পাহাড়ের শান্ত পরিস্থিতি আবারো অশান্ত হয়ে উঠেছে। পার্বত্য শান্তিচুক্তির ২ দশক পূর্তি অনুষ্ঠানের দুই দিন পর আবারো রক্তাক্ত হয়ে উঠেছে পার্বত্য রাঙামাটি । সাধারণ মানুষের মনে দেখা দিয়েছে চরম উদ্বেগ উৎকন্ঠা।
৫ জুন গেল মঙ্গলবার একই দিনে রাঙামাটির নানিয়ারচর ও জুরাছড়ি উপজেলায় দুই জনকে গুলিতে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। আর বিলাইছড়িতে ও রাঙামাটি সদরে অপর ২ জনকে কুপিয়ে আহত করা হয়। নিহতরা হলেন, নানিয়ারচরের সাবেক মেম্বার অনাদি রঞ্জন চাকমা, জুরাছড়ি আওয়ামীলীগ নেতা অরবিন্দ চাকমা। আর কুপিয়ে আহত করা হয় বিলাইছড়ির আওয়ামীলীগ নেতা রাসেল মারমাও রাঙামাটির জেলা মহিলা আ:লীগের সহ-সভপতি ঝর্ণা খীসাকে।। বুধবার নিহতদের ময়না তদন্ত শেষে আত্মীয় স্বজনকে মরদেহ হস্তান্তর করা হয়। আহত রাসেল চাকমাকে রাঙামাটি জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। ঘটনার জন্য দায়ী করা হচ্ছে স্থানীয় রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে।
এ প্রসঙ্গে রাঙাামাটি জেলা বিএনপির সভাপতি মো: শাহ আলম বলেন, আঞ্চলিক রাজনৈতিক দলের সাথে আওয়ামীলীগের সংঘাত দীর্ঘদিনের। এরই ধারাবাহিকতায় এগুলো হচ্ছে বলে আমার মনে হচ্ছে। এগুলোর নিরসন হওয়া প্রয়োজন। এ ধরনের ভাতৃঘাতী সংঘাত আমরা কোন অবস্থাতেই কামনা করিনা। মো: শাহ আলম বলেন, এ সমস্যা নিরসন করার একমাত্র দায়িত্ব সরকারের। এদিকে, পার্বত্য চট্টগ্রাম সমধিকার আন্দোলনের সভাপতি মো: জাহাঙ্গীর আলম মুন্না বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামের পাহাড়ী-বাঙালী সকলেই এখন অবৈধ অস্ত্রের কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছে। যতক্ষন পর্যন্ত এ পাহাড় থেকে অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার হবে না ততক্ষন পর্যন্ত এখানকার মানুষ শান্তিতে বসবাস করতে পারবেনা।
রাঙামাটির সংরক্ষিত মহিলা সংসদ সদস্য ফিরোজা বেগম চিনু বলেন,পাহাড়ের শান্তিচুক্তি বাস্তবায়নের লক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বদ্ধ পরিকর এবং তারই ধারাবাহিকতায় চুক্তির একেকটি ধারা বাস্তবায়িত হচ্ছে এবং প্রক্রিয়াধীন। যেখানে সিংহভাগই বাস্তবায়িত হয়েছে। তিনি আরো বলেন, চুক্তি বাস্তবায়নে ধৈর্য ধরতে হবে। তিনি বলেন, সেদিন সন্তু বাবু ঢাকায় সংবাদ সম্মেলন করলেন এবং বিভিন্ন সেমিনারে উস্কানিমুলক বক্তব্য রেখেছেন। সন্তু বাবু বললেন চুক্তি বাস্তবায়ন না হলে অসহযোগ আন্দেলন চলবে এবং সেই সাথে পাহাড়ে আগুন জ্বলবে।
ফিরোজা বেগম চিনু বলেন, যিনি জেএসএস এর নেতৃত্বদানকারী এবং যিনি পাহাড়ের পাহাড়ী-বাঙালী সকলের অধিবাসী হয়ে চুক্তিতে স্বাক্ষর করেছেন। কিন্তু আমরা দেখছি তিনি এমন কিছু কথা বলছেন যা বাংলাদেশের সর্বাভৌমত্বকে হুমকি মনে হয়।এবং তিনি যেসব কথাগুলো বলেছেন এরপর থেকেই সেই কাজ গুলো শুরু হয়ে গেছে।
নারী সংসদ সদস্য ফিরোজা বেগম চিনু আরো বলেন, জুরাছড়িতে একজনকে ব্রাশ ফায়ার করে মেরে ফেলল, বিলাইছড়িতে রাসেল মারমাকে কুিপয়ে জখম করলো শেষ পর্যন্ত তারা খুবই হীন এবং জঘন্য ভাবে রাতের অন্ধকারে একজন মহিলার গায়ে আঘাত করে পঙ্গু করে দিয়েছে এ ধরনের ঘটনা আমাদেরকে কাছে খুবই দু:খজনক। তিনি বলেন, সারা বাংলাদেশে সন্ত্রাস এবং জঙ্গীবাদকে দমন করতে সরকার যেমন সক্রিয় আছে। তেমনি আমরা আশা করি পার্বত্যঞ্চল বাংলাদেশের বিচ্ছিন্ন কোন অংশ নয় কিংবা অন্য কোন রাষ্ট্র নয় পাহাড়ের সন্ত্রাস নির্মুলেও সরকার কাজ করে যাবে।
রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণে এ সব ঘটনা ঘটানো হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন সাবেক পার্বত্য প্রতিমন্ত্রী দীপংকর তালুকদার। এই প্রসঙ্গে সাবেক পার্বত্য প্রতিমন্ত্রী ও জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি দীপংকর তালুকদার বলেন, রাজনীতির নামে মানুষ হত্যা করা এবং সন্ত্রাসী কার্যক্রমে লিপ্ত হওয়া ও অবৈধ অস্ত্র নিয়ে অবাধে চলাফেরা করাকে আমরা রাজনীতি মনে করিনা। তিনি বলেন, বিলাইছড়ি আওয়ামীলীগের সহ-সভাপতি রাসেল মারমাকে বেদম মারলো এবং জুরাইছড়ির আ:লীগ নেতা অরবিন্দু চাকমাকে গুলি করে হত্যা করলো। এগুলো অবৈধ অস্ত্র দিয়ে করা হয়েছে।
দীপংকর তালুকদার বলেন, কারা করেছে? যারা বিগত দিনে চিৎকার করে বলেছে আওয়ামীলীগকে তারা রাঙামাটি থেকে নিশ্চিহ্ন করবে এবং ধ্বংস করবে। এবং তারাই এ কাজটি করছে।
এদিকে,পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির সহ-তথ্য প্রচার সম্পাদক সজীব চাকমা বলেন, জনসংহতি সমিতিকে দায়ী করে অথবা দোষারোপ করে এবং জনসংহতি সমিতির কর্মীদের হয়রানী বা গ্রেফতার করে এ সমস্যার সমাধান হবে না। তিনি বলেন, আজকে পার্বত্য চট্টগ্রামে যে জটিলতা এবং দীর্ঘদিনের যে অবস্থা বিভিন্নভাবে। আমরা বলে আসছি আজকে পার্বত্য চট্টগ্রামের নানা কারনে নাজুক অবস্থায় উপনীত হয়েছে। পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়ন হওয়া নাহওয়া নিয়ে এ ধরনের জটিলতা বিরাজ করছে।তিনি বলেন, সরকারের উচিৎ পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়নে আন্তরিকভাবে এগিয়ে আসা।
সজীব চাকমা আরো বলেন, জনসংহতি সমিতির এত লোকের বিরুদ্ধে ভিক্তিহীনভাবে মামলা দেয়া এবং গ্রেফতার করা এতে করে যথাযথ সমাধান বেরেিয় আসতে পারেনা। তিনি বলেন, এ ধরনের ঘটনা খুবই দু:খজনক।
রাঙামাটি পুলিশ সুপার সাঈদ তারিকুল হাসান বলেন, হত্যাকান্ড দুটিকে টার্গেট কিলিং বলে ধারণা করা হচ্ছে। তবে এ হত্যাকান্ডের ঘটনাগুলো আইন শৃংখলা পরিস্থিতিকে বিঘ্ন করবেনা বলে জানান পুলিশ সুপার।