লামায় গভীর রাতে কৃষক দম্পত্তিকে নির্যাতনের পর অপহরণের অভিযোগ
বান্দরবানের লামা উপজেলায় এক কৃষক দম্পত্তিকে গভীর রাতে নির্যাতনের অভিযোগ পাওয়া গেছে। শুধু তাই নয়, নির্যাতনের পর কৃষককে অপহরণ করে পাশের উপজেলায় নিয়ে আটকে রাখারও অভিযোগ উঠেছে। ঘটনাটি ঘটেছে উপজেলার গজালিয়া ইউনিয়নের দুর্গম পাহাড়ি বাতেনটিলার মুসলিম পাড়ায়।
লামা উপজেলার কাছাকাছি চকরিয়া উপজেলার বমুবিলছড়ি ইউনিয়নের বাসিন্দা আবদু রহিম, সাইফুল ইসলাম, আবদুল করিম ও মোসাদ্দেক সহ অজ্ঞাত আরো ৫ জন সংঘবদ্ধ হয়ে কৃষক তাজুল ইসলাম ও তার স্ত্রী হাসিনা বেগমকে নির্যাতন করে। এ ঘটনায় ভুক্তভোগী হাসিনা বেগম বাদী হয়ে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে রবিবার উপজেলা সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলা করা হয়েছে।
অভিযোগে জানা যায়, কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলার বমুবিলছড়ির চরোবিলের বাসিন্দা আবদু রহিমের কাছ থেকে ছয় মাস আগে শর্ত সাপেক্ষে তামাক উৎপাদনের জন্য ৮০ হাজার টাকা নেন কৃষক তাজুল ইসলাম। এ টাকাসহ আরো কিছু টাকা একত্র করে তাজুল ইসলাম বাতেনটিলার মুসলিম পাড়ায় ২ একর জমিতে তামাক চাষ করেন। টাকা ফেরতের শর্তে ছিল চলতি বছরের ৩০ বৈশাখ মাসে সুদে আসলে ১ লাখ ৩০ হাজার টাকা আবদু রহিমকে প্রদান করবেন। কিন্তু শর্ত ভঙ্গ করে আবদু রহিম ৩০ বৈশাখের আগেই টাকা চাইতে শুরু করেন। টাকা দিতে না পারায় আবদু রহিমরা বিভিন্ন সময় তাজুল ইসলামকে তুলে নিয়ে টাকা আদায় করবে বলে হুমকি প্রদান করে আসছেন।
আরো জানা গেছে, এক পর্যায়ে গত ১৪ মার্চ দিনগত রাত সাড়ে ১২টার দিকে আবদু রহিমের নেতৃত্বে সাইফুল ইসলাম, আবদুল করিম ও মোসাদ্দেক সহ আরো ৫ জন সংঘবদ্ধ হয়ে তাজুল ইসলামের খামার ঘরে প্রবেশ করে টাকা চাইতে থাকে। তামাক বিক্রি করে বৈশাখ মাসে টাকা দেওয়া কথা বললেও কোন কর্ণপাত না করে বরং কথাকাটাকাটির এক পর্যায়ে কিছু বুঝে উঠার আগে তাজুল ইসলামকে বেঁধে ফেলে। এ সময় মারধরের পাশাপাশি হত্যার ভয় দেখিয়ে ১০০ টাকার তিনটি ননজুডিসিয়াল স্ট্যাম্প ও সোনালী ব্যাংক লামা শাখার একটি অলিখিত চেকে স্বাক্ষর নেন তারা। এরপরেও তারা ক্ষান্ত না হয়ে তাজুল ইসলামকে নিয়ে যেতে চেষ্টা করলে বাঁধা প্রদান করেন স্ত্রী হাসিনা বেগম। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে সংঘবদ্ধ আবদু রহিমরা মারধর করলে হাসিনা বেগম জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন। পরে তারা তাজুল ইসলামকে কাছাকাছি বমুবিলছড়ি ইউনিয়নস্থ মাইজপাড়ার বাসিন্দা মোসাদ্দেকের বাসায় নিয়ে একটি কক্ষে তালাবদ্ধ করে রাখেন। এতে তামাক চুল্লীর আগুন নিভে যাওয়ার ফলে তাজুল ইসলামের প্রায় দেড় লাখ টাকার ক্ষতি হয়।
এদিকে ঘটনা জানতে পেরে স্থানীয়রা আহত হাসিনা বেগমকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করেন। অপরদিকে অপহরণ করে নিয়ে যাওয়ার ঘটনা জানাজানি হলে বমুবিলছড়ি ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মঞ্জুরুল কাদের দ্রুত পদক্ষেপ নেন। পরে ১৫ মার্চ দুপুর ১২টার দিকে কৃষক তাজুল ইসলামকে বমুবিলছড়ি ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যানের হাতে তুলে দিয়ে দ্রুত স্থান ত্যাগ করে আবদু রহিমরা।
ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বাতেনটিলা মুসলিম পাড়ার বাসিন্দা ও ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি সুলতান আহমদ (৮২) বলেন, ১৪ মার্চ দিনগত রাত সাড়ে ১২টার দিকে হঠাৎ চিৎকার শুনে আমি ও আশপাশের লোকজন ঘর থেকে বের হয়ে তাজুল ইসলামের খামার ঘরের দিকে এগিয়ে যাওয়ার আগে আবদু রহিমরা কৃষক তাজুল ইসলামকে নিয়ে চলে যায়। পরে আমরা অজ্ঞান অবস্থায় হাসিনা বেগমকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করি। টাকার জন্য এ ধরণের ঘটনা ঘটনানো অত্যন্ত অমানবিক কাজ হয়েছে।
তবে অভিযোগ অস্বীকার করে অভিযুক্ত আব্দু রহিম জানান, কৃষক তাজুল ইসলাম তামাক চাষের কথা বলে আমার কাছ থেকে টাকা নিয়েছে প্রায় তিন বছর হয়ে গেছে। আজ দিবে কাল দিবে বলে সে বার বার কাল ক্ষেপন করে চলেছে। টাকার জন্য তাজুল ইসলামকে মারধর ও অপহরণের অভিযোগ সত্য নয়।
এ বিষয়ে গজালিয়া ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য উসাচিং মার্মা জানায়, ঘটনাটি আমি লোকমুখে শুনেছি। তবে এ বিষয়ে কেউ আমার কাছে অভিযোগ করেনি।
লামা উপজেলা সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের এ্যডভোকেট মোহাম্মদ ইব্রাহীম জানান, কৃষক তাজুল ইসলাম দম্পত্তিকে মারধর ও অপহরণের অভিযোগে চার জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত আরো ৫ জনকে বিবাদী করে রবিবার উপজেলা সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলা রুজু করা হয়েছে।