সম্প্রীতির আলোর উচ্ছ্বাসে পাহাড়ের নববর্ষ উদযাপন
নতুন শাসন ব্যবস্থার সূচনার পর এটাই প্রথম বাংলা নববর্ষ। রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের আবহে পাহাড়ের বুকে কিছুটা উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা ছিলোই। পাহাড়ি-বাঙালি সম্পর্কের ইতিহাস, নিরাপত্তা ও সম্প্রীতির ভিন্নতর বাস্তবতায় এ উৎসবকে ঘিরে প্রশাসন যেমন ছিল সতর্ক, তেমনি স্থানীয় জনগণও ছিল আশা-আশঙ্কার দোলাচলে।
তবু সব জল্পনা-সংশয় ছাপিয়ে এবারের নববর্ষ পরিণত হয়েছে এক অনন্য সম্প্রীতির প্রতীক হয়ে। রাঙামাটিসহ তিন পার্বত্য জেলার মানুষ একসঙ্গে হাত মিলিয়েছে শান্তি, সৌহার্দ্য আর সম্মিলনের এই উৎসবে। ধর্ম-বর্ণ, জাতি-গোত্র পেরিয়ে পাহাড় যেন নিজেই বলেছে—’আমরা এক’।
রাঙামাটি জেলা প্রশাসনের আয়োজনে নববর্ষের প্রথম প্রহরে শুরু হয় বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা, যা শহর জুড়ে এক উৎসবমুখর আবহ সৃষ্টি করে। শোভাযাত্রায় অংশ নেন জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হাবিব উল্লাহ মারুফসহ সরকারি-বেসরকারি কর্মকর্তা, রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব, বিভিন্ন সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিরা, শিক্ষার্থীরা ও সাধারণ মানুষ। প্রত্যেকে ছিলেন নিজ নিজ ঐতিহ্যবাহী পোশাকে, হাতে মুখোশ, আর ছন্দে ছন্দে বাজছিল পাহাড়ি-বাঙালি বাদ্যযন্ত্র।
নববর্ষকে ঘিরে সম্প্রীতি রক্ষায় জেলা প্রশাসনের উদ্যোগ ছিল লক্ষণীয়—প্রত্যেক সম্প্রদায়ের সঙ্গে সরাসরি বৈঠক, সমন্বিত সাংস্কৃতিক পরিকল্পনা ও সর্বস্তরের মানুষের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার বিশেষ পদক্ষেপ নেওয়া হয়।

শুধু রাঙামাটি নয়, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবানে একইভাবে পালিত হয়েছে নববর্ষ। পাহাড়ি সংস্কৃতির ফুল ভাসানো, জলকেলি, ঐতিহ্যবাহী নৃত্য, লোকসংগীত, হস্তশিল্প ও খাবারের মেলায় উঠে এসেছে ঐ অঞ্চলের প্রাণবন্ত সংস্কৃতি। ৭দিন ব্যাপি মেলা করেছে রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদ। আঞ্চলিক পরিষদের আয়োজনে হয়েছে র্যালী, গ্রামীন ও বলি খেলা।
সমতলের অনেক মানুষও এসেছেন এই বৈচিত্র্যপূর্ণ উৎসবের সাক্ষী হতে, যা পাহাড়-সমতলের মেলবন্ধনকেই আরও শক্তিশালী করেছে।
স্থানীয়দের কণ্ঠে ধ্বনিত হয়েছে একই বার্তা—”এ উৎসবে কে পাহাড়ি, কে বাঙালি—তা আলাদা করে বোঝার উপায় ছিল না। আমরা সবাই এক, এটাই চাই শান্তির জন্য।”
এ বছরের নববর্ষ তাই নিছক উৎসব নয়, বরং ছিল সহাবস্থানের শপথ, শান্তির প্রার্থনা এবং একটি নতুন যুগে প্রবেশের প্রতিশ্রুতি। অনেকে বলছেন, এই সম্প্রীতির নজির ভবিষ্যতের পাহাড়কে হয়ে উঠতে পারে আরও সম্ভাবনাময়, আরও একতাবদ্ধ। এই নববর্ষে পাহাড় দেখিয়েছে—যেখানে মিলে যায় মন, সেখানেই শান্তির পথ।