লামায় পাহাড়ি ঢলের পানিতে নিচু এলাকা প্লাবিত, পানিবন্দি ১০ হাজার

খোলা হয়েছে ৫৫টি আশ্রয় কেন্দ্র

টানা মাঝারি থেকে ভারী বর্ষণের ফলে উজান থেকে নেমে আসা সৃষ্ট পাহাড়ি ঢলের পানি বান্দরবান জেলার লামা পৌর এলাকাসহ উপজেলার ৭টি ইউনিয়নের বিভিন্ন স্থানের নিচু এলাকায় ঢুকে পড়েছে। মাতামুহুরী নদী, লামা খাল, বমু খাল, ইয়াংছা খাল, বগাইছড়ি খাল, ও পোপা খাল সহ বিভিন্ন স্থানের পাহাড়ি ঝিরিগু গুলোতে অস্বাভাবিক ভাবে পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় পানিবন্দি হয়ে পড়েছে বিভিন্ন পেশাজীবির প্রায় ১০ হাজার মানুষ। কর্মহীন হয়ে বেকায়দায় পড়েছে ওইসব এলাকার শ্রমজীবি মানুষগুলো। দোকান ও ঘরবাড়ির মালামালসহ গৃহ পালিত পশু নিরাপদে সরিয়ে নিতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন পাহাড়ি ঢলে আক্রান্তরা।

এদিকে প্রবল বর্ষণে পাহাড় ধসে প্রাণহানির আশঙ্কায় পাহাড়ে ঝুঁকিপূর্ণ বসবাসকারীদেরকে নিরাপদে আশ্রয় নিতে বিভিন্ন মাধ্যমে মাইকিং শুরু করেছে উপজেলা প্রশাসন, পৌরসভা ও ইউনিয়ন পরিষদ গুলো। পাশাপাশি দূর্যোগ কবলিতরা আশ্রয় নিতে ৫৫টি বিদ্যালয়কে আশ্রয়ন কেন্দ্র হিসেবে খোলা রাখা হয়েছে। আজ রবিবার বিকেল নাগাদ মাতামহুরী নদীর পানি বিপদসীমা অতিক্রম করে প্রবাহিত হচ্ছে বলে জানান, বান্দরবান পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্মকর্তা অরুপ চক্রবর্তী।

উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. মোস্তফা জাবেদ কায়সার ও পৌরসভা মেয়র মো. জহিরুল ইসলাম পৌরসভা এলাকার পাহাড় ধ্বস প্রবণ ও প্লাবিত এলাকাগুলো সরেজমিন পরিদর্শন করে আক্রান্তদের নিরাপদে সরে যেতে তাগাদা দেন। এ না ভারী বর্ষণ অব্যাহত থাকলে উপজেলা শহর ডুবে ও পাহাড় ধসে মানবিক বিপর্র্যয়ের আশঙ্কা করছেন স্থানীয়রা।

স্থানীয় সূত্র জানায়, গত বুধবার দিনগত রাত থেকে মুষুলধারে প্রবল বর্ষণ শুরু হয়। আর এ টানা বর্ষণের ফলে উপজেলায় অবস্থিত নদী, খাল ও ঝিরির পানি ফুঁসে উঠে পৌরসভা এলাকার নয়াপাড়া, বাসস্টেন্ড, টিএন্ডটি পাড়া, বাজারপাড়া, গজালিয়া জিপ স্টেশন, লামা বাজারের একাংশ, চেয়ারম্যান পাড়ার একাংশ, ছোট নুনারবিলপাড়া, বড় নুনারবিলপাড়া, থানা এলাকা, ফাঁসিয়াখালী ইউনিয়নের ইয়াংছা বাজাররসহ বিভিন্ন ইউনিয়নের কিছু নিচু এলাকা প্লাবিত হয়। এতে পৌর এলাকার হলিচাইল পাবলিক স্কুলসহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, সরকারী বেসরকারী সংস্থার কার্যালয়সহ শতশত ঘরবাড়ী ও দোকান পাঠ রয়েছে। একই সময় উপজেলার বিভিন্ন স্থানের গ্রামীণ সড়কগুলো কোথাও ভাঙ্গন দেখা দিয়েছে।

অন্যদিকে লামা-আলীকদম সড়কের কেয়ারারঝিরি, লাইনঝিরি ও তৈন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র এলাকা পানিতে ডুবে যানচলাচল যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায়। অপর দিকে অতি বর্ষণ ও পাহাড়ী ঢলের কারণে পৌর এলাকাসহ উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে চলতি মৌসুমের বীজতলা এবং বিভিন্ন ফসলাদি পানির নিচে তলিয়ে গেছে বলে কৃষকরা জানিয়েছেন।

NewsDetails_03

ফাঁসিয়াখালী ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান নুরুল হোছাইন চৌধুরী জানায়, পাহাড়ি ঢলের পানিতে ইয়াংছা বাজারের সহ বিভিন্ন স্থানের নিন্ম এলাকা প্লাবিত হয়েছে। ইউনিয়নের বিভিন্ন স্থানের পাহাড়ে ঝুকিপূর্ণ বসবাসকারীদেরকে নিরাপদে সরে যাওয়ার জন্য তাগাদা দেয়া হচ্ছে।

এছাড়া লামা সদর ইউনিয়নে মেরাখোলার নিচু এলাকা প্লাবিত হয়ে বেশ কয়েকশ মানুষ পানি বন্ধি হয়ে হওয়ার পাশাপাশি পাহাড় ধসে পোপা-বলিয়ারচর সড়ক যোগাযোগ বন্ধ ও ৪-৫টি ঘর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে জানান ইউপি চেয়ারম্যান মিন্টু কুমার সেন।

রুপসীপাড়া ইউপি চেয়ারম্যান ছাচিংপ্রু মার্মা বলেন, ঢলের পানিতে দরদরী এলাকায় সড়ক ডুবে গিয়ে তার ইউনিয়নের সাথে উপজেলা সদরের সড়ক যোগাযোগ বন্ধ সহ পাহাড় ধসে রাস্তা ঘাটের বেশ ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। অন্য ইউনিয়নগুলোতেও পাহাড় ধসে রাস্তা ঘাট ও মৎস্য খামারের ক্ষতি হয়েছে।

লামা উপজেলা শহরের ব্যবসায়ী মো. ইরাক, ডন, জাকির হোসেন, পিপলু সহ আরো অনেকে বলেন, প্রতিবারের মত এবারও টানা বৃষ্টির কারণে প্রথম বারের মত প্লাবিত হয়েছে লামা বাজারের একাশংসহ আশপাশের নিচু এলাকা সমূহ। বাজার ব্যবসায়ীরা বিকাল থেকে দোকানের মালামাল নিরাপদে সরিয়ে নিতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন।

এ বিষযে লামা পৌরসভা মেয়র মো. জহিরুল ইসলাম বলেন, পৌরসভার কাউন্সিলরদের সমন্বয়ে বন্যা পরিস্থিতি সার্বক্ষনিক তদারকি করার জন্য কমিটি গঠন করার পাশাপাশি প্লাবিত লোকজনকে নিরাপদে কিংবা আশ্রয় কেন্দ্রে সরিয়ে নিতে নৌকার ব্যবস্থা করা হয়েছে।

এ বিষয়ে লামা উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. মোস্তফা জাবেদ কায়সার বলেন, পাহাড়ে ঝুঁকিপুর্ণ বসবাসকারীদেরকে নিরাপদে সরে যাওয়ার জন্য প্রশাসনের পক্ষ থেকে মাইকিং করে সচেতন করা হয়েছে।

আরও পড়ুন