বান্দরবানের লামা উপজেলায় ১১ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিতব্য প্রধান সড়ক উন্নয়ন কাজে অনিয়ম ও নিন্মমানের নির্মাণ সামগ্রী ব্যবহারের অভিযোগ উঠেছে। সড়ক ও জনপথ বিভাগের কর্তা ব্যক্তিদের যোগসাজশে এমন অনিয়ম চলছে বলে মনে করছে স্থানীয়রা। শুধু তাই নয়, সড়ক থেকে তুলে ফেলা পুরাতন কংকর ও নিন্মমানের নির্মাণ সামগ্রী ব্যবহারসহ কাদা পানিতে ঢালাই করা হয়েছে বলেও অভিযোগ রয়েছে। কাজের গুণগতমান ও টেকসইয়ের কথা তুলে শহরবাসী বলছেন, ১১ কোটি টাকার কাজ ১১ মাস টেকসই হবে কিনা সন্দেহ।
সূত্র জানায়, প্রতিবছর বর্ষা মৌসুমে প্রবল বৃষ্টিতে লামা উপজেলা শহরের বাস স্ট্যান্ড এলাকাসহ প্রধান সড়কের উত্তর ও দক্ষিন দিকের বিশাল এলাকা পাহাড়ি ঢলের পানিতে নিমজ্জিত হয়। এতে শহরের ব্যবসায়ী ও স্থানীয়দের চরম দূর্ভোগ পোহাতে হয়। বিধায় স্থানীয় পৌরসভা মেয়র জহিরুল ইসলাম, জনপ্রতিনিধি ও ভূক্তভোগীদের দীর্ঘ দিনের দাবীর প্রেক্ষিতে পার্বত্য মন্ত্রী বীর বাহাদুর উশৈসিং এমপি’র আন্তরিক প্রচেষ্টায় সড়ক উন্নয়ন প্রকল্প হাতে নেয় সড়ক ও জনপথ বিভাগ। সে মতে সম্প্রতি সড়ক ও জনপথ বিভাগ শহরের চৌরাস্তার মোড় থেকে দক্ষিন দিকে ৩ কিলোমিটার সড়ক উন্নয়নের দরপত্র আহবান করে। রিমি কনস্ট্রাকশন নামের একটি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান উন্নয়ন কাজের কার্যাদেশ পায়। উন্নয়ন কাজের আওতায় সড়কের পানিতে নিমজ্জিত এলাকাটি ৫ ফুট পর্যন্ত উঁচু করণ, ১৮ ফুট প্রশস্ত সড়কের ১১শ’ মিটার সড়ক আর.সি.সি’র মাধ্যমে এবং ২ হাজার মিটার ওভার লে, শহরের কিছু অংশে ড্রেন ও বাস স্ট্যান্ড এলাকায় একটি ছোট কালভর্ট নির্মানের কথা রয়েছে।
অভিযোগ উঠেছে, সড়ক ও জনপথ বিভাগের সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীলদের যথাযথ তদারকির অভাবে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান শুরু থেকেই জনগুরুত্বপূর্ণ এ উন্নয়ন কাজে ব্যাপক অনিয়মের আশ্রয় নেয়। ড্রেন নির্মান ও বাস স্ট্যান্ডের কালভার্ট নির্মানে নিন্মমানের কংকর, পাথর ও সিমেন্ট ব্যবহার করা হয়েছে। এছাড়া হাঁটু কাদা পানির মধ্যেই ড্রেন ও কালভার্টের ঢালাই, ওয়াল ঢালাইয়ের পর নির্দিষ্ট সময় অতিক্রম না হতেই ২৪ ঘন্টার মধ্যে ওয়ালের প্রটেকশানগুলো খুলে ফেলে নতুন ওয়াল ঢালাই করেছে এ কাজে নিয়োজিত শ্রমিকরা। এর ফলে ড্রেন ও কালভার্টের উভয় পাশের ওয়ালের টেকসই এবং গুণগত মান নিয়ে প্রশ্ন তুলে শহরবাসী। এছাড়া পুরাতন সড়কের ওভার লে তুলে ফেলার পর নীচের মেকাডম তুলে সেখানকার কংকর পুনরায় বালি মিক্স করে সাব বেইজে ব্যবহার করা হচ্ছে। সাব বেইজে শতকরা ৬০ ভাগ কংকর ও ৪০ ভাগ বালি মিশ্রনের নিয়ম থাকলেও প্রকৃত পক্ষে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান করছে তার সম্পূর্ণ উল্টো অভিযোগ শহরবাসীর।
অপরদিকে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের কাজ তদারকির জন্য সড়ক ও জনপথ বিভাগের দায়িত্বশীল কাউকেই দেখা যায়না বলে অভিযোগ শহরবাসীর। ৪র্থ শ্রেনীর কিছু কর্মচারীকে মাঝে মধ্যে কাজ দেখা শুনা করতে দেখা যায়। তাদের সামনেই এসমস্ত অনিয়ম গুলো নির্বিঘ্নেই করছে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান।
এদিকে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক ব্যবসায়ী জানান, উপজেলা শহরের ব্যস্ত সড়কটির পুরো সড়কের ওভার লে এক সাথে তুলে মাটি ভরাট কাজ করার কারনে জনদুর্ভোগ সৃষ্টি হয়। বিকল্প কোন রাস্তা না থাকায় সাধারণ যাবাহন চলাচল ব্যাহত হচ্ছে। এর ফলে বাজারে মালামাল আনা নেওয়াসহ জরুরী রুগী বহনেও চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে শহরবাসীকে।
এই ব্যাপারে লামা উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান মো. জাহেদ উদ্দিন, মোবারক হোসেনসহ অনেকে বলেন, এক কথায় কাজের গুণগত মান অত্যান্ত নিন্মমানের। এত বড় একটি উন্নয়ন কাজ এত নিন্মমানের হওয়া এবং সংশ্লিষ্ট বিভাগের দায়িত্বশীল কোন প্রকৌশলী কাজের তদারকিতে না থাকা সত্যি দুঃখজনক। এতে ১১ কোটি টাকার কাজ ১১ মাস টিকে কিনা সন্দেহ আছে।
ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের পক্ষে কাজ তদারকির দায়িত্বে নিয়োজিত প্রকৌশলী মো. নাঈম পুরাতন কংকর ব্যবহারের সত্যতা স্বীকার করে জানায়, পরিপূর্ণ নিয়ম মেনে কাজ করলে যথাসময়ে কাজ শেষ করা সম্ভব হবেনা। পুরাতন কংকর দিয়ে সাব বেইজের কাজ করার বিষয়ে জানতে চাইলে বান্দরবান সড়ক ও জনপথ বিভাগের সহকারি প্রকৌশলী পুনেন্দু বিকাশ চাকমা বলেন, বিষয়টি নিয়ে তিনি নির্বাহী প্রকৌশলীর সাথে আলাপ করবেন।
এছাড়া সড়ক ও জনপথ বিভাগের কার্যসহকারি পুংখাল বমের সাথে কাজের বিষয়ে আলাপ করার জন্য তিনি পরামর্শ দেন। এদিকে পুংখাল বম ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের পক্ষে সাপাই গেয়ে সাংবাকিদকদের বলেন, ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান নিন্মদরে এই উন্নয়ন কাজের কার্যাদেশ পেয়েছে। যথাযথভাবে কাজ করলে তাদের লোকসান গুনতে হবে।