রাঙামাটিতে হঠাৎ করেই শাপলা ফুলের আবির্ভাব। মন মাতানো শাপলা ফুলে ছেয়ে গেছে জুরাছড়ি সদরের কাপ্তাই হ্রদের অংশ। যেন এক বিস্তির্ণ শাপলা বিল। বাড়িয়ে তুলেছে জুরাছড়ির রুপ সৌন্দর্যকে। এর সৌন্দর্যে মুগ্ধ হচ্ছেন দর্শনার্থীরা। প্রতিদিন হ্রদের পানিতে ফুটছে সাদা শাপলা। শাপলার এ সৌন্দর্য উপভোগ করার জন্য দূরদূরান্ত থেকে পর্যটকরা ভিড় জমাচ্ছেন।
রাঙামাটি সদর থেকে নদী পথে ৫৭ কিলোমিটার পুর্বে জুরাছড়িতে যেতে হয় নদী পথে। বাহন হিসেবে রয়েছে স্পীডবোট, লঞ্চ কিংবা বোট। প্রতিদিন রাঙামাটি সদর থেকে সকাল ৭টায় লঞ্চ, ৮টায় স্পীডবোট ছেড়ে যায় ও দুপুর ২টায় লঞ্চ আর স্পীডবোট জুরাছড়ি ছেড়ে আসে। তবে দর্শনার্থীরা চাইলে রিজার্ভ লঞ্চ, স্পীডবোট ভাড়া নিতে পারবেন।
স্থানীয়রা জানিয়েছেন, আগে কখনও এ অঞ্চলে শাপলা ফুল দেখা যায়নি। চলতি বছর নভেম্বরের শেষের দিকে কাপ্তাই হ্রদে প্রথমবারের মত সাদা শাপলা ফুল ফোটে। এটার খবর পেয়ে দুর দুরান্ত থেকে দর্শনার্থীরা দেখতে আসছেন। তারা নৌকায় বিলের পানিতে ঘুরে ঘুরে শাপলা ফুলের সৌন্দর্য উপভোগ করেন। কেউ সেলফি তোলেন। কেউ আবার শাপলা তুলে নিয়ে যান।
তারা জানান, রাতে ফুটে থাকা শাপলা ফুল রোদ ওঠার পর ধীরে ধীরে শুকিয়ে যায়। এ কারণে শাপলা ফুলের সৌন্দর্য উপভোগ করতে হলে সূর্যের আলো তীব্র হওয়ার আগে পৌঁছাতে হবে।
রাঙামাটি সদর থেকে বেড়াতে আসা শিক্ষিকা তন্দ্রা চাকমা জানান, করোনাকালে বাসার বাইরে যাওয়া হয় না। জুরাছড়িতে শাপলা ফুল ফুটেছে জেনে দেখতে এসেছি। দীর্ঘদিন পর পরিবারের সঙ্গে শাপলার বিলে এসে মুগ্ধ হয়েছেন তিনি। শাপলার অসাধারণ নৈসর্গিক দৃশ্য দেখে অভিভূত হয়েছি। শাপলা বিলের শান্ত পরিবেশে এসে প্রশান্তিতে ভরে গেছে। এক কথায় মুগ্ধ আমরা সবাই।
দর্শনার্থী বিমল ত্রিপুরা জানান, রাঙামাটিতে শাপলা ফুল ফোটে কখনও শুনিনি। এবার শুনে দেখতে এলাম । শাপলার ফুল দেখে আনন্দ পেয়েছি। এখানে থাকা খাওয়ার ব্যবস্থা একেবারে অপ্রতুল। বিলে বেড়ানোর জন্য নেই পর্যাপ্ত নৌকার ব্যবস্থাও। ফলে শাপলার সৌন্দর্য উপভোগ করতে আশা দর্শনার্থীরা চরম দুর্ভোগে পড়েন। তিনি শাপলার বিলকে পর্যটন বান্ধব করার আহবান জানান।
স্থানীয় সাংবাদিক স্মৃতি বিন্দু চাকমা বলেন, শাপলার বিলকে ঘিরে বৃহৎ পর্যটন কেন্দ্র গড়ে তোলা সম্ভব। সরকার একটু সুদৃষ্টি দিলে এবং এখানে অবকাঠামোগত কিছু সুবিধা বাড়ানো গেলে দর্শনার্থী অনেক বাড়বে। এতে প্রত্যন্ত এই জুরাছড়ির আর্থ-সামাজিক ব্যাপক পরিবর্তন ঘটবে।
উপজেলা পরিষদ ভাইস চেয়ারম্যান রিটন চাকমা বলেন, জুরাছড়িকে নতুন করে চিনিয়েছে নতুন করে ফোটা শাপলা ফুল। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের কারণে দুর দুরান্ত হতে দর্শনার্থীরা আসছেন শাপলা বিল দেখতে। জুরাছড়ি এমনিতেও পর্যটন শিল্পে পিছিয়ে আছে, শাপলা বিলকে যদি সংরক্ষন করা যায়, তাহলে জুরাছড়িও পর্যটন খাত আরো সম্মৃদ্ধি ঘটবে।
জুরাছড়ি উপজেলা নির্বাহী অফিসার জীতেন্দ্র কুমার নাথ বলেন, জুরাছড়িতে শাপলার বিল পর্যটনের নতুন সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন করেছে। কিভাবে এই শাপলার বিলকে সংরক্ষন করে আরও আকর্ষণীয় ও পর্যটন বান্ধব করে গড়ে তোলা যায় সে ব্যাপারে চিন্তা ভাবনা চলছে।