লামার যে কাঁচা সড়ক নিয়ে ৪০ বছর ধরে দুর্ভোগে কয়েক হাজার মানুষ

NewsDetails_01

বান্দরবান জেলার লামা উপজেলার সরই ইউনিয়ন সদরের ক্যয়াজুপাড়া বাজার সংলগ্ন মাইজ্জা মিয়ার বাড়ী থেকে আন্দারী জামালপুর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় পর্যন্ত একটি জনগুরুত্বপূর্ণ কাঁচা রাস্তা রয়েছে। শুষ্ক মৌসুমে এ রাস্তা দিয়ে কোন মতে যাতায়াত করা গেলেও বর্ষা মৌসুমে একটু বৃষ্টি হলেই পুরো রাস্তা জুঁড়ে পানি আর কাদায় একাকার হয়ে যায়। তখন যাতায়াতের আর উপযুক্ত থাকেনা। কিন্তু বিকল্প কোন ব্যবস্থা না থাকায় ৫টি ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠি ও বাঙ্গালী পাড়ার তিন শতাধিক পরিবারের মানুষকে এ রাস্তা দিয়েই যাতায়াত করতে হয়। গত ৪০ বছরেও এ রাস্তায় উন্নয়নের ছোঁয়া কিংবা পাকা না হওয়ায় চরম দুর্ভোগে আছেন ওই পাড়াগুলোর শিশু শিক্ষার্থীসহ কয়েক হাজার মানুষ।

শুধু তাই নয়, ওই এলাকায় গড়ে ওঠা বিভিন্ন ফলজ বাগান মালিক ও কৃষকরা উৎপাদিত ফসল বাজারজাত নিয়েও বিপাকে আছে এ রাস্তাটির কারণে। এছাড়া কেউ হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়লে দ্রুত ইউনিয়ন কিংবা উপজেলা স্বাস্থ্য কেন্দ্রে নিতেও পড়তে হয় বিড়ম্বনায়। রাস্তাটি ব্রিক সলিং করা হলে একদিকে যেমন বিভিন্ন গ্রামের ছাত্র-ছাত্রী ও লোকজনের যাতায়াতে ভোগান্তি কমবে, অন্যদিকে মুমূর্ষু রোগী ও কৃষি পণ্য বহনে বেগ পেতে হবে না। তাই রাস্তাটি ব্রিক সলিং করার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণে পার্বত্যমন্ত্রী বীর বাহাদুর উশৈসিং এমপি’র হস্তক্ষেপ কামনা করেন ভুক্তভোগীসহ এলাকাবাসী।

এলাকাবাসী জানায়, ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠি পদ্মমনি হেডম্যান পাড়া, দূর্যধন হেডম্যান পাড়া, চান্দামা ঝিরি ও কুতুবদিয়া পাড়াসহ বিভিন্ন গ্রামের তিন শতাধিক পরিবারের লোকজন যাতায়াত করে আসছে দীর্ঘ ৪০ বছর ধরে। এছাড়া এ রাস্তার উভয় পাশে বিভিন্ন ধরণের ফলজ ও বনজ বাগান গড়ে ওঠেছে। যা পাহাড়ি জনগোষ্ঠির আর্থ সামাজিক উন্নয়ন ঘটায়। কিন্তু রাস্তাটি পাকা না করায় প্রতি বছর বর্ষা মৌসুমে বৃষ্টিপাতের কারণে বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হয়ে কাদামাটিতে একাকার হয়ে যায়। এ কারণে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা নিয়মিত বিদ্যালয়েও যেতে পারে না। অথচ আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহার ২০১৮-তে একটা গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গীকার আছে। তাতে বলা হয়েছে, পাকা সড়কের মাধ্যমে সকল গ্রামকে জেলা-উপজেলা শহরের সঙ্গে সংযুক্ত করা হবে। ছেলেমেয়েদের উন্নত পরিবেশে লেখাপড়ার সুযোগ তৈরি করা হবে।

NewsDetails_03

এদিকে ক্ষোভ প্রকাশ করে কুতুবদিয়া পাড়ার জয়নাল আবেদীন ও হেডম্যান পাড়ার দুর্যধন বলেন, গত ৪০ বছরে এ রাস্তায় একটি ইট পর্যন্ত পড়েনি। পাকা না করায় প্রতি বর্ষা মৌসুমে রাস্তাটি আমাদের দুর্ভোগের কারণ হয়ে ওঠে। ফলে কোনো ভ্যান, সাইকেল, মোটরসাইকেল তো দূরের কথা, মানুষ পায়ে হেঁটে চলতেও কষ্টের শিকার হন।

তারা আরো বলেন, সামান্য বৃষ্টি হলেই একেবারে চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়ে। বৃষ্টির ফোটা পড়ার পরেই কাঁদা পানিতে একাকার হয়ে যায়। প্রচন্ড এ কাঁদায় চলতে গিয়ে অনেকেই পা পিছলে পড়ে গিয়ে গন্তব্যে যাবার আগেই বাড়িতে ফিরে আসতে বাধ্য হন। শিক্ষার্থীরা সময় মতো স্কুল কলেজে যেতে পারে না।

এ বিষয়ে সরই ইউনিয়নের ৪নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি খুলু মিয়া (৭০) জানায়, আমরা বান্দরবান পার্বত্য জেলা পরিষদসহ সরকারের বিভিন্ন দপ্তরে আবেদন করেছি বহুবার। কিন্তু কোন কাজ হয়নি। তাই হাঁটু পরিমাণ কর্দমাক্ত রাস্তা পাড়ি দিয়েই হাট-বাজার. শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে যেতে হয় এলাকার মানুষকে। নির্বাচন এলেই জনপ্রতিনিধিরা এ রাস্তাটি পাকা করার প্রতিশ্রুতি দেন। কিন্তু নির্বাচনের পরে আর কেউ এর খোঁজ রাখেন না।

এই ব্যাপারে ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ফরিদ উল আলম বলেন, রাস্তাটি ব্রিক সলিং করার জন্য এলজিইডি’তে আবেদন করেছিলাম। কিন্তু রাস্তাটি ৪০ বছর ধরে কাঁচাই রয়ে গেল। প্রতিবছর বর্ষা মৌসুমে রাস্তার অবস্থা এতই খারাপ হয় যে, এই এলাকার স্কুল-কলেজে শিক্ষার্থীসহ ৫ গ্রামের মানুষ ঠিকমতো চলাচল করতে পারে না। জনদুর্ভোগ লাঘব করতে সড়কটি দ্রুত পাকা করা প্রয়োজন।

আরও পড়ুন