লামায় পাহাড়ি ঢলে গৃহবন্দি ১৫ হাজার মানুষ

পাহাড় ধ্বসের আশঙ্কা

এক টানা মাঝারি থেকে ভারী বর্ষণের ফলে উজান থেকে নেমে আসা সৃষ্ট পাহাড়ি ঢলের পানি বান্দরবানের লামা পৌর এলাকাসহ উপজেলার ৭টি ইউনিয়নের নিচু এলাকায় ঢুকে পড়েছে। এতে কয়েকশ ঘরবাড়ি, সরকারী বেসরকারী কার্যালয় ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্লাবিত হয়েছে।

মাতামুহুরী নদী, লামা খাল, বমু খাল, ইয়াংছা খাল, বগাইছড়ি খাল, ইয়াংছা খাল ও পোপা খাল সহ বিভিন্ন স্থানের পাহাড়ি ঝিরিগু লোতে অস্বাভাবিক ভাবে পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় গৃহবন্দি হয়ে পড়েছে বিভিন্ন পেশাজীবির প্রায় ১৫ হাজার মানুষ। কর্মহীন হয়ে বেকায়দায় পড়েছে ওইসব এলাকার শ্রমজীবি মানুষ গুলো। দোকান ও ঘরবাড়ির মালামালসহ গৃহ পালিত পশু নিরাপদে সরিয়ে নিতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন বন্যা আক্রান্তরা।

এদিকে প্রবল বর্ষণে পাহাড় ধসে প্রাণহানির আশঙ্কায় পাহাড়ে ঝুঁকিপূর্ণ বসবাস কারীদেরকে নিরাপদে আশ্রয় নিতে বিভিন্ন মাধ্যমে মাইকিং শুরু করেছে উপজেলা প্রশাসন, পৌরসভা ও ইউনিয়ন পরিষদ গুলো। পাশাপাশি দূর্যোগ কবলিতরা আশ্রয় নিতে বিদ্যালয়গুলোকে আশ্রয়ন কেন্দ্র হিসেবে খোলা রাখা হয়েছে।

আজ বুধবার (১৭জুন) সন্ধ্যা নাগাদ মাতামহুরী নদীর পানি বিপদসীমা অতিক্রম করে প্রবাহিত হচ্ছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে। বিকাল থেকে পৌরসভা মেয়র মো. জহিরুল ইসলাম পৌরসভা এলাকার প্লাবিত এলাকাগুলো সরেজমিন পরিদর্শন করে আক্রান্তদের নিরাপদে সরে যেতে তাগাদা দেন।

স্থানীয় সূত্র জানায়, গত মঙ্গলবার দিনগত রাত থেকে মুষুলধারে প্রবল বর্ষণ শুরু হয়। আর এ টানা বর্ষণের ফলে উপজেলায় অবস্থিত নদী, খাল ও ঝিরির পানি ফুঁসে উঠে পৌরসভা এলাকার নয়াপাড়া, বাসস্টেন্ড, টিএন্ডটি পাড়া, বাজারপাড়া, গজালিয়া জিপ স্টেশন, লামা বাজারের একাংশ, চেয়ারম্যান পাড়ার একাংশ, ছোট নুনারবিলপাড়া, বড় নুনারবিলপাড়া, উপজেলা পরিষদের আবাসিক কোয়ার্টার সমূহ, থানা এলাকা, ফাঁসিয়াখালী ইউনিয়নের ইয়াংছা বাজাররসহ বিভিন্ন ইউনিয়নের কিছু নিচু এলাকা প্লাবিত হয়।

NewsDetails_03

এতে পৌর এলাকার হলিচাইল পাবলিক স্কুলসহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, সরকারী বেসরকারী সংস্থার কার্যালয়সহ শতশত ঘরবাড়ী ও দোকান পাঠ রয়েছে। আবার অতি বৃষ্টির কারনে বিভিন্ন স্থানে পাহাড় ধ্বস দেখা দিয়েছে। এতে ওইসব এলাকার হাজার হাজার মানুষ দুর্ভোগে পড়েন। একই সময় উপজেলার বিভিন্ন স্থানের গ্রামীণ সড়কগুলো কোথাও ভাঙ্গন দেখা দিয়েছে আবার কোথাও ধসে পড়েছে বলেও জানান স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা।

অন্যদিকে লামা-আলীকদম সড়কের কেয়ারারঝিরি ও লাইনঝিরি এলাকা পানিতে ডুবে যানচলাচল যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায়। অপর দিকে অতি বর্ষণ ও পাহাড়ী ঢলের কারণে পৌর এলাকাসহ উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে চলতি মৌসুমের বীজতলা এবং বিভিন্ন ফসলাদি পানির নিচে তলিয়ে গেছে বলে কৃষকরা জানিয়েছেন।

এদিকে খাল ও ঝিরির পানি বৃদ্ধি পেয়ে লামা পৌরসভা, লামা সদর, গজালিয়া, ফাইতং, ফাঁসিয়াখালী, আজিজনগর, সরই ও রুপসীপাড়া ইউনিয়নের বিভিন্ন স্থানের ঘরবাড়ি প্লাবিতসহ প্রায় ১৫ হাজার মানুষ গৃহবন্দি হয়ে দুর্ভোগে রয়েছে বলে জানান স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা।

ফাঁসিয়াখালী ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান জাকের হোসেন মজুমদার জানান, পাহাড়ি ঢলের পানিতে ইয়াংছা বাজারের সহ বিভিন্ন স্থানের নিম্ন এলাকা প্লাবিত হয়েছে। এছাড়া লামা-ফাঁসিয়াখালী সড়কের কুমারী ব্রিজের নিচ থেকে মাটি সরে চলাচল ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে।

এ বিষযে লামা পৌরসভা মেয়র মো. জহিরুল ইসলাম বলেন, পৌরসভার কাউন্সিলরদের সমন্বয়ে বন্যা পরিস্থিতি সার্বক্ষনিক তদারকি করার জন্য কমিটি গঠন করার পাশাপাশি প্লাবিত লোকজনকে নিরাপদে কিংবা আশ্রয় কেন্দ্রে সরিয়ে নিতে নৌকার ব্যবস্থা করা হয়েছে। একই সাথে পৌর এলাকায় বিভিন্ন স্থানে পাহাড়ের উপর ঝুঁকিপুর্ণভাবে বসবাসকারীদের নিরাপদে সরে যেতে বলা হচ্ছে।

লামা উপজেলা নির্বাহী অফিসার নূর-এ-জান্নাত রুমি বলেন, পাহাড়ে ঝুঁকিপুর্ণ বসবাসকারীদেরকে নিরাপদে সরে যাওয়ার জন্য প্রশাসনের পক্ষ থেকে তথ্য অফিস ও মসজিদগুলোর মাধ্যমে মাইকিং করে সচেতন করা হয়েছে।এছাড়া দুর্যোগকালীন সময়ে উপজেলার বিভিন্ন স্থানের বিদ্যালয়কে আশ্রয় কেন্দ্র হিসেবে খোলা রাখা হয়েছে। তাছাড়া দূর্যোগকালীন সময় জরুরী প্রয়োজনে যোগাযোগের জন্য উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে একটি কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে বলেও জানান তিনি।

আরও পড়ুন