রোয়াংছড়ির ইউএনও এর বিরুদ্ধে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ কর্মচারীর

বান্দরবান রোয়াংছড়ি উপজেলা কর্মকর্তা’র (ইউএনও) ও সহকারী কমিশনার ভূমি মো. খোরশেদ আলম চৌধুরীর বিরুদ্ধে কর্মচারীর বেতন ও প্রতিশ্রুতিকৃত অর্থ আত্নসাতের অভিযোগ পাওয়া গেছে। আর এই বিষয়ে প্রতিকার চেয়ে ব্যবস্থা নিতে জেলা প্রশাসকের কাছে অভিযোগ দিয়েছেন বলে আজ মঙ্গলবার (৭ নভেম্বর) ভূক্তভোগী একই অফিসের কর্মচারী মোহাম্মদ ফয়সাল বিষয়টি জানান।

মোহাম্মদ ফয়সাল বলেন, ২০২০ সালে আউট সোসিং এর মাধ্যমে রোয়াংছড়ি ভূমি অফিসে চেইনম্যান পদে যোগদান করি। পূর্বের কর্মকর্তাদের সময় পদ অনুযায়ী দায়িত্ব পালন করতে পারলেও বর্তমান কর্মকর্তা মো. খোরশেদ আলম চৌধুরী তাকে দিয়ে নিজের বাসার জন্য বাজার করা, ঘর ঝাডু দেয়া, এমনকি নিজের কাপড়-চোপড় পরিষ্কার করানোর কাজ করাতেন। একদিন কর্মকর্তার স্ত্রীর কাপড় পরিষ্কার করতে অস্বীকৃতি জানালে তখন অকথ্য ভাষায় গালি-গালাজ করে চাকরিচ্যুত করার হুমকি প্রদান করেন। এর পর থেকে অফিসে গেলে হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর করতে বাধাগ্রস্ত করতেন।

অভিযোগের নথি সূত্রে জানা যায়, এর আগে উপজেলার ছাইঙ্গ্যা ইউপির ১ নম্বর ওয়ার্ডে খুশিদা নাহারের নামে বরাদ্ধকৃত আশ্রয়ন প্রকল্পের একটি ঘর কোন ঠিকাদার নির্মাণ করতে রাজি না হওয়ায় ঘরটি ফয়সালকে নির্মাণ করে দিতে বলেন। একাজে ফয়সাল অপারগতা জানালেও, লোকসান হলে ইউএনও ক্ষতিপূরণ দিবে বলে প্রতিশ্রুতি প্রদান করেন। আশ্বাস পেয়ে ২,৮৩,৫০০ (দুই লক্ষ তিরাশি হাজার পাঁচশ) টাকা সরকারি বরাদ্ধের ঘর নির্মানের কাজ শুরু করলে ইউএনও ফয়সালের মাধ্যমে প্রথম ধাপে ১,৫০,০০০ (এক লক্ষ পঞ্চাশ হাজার) টাকা ব্যাংক থেকে উত্তোলন করান। সেখান থেকে উপজেলা নির্বাহী অফিসার ৪০,০০০ (চল্লিশ হাজার) টাকা নিজে রেখে দিয়ে ১,১০,০০০ (একলক্ষ দশ হাজার) টাকা প্রদান করেন। দ্বিতীয় ধাপে ৫০,০০০ (পঞ্চাশ হাজার) ও পরবর্তীতে আরও ৪০,০০০ (চল্লিশ হাজার) সহ মোট ২,০০,০০০ (দুই লক্ষ) টাকা প্রদান করেন। একপর্যায়ে কাজের জন্য প্রদত্ত টাকা শেষ হয়ে গেলে বাকী কাজ শেষ করতে ইউএনও’র নিকট টাকা চাহিতে গেলে, তিনি (ইউএনও) বলেন, তুই কাজ নিয়েছিস তুই যেমনে পারিস কাজটি শেষ করে বুঝায় দে, না হলে চাকুরিচ্যুত ও মামলা করবেন বলে হুমকি প্রদান করেন। উপায় না পেয়ে ঋণ গ্রহণ করে কাজটা চালিয়ে যান। বর্তমানে আর্থিক অস্বচ্ছলতার কারণে উপায়-আন্ত না দেখে পাওনা টাকা ফিরে পেতে গত কাল ৬ নভেম্বর ইউএনওর বিরুদ্ধে জেলা প্রশাসক বরাবর লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এই অফিসের এক কর্মচারী জানান, মো. খোরশেদ আলম চৌধুরী রোয়াংছড়ি ইউএনও ও ভূমি অফিসের দ্বায়িত্ব গ্রহনের পর ফয়সালকে বাসায় কাজ করার জন্য নিয়ে যান। পরে ফয়সালকে দিয়ে বাজার করানো, ছেলেকে স্কুলে আনা নেওয়াসহ বাসার সব কাজকর্ম করাতেন। পরে সমস্যা হওয়ায় ফয়সালের বেতন বন্ধ ও অফিসে না আসার জন্য বলেছেন।

NewsDetails_03

রোয়াংছড়ি উপজেলার ছাইঙ্গ্যা ইউপির ওয়ার্ড সদস্য মো.মোরশেদ জানান, ১ নম্বর ওয়ার্ডে খুশিদা নাহারের নামে একটি প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘর বরাদ্ধ হয়। সে ঘরটি নির্মাণে ভূমি অফিসের ফয়সাল দায়িত্ব পায়। পরে ঘরটির লিন্টার পর্যন্ত করার পর অজানা কারনে দীর্ঘদিন কাজটি বন্ধ ছিল।

এবিষয়ে রোয়াংছড়ি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ও সহকারী কমিশনার ভূমি মো. খোরশেদ আলম চৌধুরী বলেন, ফয়সাল জেলা প্রশাসক বরাবর অভিযোগ করেছেন। জেলা প্রশাসক যদি অর্থ দেওয়ার সিদ্ধান্ত দেন তাহলে তার অর্থ পরিশোধ করা হবে। ফয়সালের মুজিব বর্ষের ঘরের অর্থ আত্মসাত করে।

এই বিষয়ে বান্দরবান জেলা প্রশাসক শাহ্ মোজাহিদ উদ্দিন জানান, ইউএনও’র বিরুদ্ধে অভিযোগকারী ফয়সালের বিরুদ্ধেও অভিযোগ রয়েছে, ইউএনও’র বিরুদ্ধেও অভিযোগ প্রমানিত হলে আইনি পদক্ষেপ গ্রহন করা হবে।

উল্লেখ্য, প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘর নির্মান নিতিমালা পর্যালোচনা করে দেখা যায় ৩ নম্বর অধ্যায়ে উপজেলা কর্মকর্তা আয়ন ব্যয়ন কর্মকর্তা হিসেবে দ্বায়িত্ব পালন করেছেন।

আরও পড়ুন