পুরানো বছরকে পেছনে ফেলে আসা নতুন বছরকে স্বাগত জানাতে বান্দরবানের মারমা আদিবাসীরা সাংগ্রাই আনন্দে মাতোয়ারা হয়ে উঠেছে। প্রতিবছর তাদের ঘরে সাংগ্রাই আসে নতুন সাজে, দিয়ে যায় কিছু আনন্দ, কিছু বেদনার ফুলঝুরি। ঐ আনন্দ বেদনার মিশ্র প্রতিক্রিয়া প্রতিটি আদিবাসী’র দেহমনে জেগে উঠে নতুন পরিবর্তনের শিহরন, স্বপ্ন দেখে দিন বদলের, স্বপ্ন দেখে যেন নতুন এক সকালের। বর্ষবরণকে কেন্দ্র করে নাচ-গান, ঐতিহ্যবাহী খেলাধুলাসহ সপ্তাহব্যাপী নানা আয়োজনের ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছে বান্দরবানের আদিবাসীরা।
এরি অংশ হিসাবে আজ শুক্রবার সকালে জেলা শহরের রাজার মাঠ থেকে বের করা হয় বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা। শোভাযাত্রাটি শহরের প্রধান সড়ক প্রদক্ষিন করে ফের রাজার মাঠে এসে শেষ হয়। উক্ত শোভাযাত্রায় পার্বত্য প্রতিমন্ত্রী বীর বাহাদুর এমপি, জেলা প্রশাসক আসলাম হোসেন, পুলিশ সুপার জাকির হোসেন মজুমদারসহ অনেকে উপস্থিত ছিলেন। এসময় আদিবাসী তরুন তরুণীরা বর্ণিল পোষাকে নানা রঙের ব্যানার ফেস্টুন নিয়ে শোভাযাত্রায় অংশ গ্রহন করে। পরে রাজার মাঠে বয়োজ্যেষ্ঠ পূজা অনুষ্ঠিত হয়।
এসময় আদিবাসী তরুন তরুণীরা বর্ণিল পোষাকে নানা রঙের ব্যানার ফেস্টুন নিয়ে শোভাযাত্রায় অংশ গ্রহন করে। পরে রাজার মাঠে বয়োজ্যেষ্ঠ পূজা অনুষ্ঠিত হয়,পূজায় বয়োজ্যেষ্ঠদের শ্রদ্ধা নিবেদন করে তরুন তরুণীরা। শনিবার ১৪ এপ্রিল সাঙ্গু নদীতে বুদ্ধ মূর্তি স্নান, ১৫ এবং ১৬ এপ্রিল পুরাতন রাজবাড়ি মাঠে পানি বর্ষন উৎসবের মধ্যে দিয়ে জেলার রুমা,লামা, আলীকদম,রোয়াংছড়ি,থানচিসহ ৭টি উপজেলার দূর্গম পাহাড়ী পল্লীতে মারমা আদিবাসীরা সাংগ্রাইয়ের আকর্ষনীয় অনুষ্ঠান মৈত্রী পানি বর্ষন উৎসব (জলকেলি) মেতে উঠবে।
জলকেলি উৎসবের সময় তরুন-তরুণীরা নির্ধারিত মঞ্চে অবস্থান করে। তরুণীদের সামনে বিভিন্ন পাত্রে বা জলাধারে জল রাখা থাকে। ঐ সময় তরুণেরা জলভর্তি পাত্র নিয়ে দলে দলে এসে ‘সাংগ্রাইংতে মিলে মিশে পানি খেলা খেলি ও ভাই সকলে ও বোন সকলে এসো একত্রে আনন্দ করি’। লেঃ লেঃ লেঃ.. লেঃ .. মংরো মংরোঃ.. মংরো মংরো, পেং পাদাউশে পোওয়াংরে লা সাংগ্রে, ক্যালোঃ মংরো প্যয়ে, (রাঙা পুস্প শোভিত এ মাসে আত্মহারা হয় সাংগ্রের আনন্দে এই শুভ দিনে তুলনাহীন তুমি, পেন্ডেলে বসে স্বাগত জ্বানাও, সাংগ্রেং এর জল হীম শীতল সুন্দরী তুমি অপূর্ব) শহরের অলিতে-গলিতে এই ধরনের গান গেয়ে আদিবাসীরা এক অপরকে পানি বর্ষন করে জলকেলী বা পানি উৎসবে মেতে উঠে।
এক একজন তরুণ একজন তরুণীর দেহে জল ছিটায়। আর ঐ তরুণীও ঐ তরুণের দেহে পাল্টা জল ছিটিয়ে তার প্রতি উত্তর দেয়। এভাবে তরুণ- তরুণীদের পানি ছিটানো দিয়ে খেলার মাধ্যমে পানি খেলা উৎসব উদযাপিত হয়। আগামী ১৬ এপ্রিল সন্ধ্যায় বিহারে সমবেত প্রার্থনার মধ্য দিয়ে সমাপ্তি ঘটবে এই উৎসবের।