লামায় প্রাণনাশের হুমকিতে ডায়েরি করায় কাল হলো কৃষকের !
প্রাণ নাশের হুমকির শিকার হয়ে থানায় সাধারণ ডায়েরি করায় বান্দরবানের লামা উপজেলায় রাতের অন্ধকারে এক প্রান্তিক কৃষকের বাগানের ২৫০০টি বনজ ফলদ গাছের চারা ও ৬০ শতক জায়গায় রোপিত ধানের চারা উপড়ে ও কেটে দিয়েছে প্রতিপক্ষ। উপজেলার লামা সদর ইউনিয়নের দুর্গম পাহাড়ি নকসার ঝিরি এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
জায়গা জবর দখলের উদ্দেশ্যে প্রতিপক্ষ মো. ইব্রাহিম লোকজন নিয়ে এসব ক্ষতিসাধন করেন বলে আজ রবিবার (১৬ আগস্ট) সকালে অভিযোগ করেন ভুক্তভোগী কৃষক সোহরাব হোসেন। শুধু তাই নয়, এর আগে দুই দফায় হামলা চালিয়ে আরো প্রায় বিভিন্ন প্রজাতির ৩ হাজার ৩০০ গাছের চারা কেটে ৩ লাখ ৩০ হাজার টাকার ক্ষতি সাধন করে প্রতিপক্ষ। প্রতিপক্ষ কর্তৃক একের পর এক হামলায় কৃষক সোহরাব হোসেন আতংকিত ও নি:স্ব হয়ে পড়েছেন। এসব হামলা ও জায়গা রক্ষায় প্রশাসনের জোর হস্তক্ষেপ কামনা করেন তিনি।
অভিযোগে জানা যায়, লামার ২৯৫নং লামা মৌজার আওতায় নকসার ঝিরি এলাকায় বশির উদ্দিনের ছেলে মো. সোহরাব হোসেনের নামে ক্রয় সূত্রে ১৮৩নং হোল্ডিং মূলে ৫ একর ও ৮৪নং হোল্ডিং মূলে ৪.৮০ একর পাহাড়ি জায়গা রয়েছে। ওই জায়গাতে গত ১৮-২০ বছর ধরে ভোগ করে আসছেন কৃষক সোহরাব হোসেন। সম্প্রতি পৌরসভা এলাকার রাজবাড়ী গ্রামের বাসিন্দা মো. ওসমান ও ইব্রাহিম নামের দুই ব্যক্তি আর/৯১নং হোল্ডিংয়ের একটি কাগজ দেখিয়ে ওই জায়গা জবর দখল করার জন্য শুরু করেন নানান ষড়যন্ত্র। এরই ধারাবাহিকতায় গত ৬ আগস্ট ইব্রাহিমসহ আরো৭-৮জন সংঘবদ্ধ হয়ে ইউনিয়নের বৈল্যারচর এলাকার জহির উদ্দিনের দোকানে গিয়ে কৃষক সোহরাব হোসেনকে কেটে ফেলবে, মেরে ফেলবে আবার রক্ত দিয়ে জায়গার ওপর গোসল করবে বলে প্রকাশ্যে হুমকি দেন। এর পরদিন কৃষক সোহরাব হোসেন স্থানীয় ৬জনকে স্বাক্ষী করে জীবনের নিরাপত্তা চেয়ে থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেন। এতে ইব্রাহিমগং ক্ষিপ্ত হয়ে সোহরাব হোসেনের জায়গার ওপর সৃজিত বাগানের দেড় হাজার কলা গাছ, এক হাজার সেগুনসহ বাঁশ গাছ, ৬০ শতক জমিতে রোপিত ধানের চারা কেটে ও উপড়ে ফেলে।
এ সময় প্রতিবাদ করলে প্রতিপক্ষের লোকজন ঘর থেকে বের হলে প্রাণে মেরে ফেলবে বলে হুমকি দেন। এর আগে ১৬ এপ্রিল সকাল ৮টার দিকে ও ১২ মে সকাল সাড়ে ৬টার দিকে মো. ওসমান ও ইব্রাহিম লোকজন নিয়ে সোহরাব হোসেনের বাগানের সেগুনসহ বিভিন্ন প্রজাতির ৩ হাজার ৩০০টি গাছের চারা কেটে নিয়ে যায় মো. ইব্রাহিম। এতে ৩ লাখ ৩০ হাজার টাকার ক্ষতি হয়।
ভুক্তভোগী কৃষক সোহরাব হোসেন বলেন, একের পর এক হামলা ও গাছ কেটে ক্ষতি সাধন করার কারণে নি:স্ব হয়ে পড়েছি। ইব্রাহিমগং কর্তৃক হামলা ও জায়গা জবর দখল চেষ্টা থেকে মুক্তি চাই।
এ বিষয়ে স্থানীয় নকসার ঝিরি এলাকার আমির আলী, আবদুর রহমান বলেন, বিশ বছর আগে ক্রয়সূত্রে মালিক হয়ে কৃষক সোহরাব হোসেন জমিতে বিভিন্ন ফলদ ও বনজ বাগান ও জমিতে ফসল আবাদ করে ভোগ করে আসতে দেখেছি। কিন্তু সম্প্রতি পৌরসভা এলাকার ওসমান গনি ও ইব্রাহিম একটি আর হোল্ডিংয়ের একটি কাগজ দেখিয়ে জায়গা তাদের বলে দাবী তুলে জবর দখলের চেষ্টা করছেন।
সংশ্লিষ্ট মৌজা হেডম্যান হ্লাথোয়াই মার্মা বলেন, সোহরাব হোসেনের জায়গাতে না যাওয়ার জন্য ওসমান গণি ও মো. ইব্রাহিমকে নিষেধ করেছিলাম। কারণ ওই জায়গা ১৮-২০ বছর ধরে সোহরাব হোসেন ক্রয়সূত্রে মালিক হয়ে আবাদ করে ভোগ করে আসছেন।
এদিকে অভিযোগ অস্বীকার করে অভিযুক্ত মো. ইব্রাহিম বলেন, আমরা কারো জায়গার গাছ কাটিনি। আমাদের বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগ মিথ্যা, বানোয়াট ও উদ্দেশ্য প্রণোদিত।
ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে লামা সদর ইউনিয়ন পরিষদ সদস্য আবদুল হাফিজ বলেন, জায়গা নিয়ে বিরোধকে কেন্দ্র করে ইব্রাহিমগং গত শুক্রবার দিনগত রাতে কৃষক সোহরাব হোসেনের বাগানের প্রায় আড়াই হাজার চারা কেটে ও উফড়ে ফেলে ব্যাপক ক্ষতিসাধন করেছে।
এদিকে লামা থানা পুলিশের উপ-সহকারী পরিদর্শক লিংকন দেব বলেন, কৃষক সোহরাব হোসেনের অভিযোগের ভিত্তিতে রবিবার দুপুরে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।