সরকারি ভ্যাকসিন দেওয়ার পর মারা গেছে ২২টি গবাদিপশু, অসুস্থ অর্ধশতাধিক
তদন্ত দাবি রামগড়ের খামারিদের
সরকারি ভ্যাকসিন দেওয়ার পর খাগড়াছড়ির রামগড় উপজেলার একটি গ্রামে ২২ টি গরু ও ছাগলের (১৮ ছাগল ও ৪ গরু) মৃত্যু হয়েছে। আরও অন্তত ৫০টি গবাদিপশু অসুস্থ হয়ে পড়েছে বলে জানিয়েছেন ক্ষতিগ্রস্ত খামারিরা। তারা বলছেন, উপজেলা প্রাণিসম্পদ বিভাগের ভ্রাম্যমাণ টিমের মাধ্যমে ভ্যাকসিন দেওয়ার পরপরই পশুগুলোর মধ্যে অসুস্থতা দেখা দেয়।
এই ঘটনায় আতঙ্কে রয়েছেন রামগড় ইউনিয়নের লামকুপাড়া গ্রামের খামারি ও গৃহস্থরা। ভ্যাকসিনে ত্রুটি রয়েছে দাবি করে তারা ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও ক্ষতিপূরণ চেয়ে উপজেলা প্রশাসনের কাছে অভিযোগ জানানোর প্রস্তুতি নিচ্ছেন।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, ১৫ এপ্রিল সকালে গ্রামে মাইকিং করে জানানো হয়, সরকারি ভ্যাকসিন দেওয়া হবে। উপজেলা প্রাণিসম্পদ কার্যালয়ের তত্ত্বাবধানে পশু চিকিৎসক ডা. মো. রুবায়েতুল ইসলাম ও তার দুই সহকারী জামাল উদ্দিন ও রমজান ভ্যাকসিন প্রয়োগ করেন।
ভ্যাকসিন নেওয়ার ২৪ থেকে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যেই পশুগুলোর শরীরে জ্বর, চামড়ায় গুটি ও ক্ষতের মতো উপসর্গ দেখা দেয়। এরপর একে একে মারা যেতে থাকে গরু ও ছাগল।
লামকুপাড়ার খামারি লুৎফর রহমান বলেন, “ভ্যাকসিন দেওয়ার দুই দিন পর আমার তিনটি ছাগল ও দুটি গরু মারা যায়। আরও অন্তত ১৫টি ছাগল অসুস্থ হয়ে পড়েছে।”

গৃহবধূ সায়েরা খাতুন বলেন, “আমার তিনটি ছাগল মারা গেছে, আরও তিনটি খুব দুর্বল। স্বামী অসুস্থ, গরু-ছাগল পালনের ওপরই সংসার চলে। এখন কিছুই করার নেই।”
এমন ভোগান্তির কথা জানিয়ে অভিযোগ তুলেছেন ওবায়দুল হক, আবুল কাশেম, শান্তনু দেবী ও চিকনি ত্রিপুরাসহ অন্তত এক ডজন পশুপালক। তাদের অভিযোগ, ভ্যাকসিন ত্রুটিপূর্ণ ছিল, কিংবা একই সিরিজের ভ্যাকসিন একযোগে প্রয়োগ করায় পশুগুলোর এমন পরিণতি হয়েছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ও ভেটেনারি সার্জন ডা. রুবায়েতুল ইসলাম বলেন, “সরকারি অনুমোদিত এবং পরীক্ষিত ভ্যাকসিনই দেওয়া হয়েছে। এসব ভ্যাকসিন সারাদেশেই ব্যবহার হচ্ছে। স্থানীয় সংক্রমণ থেকেও পশুগুলোর মৃত্যু হতে পারে।”
এদিকে বুধবার রামগড় ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শন করেন জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মইনুল ইসলাম। তিনি বলেন, “অধিকতর তদন্তে চট্টগ্রামে থেকে পশুরোগ বিশেষজ্ঞ বৃহস্পতিবার রামগড় এসে মৃতপশুর নমুনা সংগ্রহ করে ল্যাবে পাঠাবে। রিপোর্ট পেলে বিস্তারিত জানা যাবে।” খামারিদের কাছ থেকে একটি অভিযোগ পত্র পাওয়ার বিষয়ও তিনি উল্লেখ করেন।
রামগড় থানার উপপরিদর্শক (এসআই) নুর উদ্দিন বলেন, “ঘটনার খবর পেয়ে আমরা এলাকা পরিদর্শন করেছি, ক্ষতিগ্রস্তদের শান্ত থাকতে বলা হয়েছে। তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
রামগড় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মমতা আফরিন বলেন, “বিষয়টি আমরা জেনেছি। লিখিত অভিযোগ পেলে দ্রুত তদন্ত করে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে।”