লকডাউনে যেমন কেটেছে বান্দরবানের দিনমজুরদের জীবন

করোনা ভাইরাসের আতঙ্কে থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে পুরো বিশ্বে। করোনার সংক্রামন প্রতিরোধে সারা বিশ্বের সাথে সাথে পাল্লা দিয়ে জ্যামিতিক হারে বাংলাদেশেও পড়েছে এর প্রভাব।

প্রতিদিন বাড়ছে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা। সেই সাথে পাহাড়ী জেলা বান্দরবানেও বাদ পড়েনি করোনার ছোবল থেকে। গত ২৫ মার্চ থেকে সারাদেশের সাথে তাল মিলিয়ে বান্দরবান জেলাতে ও চলছে অঘোষিত লকডাউন। আর এই লকডাউনের কারনে কর্মহীন হয়ে পড়ে অনেক শ্রমজীবী মানুষ। যার ফলে মানবেতর জীবন যাপন করছে জেলার বিভিন্ন স্থরের শ্রমজীবী মানুষ।

প্রাণঘাতী করোনা ভাইরাসের প্রভাব পড়েছে বান্দরবানে দিন মজুর শ্রমজীবী মানুষের জীবনে। এতে সংকটে পড়ে শ্রমজীবি মানুষ। মানবিক বিপর্যয়ে কাটাতে এসব দিন মজুরদের পাশে বিভিন্ন মানবিক সাহায্য সহযোগিতা নিয়ে দাঁড়িয়েছে সরকারি-বেসকারি প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি সামাজিক ও রাজনৈতিক বিভিন্ন সংগঠন। যদিওবা জেলায় চাহিদা পরিমান ত্রাণ দেওয়া হলেও পারিবারিক বিভিন্ন চাহিদা পূরণের আর্থিক ভাবে হিমশিম খেতে হচ্ছে এসব শ্রমজীবি মানুষের ।

লকডাইনের সময় কর্মহীন হয়ে বান্দরবানে মানবেতর দিন কাটে রিক্সা চালক, দিন মজুর, ছোট দোকানদার, বিভিন্ন হোটেল মোটেলের কর্মচারী, রং মিস্ত্রী, মুচি (ঋষী সম্প্রদায়), বিভিন্ন ছোট বড় পরিবহণের সাথে জড়িত শ্রমজীবী শ্রেণির মানুষেরা।
করোনার এই মহামারীতে বিপাকে পড়া দিনমজুররা বলছেন, করোনা আমাদের জীবন জীবিকা থমকে দিয়েছে।

বান্দরবান জেলা শহরের একজন রিক্সা চালক আবদুল করিম বলেন, আমাদের জীবন কাটছে কোন রকম, আগের মত আয় রোজগার নেই, নেই মানুষের চলাচলও ৷ তাই আগে দিনে যেখানে ছয়-সাতশ টাকা রোজগার করতাম এখন তা একশত থেকে দুইশ টাকা আয় করতে হিমশিম খেতে হয়।

করোনার কারণে প্রথম থেকে বান্দরবান শহরে বন্ধ রয়েছে অটো রিক্সা (টম টম/ইজি বাইক)। যারা অটো রিক্সা চালান তাদের অবস্থাও নাজুক ৷ যারা দিন মজুরের কাজ করেন তাদের হাতেও এখন তেমন কাজ নেই ৷ আজ রোববার থেকে লাকডাউন কিছুটা শিথিল করার কারনে মানুষের কাজ কর্ম বাড়বে।

দুধ বিক্রেতা মোহাম্মদ হামিদের বলেন, বাসায় মাস ভিত্তিতে দুধ বিক্রি করি আমি । এখন অনেকেই আর দুধ নেন না ৷ বিক্রি অর্ধেকের নিচে নেমে গেছে ৷ কেউ কেউ বাসায়ই যাওয়া নিষিদ্ধ করে দিয়েছেন ৷ বলেছেন করোনা ভাইরাস শেষ হলে যোগাযোগ করতে ৷

বান্দরবানে মুচি (ঋষি সম্প্রদায়) পরিমল ঋষি বলেন, লকডাউন হওয়া পর থেকে মানুষ জুতা সেলাই করতে আসে না । অন্যদিকে দোকান পাট বন্ধ রাখতে হয়। যার ফলে আয়-রোজগার নেই বললেই চলে। এখন পরিবার পরিজন নিয়ে জীবন চালানো দায় হয়ে দাড়িয়েছে। এসময় তিনি আরো বলেন,সরকারি ভাবে ত্রাণ সহায়তা দিয়েছে ঠিকেই, কিন্তু খাবার খেতে আরো অনেক কিছুর প্রয়োজন সব তো আর সরকারি ভাবে দিচ্ছে না।

এদিকে দিনের পর দিন কর্মহীন হয়ে পড়েছে অনেকে। তার সাথে আর্থিক কষ্টে রয়েছেন দিনমজুরা, যারা দিন আনে দিন খাওয়া মানুষদের ৷ তার উপর রয়েছেন নিম্ন আয়ের মানুষেরা ৷ করোনায় শুধু তারাই নন, যারা চাকরিজীবী নিম্ন মধ্যবিত্ত এবং মধ্যবিত্ত সবাই সংকটে আছেন৷

জেলা স্বাস্থ্য বিভাগের তথ্যে মতে, এই পর্যন্ত বান্দরবানে ৩১ জনের শরীরে করোনার পজেটিভ পাওয়া যায়। তবে এখনো পর্যন্ত করোনায় আক্রান্ত হয়ে কেউ মারা যায়নি ।

আরও পড়ুন