লামায় প্রতারণা করে পিতার সম্পদ লিখে নিলেন পুত্র
‘একজন বাবা তার সন্তানের জন্য কত ভাবে অবদান রেখে যান, তার হিসাব কেউ কোনদিন বের করতে পারেনি আর পারবেওনা। কিন্তু সেইসব অবদানকে অস্বীকার করে বান্দরবানের লামা উপজেলায় প্রতারণা ও জালিয়াতি করে অন্য ভাই বোনদের বঞ্চিত করে বাবার সম্পত্তি নিজের নামে লিখে নিলেন এক ছেলে। শুধু তাই নয়, সম্পত্তি ফেরত চাইলে কিংবা বাড়াবাড়ি করলে মিথ্যা মামলায় জড়ানো সহ মেরে ফেলারও হুমকি দেন ওই ছেলে। উপজেলার গজালিয়া ইউনিয়নের দুর্গম পাহাড়ি গতিরাম পাড়ার বাসিন্দা হানিচরণ ত্রিপুরার (৬৫) ছেলে সৈয়রাম ত্রিপুরা এ জঘন্য কাজটি করেছেন।
এ ঘটনার প্রতিকার চেয়ে ছেলেকে বিবাদী করে বান্দরবান জেলা প্রশাসক, উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও সার্ক মানবাধিকার ফাউন্ডেশনসহ প্রশাসনের বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগ করেন অসহায় বৃদ্ধ হানিচরণ ত্রিপুরা।
অভিযোগে জানা যায়, গজালিয়া ইউনিয়নের গতিরাম পাড়ার বাসিন্দা হানিচরণ ত্রিপুরা। তার চার ছেলে ও এক মেয়ে রয়েছে। সৈয়রাম ত্রিপুরা তার বড় ছেলে। পরিবারের বিভিন্ন সমস্যা ও সম্পত্তি পরিচালনার লক্ষ্যে ক্ষমতা অর্পনের ২০১৭ সালে বাবা হানিচরণ ত্রিপুরাকে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কার্যালয়ে নিয়ে যান ছেলে সৈয়রাম ত্রিপুরা। সেখানে প্রতারণার আশ্রয় নিয়ে কৌশলে বিভিন্ন কাগজ ও স্টাম্পে দস্তখতসহ টিপসহি নেন তিনি। পরবর্তীতে হানিচরণ ত্রিপুরার নামীয় ৩০৫নং গজালিয়া মৌজার ৭নং খতিয়ানের আন্দর দাগ নং ১০৯৪, ১০৯৫, ১০৯৬, ১০৯৮, ১০৯৯ ও ১১০১ এর তিন একর দ্বিতীয় শ্রেণীর জমি নাদাবী দলিল নং ৫১৩/২০১৭ এবং একই মৌজার হোল্ডিং নং ৩৯৫ এর ৪ একর জমি নাদাবী দলিল নং ৩৪/২০১৭ মূলে সৈয়রাম ত্রিপুরার নামে দলিল সৃজন করে নেন। এতে হানিচরণ ত্রিপুরার অন্য সন্তানেরা সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত হন। এ বিষয়ে উপজেলা নিবার্হী অফিসার ও ভুমি অফিসে জানতে পেরে বিবাদী কর্তৃক দায়েরকৃত মিস মামলা নং ১৫২ (ডি)/২০১৭ আপত্তি দেন হানিচরণ ত্রিপুরা।
এ বিষয়ে নাম প্রকাশ না করার শর্তে অনেকে জানান, সৈয়রাম ত্রিপুরা তার বাবার সাথে প্রতারণা ও জালিয়াতি করে ঠিক করেননি।
ভুক্তভোগী হানিচরণ ত্রিপুরা বলেন, আমার ছেলে সৈয়রাম ত্রিপুরা গত দশ বছর ধরে একটি বেসরকারী সংস্থায় চাকুরির করার সুবাধে লামা, আলীকদমসহ জেলায় বিভিন্ন গোত্র ও ধর্মের মানুষদের খ্রীষ্ঠান ধর্মে ধর্মান্তরিত ও প্রচার কাজে নিয়োজিত রয়েছেন। এ বিষয়ে আমি আইনি প্রতিকার চাইলে বর্তমানে আমাকে বিভিন্ন ধরনের মিথ্যা মামলা ও মোকদ্দমায় জড়িয়ে হয়রানী করিবে মর্মে ভয়ভীতি প্রদর্শন করেছে। এ ছাড়া বেশি বাড়াবাড়ি করলে আমাকে মেরে ফেলবে বলে বিভিন্ন জনের কাছে বলে বেড়াচ্ছে।
এ বিষয়ে অভিযুক্ত সৈয়রাম ত্রিপুরার সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, আমার বাবা যে সব অভিযোগ এনেছে তা সত্য নয়। সাত একর ২য় শ্রেণীর জায়গা আমি আমার বাবা ও অন্যান্য ওয়ারিশ থেকে ক্রয় করে নিয়েছি।
কতো টাকা দিয়ে ক্রয় করে নিয়েছেন এমন প্রশ্নের জবাবে সৈয়রাম ত্রিপুরা বলেন, কতো টাকা দিয়ে ক্রয় করেছি তা এমূহুর্তে আমার মনে নেই।
বাবার সাথে প্রতারণা ও জালিয়াতির অভিযোগ পাওয়ার সত্যতা নিশ্চিত করে সার্ক মানবাধিকার ফাউন্ডেশনের বান্দরবান জেলা শাখার সাধারণ সস্পাদক এম রহুল আমিন জানান, ছেলে হয়ে বাবার সাথে এত বড় প্রতারণা ও জালিয়াতি কোনভাবেই মেনে নেওয়া যায় না।
তিনি আরো বলেন, হানিচরনের অভিযোগ পাওয়ার পর সরেজমিন ঘটনাস্থল পরিদর্শন গেলে প্রাথমিক ভাবে ছেলে সৈয়রাম ত্রিপুরার বিরুদ্ধে প্রতারণা ও জালিয়াতির সত্যতা পাওয়া গেছে।
এদিকে উপজেলার গজালিয়া ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য ইলিশা ত্রিপুরা জানায়, সৈয়রাম ত্রিপুরা একজন খ্রীষ্ঠান ধর্ম প্রচারক। তার বিরোদ্ধে জালিয়াতির মাধ্যমে সাত একর জায়গা নিয়ে নেওয়ার অভিযোগ করেছে বাবা হানিচরণ ত্রিপুরা। বিষয়টি খুবই দুঃখ্যজনক।
এ ব্যাপারে লামা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. রেজা রশীদ বলেন, বিষয়টি নিয়ে তদন্ত করে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।