লামার পৌর এলাকার সড়ক : যেন গাঁয়ের মেঠো পথ

NewsDetails_01

লামা পৌর শহরের চৌরাস্তা মোড়ের দৃশ্য
বান্দরবানের লামা পৌরসভা এলাকার অভ্যন্তরীণ ২২ কিলোমিটার সড়কের মধ্যে ১২-১৫ কিলোমিটারই ভেঙ্গে তছনছ হয়ে গেছে। দীর্ঘদিনেও এসব সড়ক সংস্কার না করায় স্বাভাবিক যানচলাচল ব্যাহত হয়ে সৃষ্টি হয়েছে চরম জনভোগান্তি। দু’একটি ছাড়া বিধস্ত হওয়া অন্য সড়কগুলো সংস্কারের উদ্যোগ না নেওয়ায় জনমনে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। পৌরসভা এলাকার বিভিন্ন ওয়ার্ড ঘুরে সড়ক ক্ষতবিক্ষত হওয়ার চিত্র দেখা যায়। একটানা প্রবল বর্ষণ, ঠিকাদার কর্তৃক সংস্কার ও নির্মাণ কাজে নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহার, অনিয়ম এবং পাহাড়ি ঢলের সৃষ্ট বন্যার কারণে এসব গ্রামীণ সড়ক ক্ষতবিক্ষত হয় বলে জানান স্থানীয়রা। বিধস্ত সড়কগুলো পুণরায় সংস্কারে প্রায় ৫ কোটি টাকার প্রয়োজন। বরাদ্দ না থাকায় এসব সংস্কার করা যাচ্ছেনা বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।
লামা পৌরসভা সূত্রে জানা যায়, পৌরসভার আওতাধীন প্রায় ২২ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের ২০-২২টি কাচা-পাকা সড়ক রয়েছে। এসব সড়ক নির্মাণ করে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর। কয়েক বছর আগে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর এসব সড়কগুলো পৌরসভা কর্তৃপক্ষকে হস্তান্তর করে। ভেঙ্গে যাওয়ায় ইতিমধ্যে লামা-মেরাখোলা সড়ক, কলিঙ্গাবিল-লাইনঝিরি সড়ক, হাসপাতাল পাড়া সড়ক সংস্কার করা হয়েছে। বাকি সড়কগুলোর বেহাল অবস্থা বিরাজ করছে।
খোদ পৌরসভা এলাকার প্রাণ কেন্দ্র শহরের চৌরাস্তা, লামামুখ সড়ক, লামা থেকে কুড়ালিয়ার টেক সড়ক, নুনারঝিরি সড়কসহ বিভিন্ন সড়ক সরজমিন পরিদর্শনে দেখা যায়, সড়কের কোন কোন স্থানে কার্পেটিং উঠে গিয়ে সৃষ্টি হয়েছে খানা-খন্দ। অনেক স্থানে সড়কের বুকে সৃষ্টি হয়েছে ছোট খাট মিনি পুকুর। আবার কোথাও সড়কের দু’পাশ ধসে গিয়ে গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত সড়ক দিয়ে আবার কোথাও কোথাও যানচলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। অনেককেই পায়ে হেঁটে সড়কের ভাঙা অংশ পাড়ি দিতে হচ্ছে। উভয় পাশে কোন ড্রেন না থাকায় বেশিরভাগ সড়কের দু’পাশ ধসে পড়েছে। আবার বর্ষণের সময় কযেকটি সড়কের ওপর পাহাড়ের মাটি ধসে পড়েছে। ভেঙ্গে পড়া সড়কগুলোর মধ্যে লামামুখ সড়ক, কুডালিয়ার টেক সড়ক, রওজার ঝিরি সড়ক, নুনারঝিরি সড়ক, রাজবাড়ী সড়ক, নারকাটাঝিরি সড়ক উল্লেখযোগ্য। এছাড়া ছোট খাট অনেক সড়ক রয়েছে, যা দিয়ে হাটা চলা কষ্টকর হয়ে পড়েছে।
স্থানীয় সাহেব আলী, ফারুক, মোস্তফাসহ আরও অনেকে বলেন, ক্ষতিগ্রস্ত সড়কের মধ্যে ২-৩টি জনগুরুত্বপূর্ণ সড়ক সংস্কার করা হলেও কাজে অনিয়ম দুর্নীতির কারণে পুনরায় সড়ক ভেঙ্গে চলাচল অনুপযোগী হয়ে পড়ছে। সামান্য বৃষ্টি হলেই সড়কের গর্তে পানি জমে মিনি পুকুরে পরিণত হয়। এতে যানবাহন চলাচল দূরে থাক, পায়ে হাটাও কষ্টদায়ক হয়ে পড়েছে। এদিকে শহরের কয়েকজন ব্যবসায়ী বলেন, পৌরসভা মার্কেট থেকে গোপাল বাবুর মোড, গোপাল বাবুর মোড থেকে পোষ্ট অফিস পর্যন্ত এবং গোপাল বাবুর মোড থেকে চৌরঙ্গী হোটেল পর্যন্ত সড়কের ওপর বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। একটু বৃষ্টি হলেই এসব গর্ত মিনি পুকুরে পরিণত হয়। এতে পায়ে হাটাও দায়। দীর্ঘদিন ধরে এ অবস্থা বিরাজ করলেও সংস্কারের কোন উদ্যোগ দেখা যায়নি। এতে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন স্থানীয়রা জনাসাধারণ। দ্রæত সড়কগুলো সংস্কারের দাবী জানান তারা।
স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের লামা উপজেলা সার্ভেয়ার মো. জাকির হোসেন মোল্লা বলেন, সাম্প্রতিক বন্যা ও চলমান বর্ষায় পৌরসভা এলাকার সড়কগুলোর ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। বরাদ্দ প্রাপ্তি সাপেক্ষে সংস্কারের উদ্যোগ নেয়া হবে। ইতিমধ্যে তিনটি সড়কের সংস্কার করা হয়েছে।
এ বিষয়ে লামা পৌরসভার মেয়র মো. জহিরুল ইসলাম বলেন, সাম্প্রতিক বর্ষণে পৌরসভা এলাকার ২২ কিলোমিটার সড়কের মধ্যে ১২-১৫ কিলোমিটার সড়কই ভেঙ্গে গেছে। এসব সংস্কার করতে প্রায় ৫ কোটি টাকার প্রয়োজন। সংস্কারের জন্য বরাদ্দ চেয়ে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠানো হয়েছে। বরাদ্দ প্রাপ্তি সাপেক্ষে সড়ক সংস্কার করা হবে বলেও জানান তিনি।

আরও পড়ুন