বান্দরবানের লামা উপজেলায় তামাক কোম্পানীদের নিবন্ধনকৃত তামাক চাষীরা তামাক ঘরে তুলতে শুরু করে মার্চ মাস থেকে। ইতিমধ্যে নিয়ম মাফিক তামাক পুড়িয়ে বিক্রির উপযোগী করে বাড়িতে স্তুপ করে রাখা হয়েছে তামাক। এদিকে করোনা ভাইরাস সংক্রমনের আশংকায় গত ২৫ মার্চ থেকে উপজেলাকে লকডাউন করে দেয় প্রশাসন। এতে অর্থ সংকটে পড়ে পরিবার পরিজন নিয়ে অনাহারে অর্ধাহারে দিন কাটাচ্ছেন বলে জানা গেছে।
নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে কোম্পানীগুলো তামাক ক্রয় না করলে দেনার দায়ে বাড়ি ঘর ছেড়ে পালিয়ে যাওয়া ছাড়া আর কোন উপায় থাকবেনা বলে জানান চাষীরা। এবারে উপজেলায় বৃটিশ আমেরিকান টোব্যাকো কোম্পানী বাংলাদেশ, আবুল খায়ের টোব্যাকো কোম্পানী, আকিজ টোব্যাকো কোম্পানী, নাছির টোব্যাকো কোম্পানী, জাপান টোব্যাকো কোম্পানী ক্রয়ের নিশ্চয়তার পাশাপাশি অর্থ লগ্নিকরে এ চাষের জন্য উৎসাহিত করে কৃষককে। এরই ধারাবাহিকতায় চলতি মৌসুমে প্রায় ৮ হাজার একর ফসলি জমিতে তামাক চাষ করেন কয়েক হাজার কৃষক।
উপজেলার গজালিয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ও বৃটিশ আমেরিকান টোব্যাকো কোম্পানীর রেজিষ্ট্রেশনকৃত চাষী মো. রবিউল্লাহ লিখিত অভিযোগে জানায়, লামা উপজেলা ও কাছাকাছি বমু বিলছড়ি ইউনিয়নের বেশির ভাগ আবাদী জমিতে বোরো মৌসুমে তামাক কোম্পানীগুলো চাষিদেরকে নিবন্ধন করে তামাক চাষ করতে উৎসাহিত করে। এ চাষের জন্য কোম্পানী অর্থ ও তামাকের উপকরণ সামগ্রীও দেয়। উপজেলার নব্বই শতাংশ মানুষ এ চাষের সাথে কোন না কোনভাবে জড়িত। সে হিসাবে উপজেলার প্রধান অর্থকারী ফসল হলো তামাক।
তিনি অভিযোগে আরো উল্লেখ করেন, এ তামাক চাষ করেই চাষীরা একটু লাভবান হয়। প্রতি বছর তামাক চাষ করতে গিয়ে কোম্পানীর পাশাপাশি চাষীদেরকে অন্যের কাছ থেকেও কর্জ করতে হয়। তামাক নভেম্বর ও ডিসেম্বর মাসে রোপন শুরো শুরু করে। মার্চ- এপ্রিলের দিকে প্রতি বছর তামাক কোম্পানী গুলো চাষিদের কাছ থেকে ক্রয় করে নেয়। এ তামাক বেশি দিন ঘরে রাখলে তার গুণগতমান নষ্ট হয়ে যায়। পরে এ তামাক কোন কাজে আসেনা।
আরো জানা গেছে, নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে তামাক বিক্রয় করতে না পারলে তামাক আর কেউ ক্রয় করেনা। পরে তামাকগুলো যে অবস্থায় আছে সে অবস্থায় পঁচে যায়। অন্যান্য বছর তামাক কোম্পানীগুলো মার্চ মাসের মধ্য সময় থেকে চাষীদের কাছ থেকে তামাক ক্রয় শুরু করতো। কিন্তু এ বছর দেশের সার্বিক দূর্যোগময় পরিস্থিতির অযুহাতে তামাক কোম্পানীগুলো এখনো তামাক ক্রয় শুরু করেনি এবং তামাক ক্রয় করবে কিনা এ ব্যাপারে চাষীদের কিছুই বলছেনা। চাষীদের কাছ থেকে তামাক ক্রয়ের ব্যাপারে আমরা তামাক কোম্পারীর ম্যানাজারদের সাথে কথা বলেছি। তামাক
কোম্পানীর ম্যানাজাররা আমাদেরকে জানিয়েছেন,২০২০সালের উৎপাদিত তামাক ক্রয় করার জন্য হেড অফিস থেকে এখনো অর্ডার আসেনি। সে জন্য চাষিদের উৎপাদিত তামাক ক্রয় করবো কিনা এখনো বলতে পারছিনা। এখন বিশ্বব্যাপী করোনা ভাইরাস প্রকোপের মধ্যে আপাতত তামাক ক্রয় বন্ধ রয়েছে।
এদিকে আরেক চাষী মো. রুহুল আমিন জানিয়েছেন, আমরা তামাক চাষীদের ধারোনা, তামাক কোম্পানী গুলো করোনা ভাইরাসের সুযোগ নিয়ে স্বল্প মূল্যে তামাক ক্রয় করার জন্য বর্তমান সময়ে চাষীদের কাছ থেকে তামাক ক্রয় করছেন না। এখন তামাক ক্রয় না করা মানে হলো চাষীদের জিম্মি করে রাখা। ফলে চলছে চাষীদের ঘরে ঘরে কান্নার রোল।
এদিকে রূপসী পাড়া ইউনিয়ন পরিষদের ১নং ওয়ার্ড সদস্য ও ব্রিটিশ টোবাকোর চাষী মো. আবু তাহের এবং জাপান টোবাকোর চাষী মো. আবু শামা বলেন, ৯৯ শতাংশ তামাক চাষী ধার কর্জ করে এ তামাক ফলিয়েছেন। পাওনাদাররা প্রতিদিন কর্জ টাকা খোঁজতে আসছেন চাষীদের ঘরে ঘরে। আবার এ সময়ের মধ্যে করোনা ভাইরাসে সারা দেশের লকডাউনের কারণে তামাক চাষীদের ঘরে ঘরে খাদ্যের অভাবে হাহাকার চলছে। তাই চাষীদের জীবন বাঁচিয়ে রাখতে দ্রুত তামাক পাতা ক্রয় করার জন্য তামাক কোম্পানীর কাছে অনুরোধ করছি।
এ বিষয়ে তামাক কোম্পানীর লামা উপজেলায় দ্বায়িত্বরতদের সাথে যোগাযোগ করা হলে নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, বিশ্বব্যাপী করোনা ভাইরাসের কারণে জনসমাগম এড়াতে আমরা আপতত তামাক ক্রয় করছিনা। নতুন করে তামাক ক্রয়য়ের আদেশ আসলে আমরা চাষিদের কাছ থেকে তামাক ক্রয় করে নিবো।