বান্দরবানের লামা উপজেলায় বিনামূল্যে বিশেষ ডিজাইনের সেমি পাকা ঘর পাচ্ছেন আরও ১৭৫ পরিবার। বছরের পর বছর ঘর না থাকার কষ্টের জীবন শেষ হতে যাচ্ছে এসব ভূমিহীন ও গৃহহীন মানুষের।
দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও দারিদ্র বিমোচন কাটিয়ে ওঠার লক্ষ্যে আশ্রয়ণ প্রকল্পের আওতায় ত্রাণ ও দূর্যোগ মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্ম শর্ত বর্ষ উপলক্ষ্যে উপহার হিসেবে এসব ঘর নির্মাণ করে দিচ্ছেন। প্রতি ঘরে ১ লাখ ৯০ হাজার টাকা হারে এতে মোট ব্যয় হচ্ছে ৩ কোটি ৩২ লাখ ৫০ হাজার টাকা। যারা ঘর পাচ্ছেন তারা এক সময় ঝুপড়ি ঘরে জরাজীর্ণ অবস্থায় জীবনযাপন করতেন। আগামী জুন মাসের মধ্যেই উপকারভোগী হত গৃহ ও ভুমিহীন পরিবারগুলো সেমি পাকা ঘরে নিশ্চিন্তে ঘুমাতে পারবেন। সরকারী পাকা ঘরে ঘুমাতে পারবেন এমন কল্পনায় খুশিতে আত্মহারা ঘরপ্রাপ্তরা।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, দূর্যোগ ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের আওতায় সারা দেশে গৃহ ও ভূমিহীনদের সেমি পাকা ঘর তৈরি করে দেওয়ার উদ্যোগ নেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরই ধারাবাহিকতায় চলমান কর্মসূচীর দ্বিতীয় পর্যায়ে লামা উপজেলার ৬টি ইউনিয়নে ১৭৫টি বিশেষ ডিজাইনের ঘর নির্মাণের উদ্যোগ নেয়া হয়। এর মধ্যে গজালিয়া ইউনিয়নে ৩০টি, লামা সদর ইউনিয়নে ৩০টি, ফাঁসিয়াখালী ইউনিয়নে ২৬টি, আজিজনগর ইউনিয়নে ৩৫টি, রুপসীপাড়া ইউনিয়নে ৩৫টি ও সরই ইউনিয়নে ১৯টি সেমি পাকা ঘর বরাদ্দ হয়েছে। প্রতিটি ঘরে থাকছে ২টি শয়ন কক্ষ, একটি টানা বারান্দা, শৌচাগার সহ রান্না ঘর। মাঠ পর্যায়ে ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান ও সদস্যরা এ কাজ বাস্তবায়ন করছেন। উপকারভোগীদের তালিকা অনুযায়ী গৃহ নির্মাণের স্থান নির্বাচন ও জমি পরিদর্শনের কাজ শেষে গত এপ্রিল মাস থেকে প্রকল্পের ঘর নির্মাণ কাজ শুরু করা হয়। ২৫ এপ্রিল এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত প্রকল্পের ঘর নির্মাণ কাজের প্রায় ৮০ ভাগ সম্পন্ন হয়েছে। ২০২০-২০২১ অর্থ বছরের কাবিটা প্রকল্পের আওতায় কাজটি তদারকি করছেন উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মো. মজনুর রহমান।
সরেজমিন ফাঁসিয়াখালী ও রুপসীপাড়াসহ বিভিন্ন ইউনিয়ন পরিদর্শনে গেলে ঘরের কাজে নিয়োজিত রাজ মেস্ত্রীরা জানান, ঘরের কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। এখন ঘরের টিন আর রং লাগানো বাকী রয়েছে। আশা করছি কয়েক দিনের মধ্যে ঘরের শতভাগ কাজ শেষ করতে পারবো।
এদিকে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ফাঁসিয়াখালী ইউনিয়নের দুর্গম পাহাড়ি অলি বাপের জুম গ্রামের হতদরিদ্র বাসিন্দা হোসনে আরা, ঘিলাতলী পাড়ার নজির আহমদ, ইয়াংছা এলাকার উহ্লাচিং মার্মা বসবাস করতেন ঝুঁপড়ি ঘরে।
তারা জানায়, অভাবের সংসারে কখনো নতুন করে সেমি পাকা ঘর তৈরী করার স্বপ্ন কল্পনাতেও আসেনি তাদের। যে স্বপ্ন কখনো কল্পনাতে আসেনি, কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের বিশেষ বরাদ্দ থেকে পাওয়া তাদের সেমিপাকা একটি ঘর হচ্ছে। জুন মাসের মধ্যেই তারা সেই ঘরে নিশ্চিন্তে ঘুমাতে পারবেন।
এদিকে রুপসীপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ছাচিং প্রæ মার্মা, গজালিয়া ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান বাথোয়াইচিং মার্মা একই সূরে বলেন, প্রাথমিক পর্যায়ে গৃহহীন পরিবারকে বিশেষ ডিজাইনের ঘর দেয়ার জন্য নির্বাচন করা হয়েছে। ঘরের কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। সরকারের এমন মহতি উদ্যোগের কারণে খুশি হত দরিদ্ররা।
উপজেলার ১৭৫ ভুমিহীন ও হতদরিদ্র পরিবার পাওয়ার সত্যতা নিশ্চিত করে প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মজনুর রহমান বলেন, গৃহহীন-ভূমিহীনদের ঘর করে দেওয়ার এত বড় কর্মসূচি পৃথিবীতে আর একটিও নেই। উপজেলায় আরো ১৭৫টি ঘরের কাজ ইতিমধ্যে ৮০ ভাগ শেষ হয়েছে। এর আগেও এ প্রকল্পের আওতায় উপজেলার ২৫১ ভুমিহনি পরিবার প্রধানমন্ত্রীর উপহার হিসেবে বিশেষ ডিজাইনের সেমি পাকা ঘর পেয়েছেন।
এ বিষয়ে লামা উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. রেজা রশীদ জানান, এটিই বিশ্বে গৃহহীন মানুষকে বিনামূল্যে ঘর করে দেওয়ার সবচেয়ে বড় কর্মসূচি। এর মধ্য দিয়ে নতুন ইতিহাস গড়তে যাচ্ছে বাংলাদেশ। আশা করি জুন মাসের মধ্যেই উপকার ভোগীদেরকে ঘরের চাবি হস্তান্তর করতে পারবো।