লামায় বন্যহাতির তান্ডব : ৯ বসতঘর তছনছ

NewsDetails_01

বান্দরবানের লামা উপজেলার দুর্গম পাহাড়ি এলাকায় তান্ডব চালিয়েছে বন্যহাতির দল। রাতভর তান্ডব চালিয়ে তছনছ করে দিয়েছে উপজেলার লামা সদর ইউনিয়নের দুর্গম পাহাড়ি মেউলারচরের বৈক্ষ্যম ঝিরি, মেরাখোলা, ছোট বমু পাড়া ও রুপসীপাড়া ইউনিয়নের টিয়ারঝিরির ৯টি বসতঘর।

গত বৃহস্পতিবার বিকাল থেকে শুক্রবার বিকাল পর্যন্ত ১০-১২টির একটি বন্যহাতির দল তান্ডব চালিয়ে এসব বসতঘর তছনছ করে দেয়। শুধু তাই নয়, এ সময় হাতিগুলো পদপিষ্ট ও খেয়ে ওই এলাকার ২৫জন কৃষকের কলা বাগান ও ফসলের ব্যাপক ক্ষতিসাধন করে। হাতির তান্ডবে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর মধ্যে কেউ খোলা আকাশের নীচে, আবার কেউ কেউ ঘরবাড়ী ছেড়ে অন্যত্র আশ্রয় নিয়েছেন। শুক্রবার বিকালে এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত হাতিগুলো ছোট বমুর আগায় অবস্থান করায় আতংকে আছেন ওই এলাকার বাসিন্দারা।

সূত্র জানায়, গহিন পাহাড় থেকে প্রথমে বন্যহাতির দল গত বৃহস্পতিবার বিকালে ইউনিয়নের মেউলাচরের বৈক্ষ্যম ঝিরি গ্রামে নেমে পড়ে। হাতিগুলো প্রথমে জুবেদা বেগম ও মো. শাহ জাহানের বসতঘর ভাংচুর করে। এরপর রাতভর তান্ডব চালিয়ে একে একে মেরাখোলা গ্রামের বাসিন্দা মো. ইসহাক ও মো.করিমের বসতঘর তছনছ করার পর ছোট বমু পাড়ার বাসিন্দা হাসু বড়ুয়া, গোবিন্দ ও এরশাদের বসতঘর তছনছ করে দেয় হাতির দলটি। একই সময় হাতিগুলো ২৫জন কৃষকের ফসল, ফলদ ও বনজ বাগানের কলা গাছ খেয়ে ব্যপক ক্ষতি সাধন করে। এর আগের রাতে একই হাতির দলটি পাশের রুপসীপাড়া ইউনিয়নের টিয়ারঝিরির ২ কৃষকের বসতঘর ভাংচুরসহ বেশ কয়েকজন কৃষকের ফসল ও ফলদ বনজ বাগানের ক্ষতিসাধারণ করে বলে জানান, রুপসীপাড়া ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান চাছিং প্রু মার্মা।

হাতির আক্রমনের শিকার ইসহাক ও জুবেদা বেগম বলেন, বৃহস্পতিবার বিকাল ৫টার দিকে ১০-১২টি বন্যহাতি পাহাড়ের উত্তর পাশ দিয়ে গ্রামে ঢুকে পড়ে। এ কথা জানাজানি হলে লোকজন আতঙ্কে ছোটাছুটি শুরু করেন। রাতে গ্রামের মানুষ এক ঘণ্টার জন্যও ঘুমাতে পারেনি।

NewsDetails_03

তারা আরও বলেন, হাতিগুলো প্রথমে বাড়ির চারিদিকে ঘেরাও করে ফেলে। বিশেষ করে ঘরের দরজা জানালার পাশে পাহারাদারের মত দাঁড়িয়ে থাকে। আর ঘর ভাঙ্গা শুরু করে। পরে ঘরে থাকা ধান চাল খেয়ে ফেলে। রাতজেগে আগুনের কুন্ডুলি জ্বালিয়ে বাড়ি ঘর পাহারা দিয়ে হাতির আক্রমন থেকে রক্ষা পাওয়ার চেষ্ঠা চালিয়েও রক্ষা পাওয়া যাচ্ছেনা।

এ বিষয়ে স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ সদস্য আবদুর রহমান মনু জানান, অনেক ক্ষেত্রে রাত জেগে আগুন জ্বালিয়ে, ঢোল পিটিয়ে ও চিৎকার করেও বন্যহাতির দলকে সরানো যায় না। বেশি ভয় দেখালে গায়ের দিকে তেড়ে আসে হাতিগুলো।

বন্যহাতির তান্ডবে ৭টি বসতঘর তছনছসহ ফসল ও বাগানের ব্যাপক ক্ষতিসাধণের সত্যতা নিশ্চিত করে লামা সদর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মিন্টু কুমার সেন বলেন, শুক্রবার বিকাল পর্যন্ত হাতিগুলো এলাকায় অবস্থান করায় লোকজন এখন চরম আতঙ্কে রয়েছেন। আবারও যে কোন মুহুর্তে তান্ডব চালিয়ে জান ও মালের ক্ষতিসাধন করতে পারে।

এদিকে লামা বিভাগীয় বন কর্মকর্তা এস এম কায়চার জানান, পাহাড়ে খাদ্য সঙ্কট ও আবাসস্থল খুঁজে না পেয়ে লোকালয়ের দিকে ছুটে যাচ্ছে বন্যহাতি। হাতিগুলোকে গভীর বনে সরিয়ে নিতে স্থানীয়দের সহযোগিতায় কাজ করা হবে। তাছাড়া বন্য হাতির ক্ষয়ক্ষতি হলে বন বিভাগের পক্ষ থেকে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার ব্যবস্থা রয়েছে।

আরও পড়ুন