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন এ, সি এবং বি৬ থাকে। এছাড়া এতে পটাসিয়াম এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট পাওয়া যায়। এটি হৃদপিন্ডের সুরক্ষায় সহায়ক এবং রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণেও সহায়ক। ত্বককে উজ্জ্বল ও মসৃণ রাখতে সাহায্য করে তরমুজ।
তরমুজে ক্যালোরি কম এবং ফাইবার বেশি থাকে, যা ওজন কমাতে সহায়ক হতে পারে। তরমুজের এই উপাদানগুলো শরীরকে হাইড্রেটেড রাখতে, ত্বক উজ্জ্বল করতে এবং হজমের জন্য সহায়ক ভূমিকা পালন করে।

ইফতারে আনারস: আনারস খুবই সুস্বাদু একটি ফল। ইফতারে আনারস গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে, কারণ এটিও শরীরকে হাইড্রেটেড রাখে, দ্রুত শক্তি পুনরুদ্ধার করতে সাহায্য করে এবং হজমে সহায়ক। রোজার পর শরীরের পানিশূন্যতা দূর করতে আনারসের মতো রসালো ফল খুব উপকারী।
আনারস আমাদের দেহে হজমশক্তি বৃদ্ধি করতে বেশ কার্যকরী। আনারসে রয়েছে ব্রোমেলিন, যা আমাদের হজমশক্তিকে উন্নত করে। বদহজম বা হজমজনিত যে কোনো সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে প্রতিদিন আনারস খাওয়া অত্যান্ত জরুরি। তাছাড়া দেহে রক্ত জমাট বাঁধতে বাধা দেয় এই ফল।
ইফতারে আনারস খেলে শরীরকে দ্রুত উজ্জীবিত করতে পারে এবং হজমের সহায়ক হতে পারে। তবে, অতিরিক্ত আনারস খেলে এসিডিটি হতে পারে এছাড়া যাদের অ্যালার্জি আছে তারা সতর্ক হয়ে খেতে পারেন।
মাটিরাঙ্গা বাজারে স্তুপ আকারে দেখা মিলে তরমুজের পুরো বাজার জুড়ে তরমুজের কদর। একাধিক ব্যাবসায়ীর সাথে কথা বলে জানা যায়, দেশের ফেনি, নিমসার সহ দেশের বিভিন্ন স্থানের আড়ৎদার থেকে এসব তরমুজ কিনে আনেন তারা। প্রতিটি তরমুজ আকার অনুসারে ২৫০-৮০০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি করা হয়। তাছাড়া মাঝারি আকারের তরমুজ বিক্রি হয় ৩০০-৫০০ টাকায়।
এদিকে সারি সারি আনারস দেখা যায় বাজারে। অপরিপক্ক হলেও রমজানে এর কদর বেশ তুঙ্গে। তবে তরমুজের তুলনায় আনারসের দাম বেশি। প্রতিটি বড় আনারস ১৫০ টাকা বিক্রি হয়েছে। এখন অবশ্য আকার ভেদে ৬০-৮০ টাকায় প্রতিটি। মাটিরাঙ্গার ১০নং বাইল্যাছড়ি এলাকায় আগাম আনারস চাষ হয়।
ব্যাবসায়ী রমিজ মিয়া বলেন, আমি মৌসুমী ফলের ব্যবসা করি, রোজায় তরমুজ ও আনারস বিক্রি করি। রোজায় বেশি দামে কিনে আনতে হয় বিধায় বিক্রি করতে হয় বেশি দামে। তবে জুলুম করি না। সহনীয় দামে কম লাভে বিক্রি করি।
অপর ব্যবসায়ী সালাম বলেন, রোজায় দেশীয় ফলের চাহিদা বেশি। আমি সূদুর নিমসার বাজার থেকে তরমুজ কিনে এনে ব্যবসা করি। পরিবহণ খরছ বেশি না হয় আরো কম দামে বিক্রি করতে পারতাম। প্রতিটি তরমুজে খরছ বাদে ২০-৫০ টাকা লাভ করেই বিক্রি করি।
তরমুজ কিনতে আসা জামাল মিয়া বলেন, রোজায় দেশিয় ফলই একমাত্র ভরসা। কারণ বিদেশী ফলের দাম বেশি। ৩শত টাকায় একটি তরমুজ কিনলাম। রোজায় পরিবারের সকালের তরমুজ পছন্দ তাই কিনে নিলাম। দাম সহনীয় মনে হলো, সারাদিন রোজার পর শরীর ঠান্ডা রাখতে তরমুজ খুবই কার্যকরী।
মাটিরাঙ্গা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মো. সবুজ আলী বলেন, পাহাড়ি অঞ্চলে ইফতারির আয়োজনে বিশেষ স্থান দখল করে নিয়েছে তরমুজ ও আনারস। তাজা ফলের এই দুই প্রজাতি ইফতারির জন্য জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে, কারণ মৃদু গরমে শরীরকে ঠান্ডা রাখতে এবং তৃষ্ণা মেটাতে এগুলো অত্যন্ত কার্যকর। তবে অপরিপক্ক ফল বর্জন করাই শ্রেয়।