এই ব্যাপারে বান্দরবান কৃষি বিভাগের (ভারপ্রাপ্ত) উপ পরিপরিচালক মো: ওমর ফারুক আজ বুধবার সকালে পাহাড়বার্তাকে বলেন, পাহাড়বার্তা’য় সংবাদ প্রকাশের পর গত ২০ মে জেলার রোয়াংছড়ির উপ সহকারী কৃষি কর্মকর্তা প্রকাশ চন্দ্র বড়ুয়া’কে শোকজ করা হয়েছে। তিনি আরো বলেন, তদন্ত্র সাপেক্ষে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য আমরা পাহাড়বার্তার এই সংবাদের কাটিংসহ উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষকে পত্র পাঠিয়েছি।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, কর্মস্থলে দিনের পর দিন অনুপস্থিত থেকে জেলার উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা চন্দ্র প্রকাশ বড়ুয়া তিনটি গণমাধ্যমের বান্দরবান ব্যুরো প্রধান হিসাবে দায়িত্ব পালন করছেন। নিজ কর্মস্থলে দায়িত্ব পালন না করে সাংবাদিক হিসাবে দায়িত্ব পালন ছাড়াও তিনি বান্দরবান বেতারে সংবাদ পাঠক হিসাবে দায়িত্ব পালন করা এবং জেলার ৭টি উপজেলার বেতারের বহিরাঙ্গন অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকেন । যার তথ্য প্রমান পাহাড়বার্তার কাছে সংরক্ষিত আছে।
আরো জানা গেছে, বাংলাদেশের বিধান অনুযায়ী একজন সরকারি চাকুরিজীবী কোন গণমাধ্যমে কাজ করা ও একই সাথে একাধিক প্রতিষ্ঠান থেকে বেতন ও ভাতা গ্রহন করতে পারেন না, এটি সরকারের চাকরীবিধি লঙ্ঘন। তিনি বান্দরবান বেতার ও তিন গণমাধ্যম থেকে ভাতা উত্তোলন করেন। এই ধরণের একটি সংবাদ পাহাড়বার্তায় প্রকাশের পর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আলোচনার ঝড় উঠে, অনেকে এই উপ সহকারী কৃষি কর্মকর্তার বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার দাবী জানান।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, উপ সহকারী কৃষি কর্মকর্তা চন্দ্র প্রকাশ বড়ুয়া, ওরফে প্রকাশ চন্দ্র বড়ুয়া/ প্রকাশ বড়ুয়া, ২০১৮ সাল থেকে তার কর্মস্থল জেলার রোয়াংছড়িতে। সরকারী দায়িত্বে অনুপস্থিত থেকে কবি, গীতিকার, সংবাদ পাঠক, উপস্থাপক এবং সর্বশেষ সাংবাদিক হিসাবে এই সরকারী কর্মকর্তা নিজেকে পরিচয় দিতে সাচ্ছন্দবোধ করেন। নিজ কর্মস্থলে অনুপস্থিত থেকে অফিস সময়ে কৃষি বিভাগের মাঠ পরিদর্শনের কথা বলে অধিকাংশ সময় দোয়েল টিভি, সকালের বার্তা এবং আজকের কর্ণফুলী পত্রিকার বান্দরবান ব্যুরো প্রধান এর দায়িত্ব এবং বেতারে সংবাদ পাঠ করে সময় ব্যয় করেন। রোয়াংছড়িতে দায়িত্ব পালনের আগে এই কর্মকর্তা জেলার রুমা ও লামা উপজেলায় দায়িত্ব পালনকালে তিনি কর্মস্থালে অনুপস্থিত থেকে ব্যবসা-বাণিজ্যে জড়িয়ে পড়েন।
এই ব্যাপারে অভিযুক্ত রোয়াংছড়ির উপ সহকারী কৃষি কর্মকর্তা চন্দ্র প্রকাশ বড়ুয়া ওরফে প্রকাশ চন্দ্র বড়ুয়া পাহাড়বার্তাকে বলেন, আমি কয়েকদিন ধরে অসুস্থ, শোকজের বিষয়টি শুনেছি, পত্র পেলে আমি শোকজের জবাব দিব।
প্রকাশ চন্দ্র বড়ুয়া সপ্তাহের সোমবার ছাড়া রোয়াংছড়িতে অন্যদিন আসেন না। এই প্রসঙ্গে রোয়াংছড়ি সদর ব্লকের রোয়াংছড়ি পাড়ার কৃষক চাইসাথুই মারমা ও মিসিংঅং মারমা পাহাড় বার্তাকে বলেন, এই ব্লকে কৃষি কর্মকর্তার দায়িত্বে কে আছেন কৃষকেরা এখনো পর্যন্ত জানেন না। তার কর্মস্থল জেলার রোয়াংছড়িতে হলেও তিনি পরিবার নিয়ে জেলা শহরের বালাঘাটায় বসবাস করেন, বান্দরবান বেতার ও জেলায় সাংবাদিকতা করার সুবিধার্থে।
এদিকে পাহাড়বার্তার সংবাদের পর এই উপ সহকারী কৃষি কর্মকর্তা প্রকাশ চন্দ্র বড়ুয়া প্রশাসনিক শাস্তি ঠেকাতে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিসহ বিভিন্ন মাধ্যমে তদবির করছেন বলে জানা গেছে। আজ বুধবার সকালে এই দূর্নীতিবাজ কর্মকর্তার জন্য তদবির করেন রোয়াংছড়ির সদর ইউপি চেয়ারম্যান চহ্লা মং মার্মা। চহ্লামং সকালে দুই দফায় পাহাড়বার্তাকে ফোন করে এই উপ সহকারী কৃষি কর্মকর্তার বদলি ঠেকাতে তদবির করেন। আওয়ামীলীগের দলীয় মনোনয়নে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়ে একজন দূর্নীতিবাজ ও সরকারী দায়িত্ব অবহেলাকারীকে বাঁচাতে এই জনপ্রতিনিধির তদবিরে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে, এই জনপ্রতিনিধি রোয়াংছড়ির কৃষকসহ জনগনের মূখপাত্র, নাকি দূর্নীতিবাজ ও সরকারী দায়িত্ব অবহেলাকারীর মূখপাত্র।