লামায় পতিত জমিতে সরিষা চাষ

NewsDetails_01

সরিষা চাষ করে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে নিজেদের ভাগ্য বদলিয়েছেন, এমন কৃষকের সংখ্যা মোটেও হাতেগোনা নয়। দেশের প্রায় সব স্থানে সরিষা চাষ করা গেলেও কয়েকটি এলাকায় এর উৎপাদন অপেক্ষাকৃত কম। এ রকমই একটি এলাকা বান্দরবানের লামা উপজেলা।

তবে চলতি মৌসুমে সরকারী খরচে ও ব্যক্তি উদ্যোগে প্রায় ১০ হেক্টর জমিতে সরিষা চাষ করেছেন বেশ কয়েকজন কৃষক। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় ফলনও ভালো হয়েছে। এতে করে হাসিও ফুটেছে কৃষকদের মাঝে। কিন্তু যথাযথ উদ্যোগের অভাবে এখনো সরিষা চাষে পুরোপুরি আগ্রহী হচ্ছেন না বেশির ভাগ কৃষক। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর প্রশিক্ষণের মাধ্যমে আরো বেশি কৃষকদের সরিষা চাষে উদ্বুদ্ধ করলে, ক্ষতিকারক তামাক চাষের পরিবর্তে এ উপজেলার কৃষকরা সরিষা চাষ করে স্বাবলম্বী হতে পারবেন। পাশাপাশি সব পতিত জমি সরিষা চাষের আওতায় আসবে বলে জানান কৃষিবিদরা।

কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়,সরকারী ভাবে উপজেলায় ১০জন কৃষক ৬ হেক্টর ও নিজ উদ্যোগে আরো প্রায় ৫ হেক্টর জমিতে সরিষা চাষ করেছেন ২৫-২৬জন কৃষক।

সরেজমিনে উপজেলার গজালিয়া ইউনিয়নের সাপমারাঝিরি, আকিরাম পাড়া, লামা সদর ইউনিয়নের মেরাখোলা ও পোপা, ফাঁসিয়াখালী ইউনিয়নের কুমারী. সরই এবং পৌরসভা এলাকার সাবেক বিলছড়িসহ বেশ কিছু স্থান ঘুরে সরিষার আবাদ দেখা গেছে। কুয়াশায় ঘেরা প্রকৃতি মাঠে মাঠে শোভা পাচ্ছে হলুদে রঙের ফুলের সমারোহ। নজরকড়া এ দৃশ্য যে কারো চোখের দৃষ্টি সীমাকেও ছাপিয়ে যাবে। উৎসুক পথচারীরা এসব সরিষা ক্ষেতের নজরকাড়া দৃশ্যের ছবি তুলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেইস বুকেও শেয়ার করছে।
উপজেলার সাবেক বিলছড়ি গ্রামের কৃষক এরশাদ আলী তামাক চাষের পাশাপাশি পতিত ৩৩ শতক জমিতে কৃষি অফিসের প্রণোদনায় সরিষা চাষ করেছেন। এসব সরিষা কেটে বিক্রি করে তিনি প্রায় ৩৫ হাজার টাকা পাবেন বলে ধারণা করছেন।

NewsDetails_03

তিনি বলেন,সরিষার আবাদ শেষে ওই জমিতে অনায়াসে বোরো চাষও করা যাবে। অগ্রহায়ণ থেকে মাঘ মাস পর্যন্ত সরিষার আবাদ করা যায়। তার মতো গজালিয়া ইউনিয়নের আকিরাম পাড়ার বাসিন্দা প্রিতমা ত্রিপুরাসহ উপজেলার বিভিন্ন স্থানে আরো প্রায় ২৫-২৬ জন কৃষক সরিষা চাষ করেছেন। তাদের জমির পরিমাণ ৫ হেক্টরেরও বেশি হবে।

নিজের জমিতে কয়েক বছর ধরে উচ্চ ফলনশীল জাতের সরিষা চাষ করছেন গজালিয়া ইউনিয়নের কৃষক হাসানুল। তিনি বলেন, কম খরচ ও অল্প দিনের পরিচর্যার মাধ্যমে অধিক লাভ হওয়া যায় সরিষা চাষে। তাই অন্যান্য সবজি চাষের পাশাপাশি কৃষকরা জমিতে সরিষা চাষ করছেন। তবে ফাঁসিয়াখালী, রুপসীপাড়া ও গজালিয়া ইউনিয়নের বেশ কয়েকজন কৃষক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, সরিষা দূরে থাক সবজি উৎপাদনে কোন সমস্যা হলে উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তাদের সহযোগিতা পাওয়া যায়না।

অভিযোগ অস্বীকার করে উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা বাবু মং মার্মা জানান, চলতি মৌসুমে উপজেলায় বারি-১৫ ও বারি-৪ জাতের সরিষা চাষের প্রদর্শনী ছাড়াও অনেক কৃষক নিজ উদ্যোগেও সরিষা আবাদ করেছেন। ফলনও ভালো হয়েছে। তিনি বলেন, দেশি জাতের চেয়ে উচ্চ ফলনশীল জাতের সরিষা চাষে লাভ বেশি হয়। এছাড়া সরিষা চাষে খরচ কম ও বেশি পরিশ্রম এবং পরিচর্যা করা লাগে না। আপনা আপনি ভাবে সরিষার চারাগাছ গুলো বড় হয়ে ফলন দেয়।

এদিকে বেসরকারী সংস্থা উন্নয়ন বিকল্পের নীতি নির্ধারণী গবেষণার কক্সবাজার আঞ্চলিক সমন্বয়কারী রফিকুল হক টিটো জানায়, পরিবেশ বিধবংসী তামাকের বদলে কৃষকরা চাইলে কম খরচে অধিক লাভবান সরিষা চাষে আরো বেশি করে সম্পৃক্ত হতে পারে। এতে করে কৃষকরা লাভবান হবে।

এ বিষয়ে লামা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সানজিদা বিনতে সালাম বলেন, মূলত লামা একটি কৃষিপ্রধান উপজেলা। এ উপজেলার মাটি ও আবহাওয়া সরিষা চাষের অত্যন্ত উপযোগী বিধায় নানান জাতের সবজি আবাদের পাশাপাশি সরিষারও আবাদের সম্ভাবনা রয়েছে। সরিষা কৃষকের স্বপ্ন পূরণের পাশাপাশি বানিজ্যিক চাষে ভোজ্য তেলের ঘাটতি পূরণেও বিশেষ ভূমিকা রাখবে।

আরও পড়ুন