বান্দরবানের লামা উপজেলায় রাতের আঁধারে অবৈধভাবে পাচারকালে ৯টি ট্রাক ভর্তি পাথর আটক করেছে নাইক্ষ্যংছড়ি নিয়ন্ত্রণাধীন বনপুর ত্রিশডেবা ক্যাম্পের বিজিবি সদস্যরা।
উপজেলার ফাঁসিয়াখালী ইউনিয়নের দুর্গম পাহাড়ি বনপুর ও রামগতি এলাকা থেকে এ পাথর ভর্তি ট্রাক আটক করা হয়। আটক পাথরের পরিমাণ আনুমানিক ১৩ হাজার ঘনফুট হবে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন। এদিকে পাথর বোঝায় ট্রাক আটকের ৪২ ঘণ্টা পেরিয়ে গেলেও এখনো অবৈধ পাথর ব্যবসায়ী এবং জব্দ পাথরের বিরুদ্ধে প্রশাসন কোন আইনী ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি বলে জানিয়েছেন নাইক্ষ্যংছড়ির অধীন ত্রিশডেবা বিজিবি’র নায়েক সুবেদার মোমিনুল হক।
স্থানীয়দের অভিযোগ- ইউনিয়নের ১, ২, ৩ ও ৯নং ওয়ার্ডের ছমুখাল, পাইকঝিরি, ওয়াক্রা পাড়া, খ্রিস্টান পাড়া, মরা ঝিরি, চচাই পাড়া, কেরানী ঝিরি, কইতরের ঝিরি, বুদুম ঝিরি, চিনির ঝিরি, গয়ালমারা, বালস্ট কারবারী পাড়া ঝিরি, জোয়াকি পাড়া, বাকঁখালী ঝিরি, হরিণ ঝিরি, রবাট কারবারী পাড়া ঝিরি, বালুর ঝিরি, আলিক্ষ্যং ঝিরি, কাঁঠালছড়া ও বদুর ঝিরি থেকে দিনরাত পাথর উত্তোলন করে অবৈধভাবে পাথর পাচার হচ্ছে। প্রশাসন কোন ব্যবস্থা গ্রহণ না করায় দিন দিন উত্তোলন ও পাচার বৃদ্ধি পাচ্ছে। তছনছ হয়ে যাচ্ছে এলাকার গ্রামীণ সড়ক ব্যবস্থা। বহিরাগত মহি উদ্দিন, হুমায়ুন কবির, মালেক, মালেক, মনু মেম্বার ও জামাল উদ্দিন প্রকাশ জামাল ফকির নামের ব্যক্তিরা পাথর পাচার কাজে জড়িত।
সূত্র জানায়, ফাঁসিয়াখালী ইউনিয়নের বিভিন্ন স্থান থেকে অবৈধভাবে পাথর উত্তোলন করে পাচার করছে এমন সংবাদের ভিত্তিতে ত্রিশডেবা বিজিবি’র নায়েক সুবেদার মুমিনুল হকের নেতৃত্বে সঙ্গীয় সদস্যরা গত শনিবার রাতে অভিযান পরিচালনা করেন। এ সময় অভিযানের টের পেয়ে বনপুর ও রামগতি পাড়া থেকে ৯টি ট্রাক ভর্তি পাথর রেখে পাচারকারীরা পালিয়ে যায়। পরে বিজিবি’র সদস্যরা পাথর ভর্তি ট্রাকগুলো আটক করে। আটক ট্রাকগুলো হলো- চট্টমেট্রো-ট ১১-১৩৬৩, চট্টগ্রাম-ল ৭৬, চট্টমেট্রো-ট ১১-০৯৬১, ঢাকামেট্রো-ট ১১-২১৪৫, পিরোজপুর-ট ১১-০৩৭৬, ঢাকা-ল ২৬১, লট নং-১০৯, ঢাকামেট্রো-ড ১৪-০৮৯৬, লট নং- ৫০।
বনপুর ত্রিশডেবা বিওপি ক্যাম্প কমান্ডার নায়েক সুবেদার মুমিনুল হক জানান, আটক ৯ ট্রাক পাথরের বিষয়ে কোন বৈধ কাগজ দেখাতে পারেনি ব্যবসায়ীরা। অবৈধ পাথরের বিরুদ্ধে উপজেলা প্রশাসন মামলা নিতে অনিহা প্রকাশ করছে। রবিবার লামা সহকারী কমিশনার ভূমি মো. সায়েদ ইকবাল ঘটনাস্থলে এসে পাথর জব্দ দেখিয়ে ট্রাকগুলো ছেড়ে দিতে চাইলে আমরা বাধা প্রদান করি। পাথর জব্দ দেখিয়ে ট্রাকগুলো ছেড়ে দেওয়া মানে সুকৌশলে পাথর ব্যবসায়ীদের রক্ষা করার শামিল। তাছাড়া জব্দ ও নিলামের কাগজ দেখিয়ে পাথর ব্যবসায়ীরা শতগুণ পাথর রাতের আঁধারে পাচার করে থাকে বলেও জানান তিনি।
ফাঁসিয়াখালী ইউপি চেয়ারম্যান মো. জাকের হোসেন মজুমদার জানান, কোন ঝিরি ছড়াতে ভাসমান পাথর নেই, প্রভাবশালী সিন্ডিকেট গত ৬-৭ বছর ধরে মাটি খুঁড়ে ও পাহাড় কেটে পাথর উত্তোলন করে দিনরাত পাচার করছে। কোন বাধাই পাত্তা দিচ্ছেনা পাথর ব্যবসায়ীরা।
এ বিষয়ে সহকারি কমিশনার (ভূমি) মো. সায়েদ ইকবাল বলেন, পাথরগুলো বিজিবি আটক করেছে, তাই এখানে আমাদের কিছু করার নেই।