দেশের বিভিন্ন স্থানে সরকারি কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে কর্তব্য অবহেলা ও দুর্নীতি অনিয়মসহ নানা অভিযোগের অন্ত নেই জনগণের। তবে সৎ, দায়িত্বশীল ও জনবান্ধন কর্মকর্তার সংখ্যাও আজকাল কম নয়। তারা লোভ লালসার উর্ধ্বে থেকে নিজ প্রতিষ্ঠানকে গড়ে তোলেন সাধারণ জনগণ ও বিপদগ্রস্ত মানুষের আশ্রয়স্থল হিসেবে। তেমনি একজন উপজেলা নির্বাহী অফিসার মুহাম্মদ আরাফাতুল আলম। নিজের কর্মস্থলকে একটি সমৃদ্ধ উপজেলা হিসেবে গড়তে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন তিনি। গত বছরের ২৫ জুলাই পার্বত্য জেলা খাগড়াছড়ির দীঘিনালা উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) পদে যোগদান করেন।
যোগদানের এক বছর পার না হতেই তাঁর সততা ও কর্মদক্ষতায় পাল্টে গেছে উপজেলা পরিষদের প্রশাসনিক কার্যক্রম ও সার্বিক চিত্র। সরকারি-বেসরকারি প্রতিটি দপ্তরের কর্মকাণ্ডে ফিরে এসেছে গতিশীলতা ও স্বচ্ছতা। কমেছে জনভোগান্তি আর বৃদ্ধি পেয়েছে জনসেবার মান। দীঘিনালা উপজেলাকে একটি উন্নত আধুনিক জনপদ হিসেবে গড়ে তুলতে নিরালসভাবে কাজ করছেন তিনি। উপজেলার নাম দিয়েছেন “সমৃদ্ধ দীঘিনালা”। জনবান্ধব এই উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কর্মকাণ্ডে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন উপজেলার সাধারণ জনগণ, জনপ্রতিনিধি, গণমাধ্যমকর্মী ও সুশীল সমাজের বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ।
এছাড়াও সর্ব ক্ষেত্রেই রয়েছে এই উপজেলা নির্বাহী অফিসারের পদচারণা। দাপ্তরিক কাজের বাইরে সকাল-বিকাল ছুটে বেড়ান মাঠ-ঘাট। কথা বলেন উপজেলার সাধারণ মানুষের সাথে। শোনেন তাদের দুঃখ-কষ্টের কথা। খোঁজখবর নেন সমাজের অবহেলিত গরিব-দুঃখী মানুষের। পরিদর্শন করেন সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ও উপজেলার নানা উন্নয়ন প্রকল্প। কোথাও কোনো সমস্যা দেখলে নেন প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা। তা ছাড়া গণমাধ্যম, ফেসবুক, মুঠোফোন ও ই-মেইলের মাধ্যমে পাওয়া বিভিন্ন অভিযোগ দ্রুত সমাধান ও তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নিয়ে সব শ্রেণি-পেশার মানুষের প্রশংসা কুড়িয়েছেন তিনি।
উপজেলার মধ্য বোয়ালখালী গ্রামের দরিদ্র নারী আঁখি আক্তার স্মৃতি বলেন, সম্প্রতি আমাদের পরিবারের অভাব অনটনের কথা ইউএনও স্যারকে জানালে তিনি আমাকে একটি সেলাই মেশিনের ব্যবস্থা করে দেন। এ সেলাই মেশিন দিয়ে কাজ করে আমি সচ্ছলতার মুখ দেখেছি।
একই গ্রামের স্বামী পরিত্যক্তা নারী জান্নাতুল ফেরদৌস বলেন, অনেক বছর হইছে আমার স্বামী আমাগো ছাইড়া গেছে। আমি মাইনশের জমিতে কাজ করে একমাত্র পুলাটারে পড়ালেহা করাই। আমার মাথা গোঁজার ঠাঁইও ছিলনা। ইউএনও স্যার খোঁজ নিয়ে আমারে প্রধানমন্ত্রীর উপহারের একটা ঘর দিছে। আল্লায় তার ভালা করুক।
অনাথ আশ্রম আবাসিক উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সিরাজুল ইসলাম বলেন, ইউএনও স্যার শিক্ষানুরাগী ও বইপ্রেমি একজন কর্মকর্তা। তিনি কয়েকদিন আগে আমাদের বিদ্যালয় পরিদর্শনে এসে শিক্ষার্থীদের মাদক ও বাল্যবিয়ে বিরোধী শপথ পাঠ করান। এছাড়া প্রায় সময় শিক্ষার্থীদের বই উপহার দিতে দেখা যায়।
স্থানীয় গণমাধ্যমকর্মী এম ইদ্রিছ আলী বলেন, দীঘিনালায় একটি এলাকার নাম দাঙ্গাবাজার। সম্প্রতি উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ আয়োজিত এক কৃষক সমাবেশে স্থানীয় সাংসদ কুজন্দ্র লাল ত্রিপুরা এমপিকে দাঙ্গাবাজার নামটি বাদ দিয়ে এলাকাটির নাম মৈত্রীবাজার রাখতে প্রস্তাব করেন ইউএনও আরাফাতুল আলম। এমন চিন্তা আমাদের মাথায়ও ছিলোনা। উনার প্রতিটি কাজই আমাদের প্রেরণা জোগায়।
দীঘিনালা উপজেলা পরিষদের মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান সীমা দেওয়ান বলেন, আমাদের ইউএনও মহোদয় খুবই ভালো মনের অধিকারী। উনার সততা ও কর্মদক্ষতা উনাকে বহুদূর এগিয়ে নিবে। চলতি ধাপে প্রধানমন্ত্রীর আশ্রয়ন প্রকল্পের সাড়ে তিনশো ঘর তিনি আমাদের সাথে নিয়ে সরেজমিনে তদন্ত করে করে প্রকৃত অসহায়, দুস্থ ও গৃহহীনদের মাঝে বুঝিয়ে দিয়েছেন।
দীঘিনালা উপজেলা নির্বাহী অফিসার মুহাম্মদ আরাফাতুল আলম বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঘোষিত ভিশন ২০৪১ বাস্তবায়ন ও এ উপজেলাকে “সমৃদ্ধ দীঘিনালা” হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্য নিয়ে কাজ করছি। এটি আমার নৈতিক দায়িত্ব। স্থানীয় সাংসদ, জেলা প্রশাসক, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, সাংবাদিক এবং সমাজের বিশিষ্টজনেরা সব সময় আমার কাজে সহযোগিতা করছেন। তারপরও সমৃদ্ধ দীঘিনালা গড়তে আমি সকলের সহযোগিতা চাই।
তিনি আরো বলেন, সরকারি কর্মকর্তারা জনগণের সেবক। নিজে কি পেলাম সেটা বড় কথা নয়, দেশ ও জাতীর জন্য কি করতে পারলাম সেটাই বড় কথা। নিজের ওপর অর্পিত দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি সব সময় চেষ্টা করি মানুষের দুঃখ-কষ্ট লাঘবের। আমি হয়তো একদিন এই উপজেলায় থাকব না, কিন্তু থেকে যাবে আমার কর্ম। যদি ভালো কাজ করে যেতে পারি, তাহলে দীঘিনালাবাসী আমাকে আজীবন মনে রাখবে।